জুমবাংলা ডেস্ক : পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রামনগর-তাঁতেরকাঠি মুন্সীবাড়ি জামে মসজিদের ইমামের পেছনে নামাজ পড়া নাজায়েজ বলে ফতোয়া দিয়েছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম মহসীন।
ইমামের অপরাধ বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীর সমর্থনে আয়োজিত একটি উঠান বৈঠকে নাজিরপুর ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। ওই ইমামের নাম মাওলানা ইউনুস মুন্সী।
শুধু তাই নয়, ওই ইমাম চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে নামাজ পড়ালে তাকে জিন দিয়ে মারধর করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওই জামে মসজিদে গত দুই দিন ধরে মুসল্লিরা তারাবির নামাজ আদায় করতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রামনগর-তাঁতেরকাঠি মুন্সীবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম হিসাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ তারাবি পড়াতেন মাওলানা ইউনুস মুন্সী। মসজিদটি তাদের বাড়ির সামনে অবস্থিত। আর ওই মসজিদের সভাপতি হলেন নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মহসীন।
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত একটি উঠান বৈঠক থেকে ওই মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউনুস মুন্সী ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মহসীনের কর্মকাণ্ড নিয়ে বক্তব্য দেন। তার এ বক্তব্যে অসন্তুষ্ট হন চেয়ারম্যান।
ইমাম ইউনুস মুন্সীর ছেলে আমিন অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান এসএম মহসীন তাকে ডেকে তার বাবাকে ওই মসজিদে ইমামতি না করার নির্দেশ দেন। তার বাবা সত্য কথা বলেন না, তাই তার পেছনে নামাজ পড়া হবে নাজায়েজ। এরপরও তিনি নামাজ পড়াতে মসজিদে গেলে তাকে জিন দিয়ে মারধর করা হবে বলে ভয়ভীতিও দেখান। এই ভয়ে তার বাবা ইমামতি করতে না গিয়ে ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন ফজলুল হককে ইমামতির জন্য বলেন।
কিন্তু চেয়ারম্যান মহসীন মসজিদের মুয়াজ্জিনের পরিবর্তে ইমামতি করতে স্থানীয় মারকাজুল উলুম মাদ্রাসার দুইজন হাফেজকে ওই মসজিদে পাঠান। এ নিয়ে মুসল্লিদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে শুক্র ও শনিবার দুই দিন তারাবির নামাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে ওই মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউনুস বলেন, আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীর আয়োজিত একটি উঠান বৈঠক থেকে নাজিরপুর ইউনিয়নে চুরি ডাকাতিসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিলে তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হুমকি দেন আমি যাতে ইমামতি না করি। আমার পেছনে নামাজ পড়া নাজায়েজ বলেও তিনি ফতোয়া দেন। আমি ইমামতি করলে জিন দিয়ে মারধর করাবেন বলে হুমকি দেন। আমাকে মসজিদ থেকে সরানোই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য; কিন্তু মুসুল্লিরা আমাকে চাচ্ছেন। এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে দুই দিন ওই মসজিদে তারাবি নামাজ বন্ধ ছিল।
নাজিরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফারুক বলেন, ঘটনা সত্য। ওই মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউনুস মুন্সী বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম মহসীনের ব্যর্থতা প্রকাশ করায় তিনি ইমাম সাহেবের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ কারণে তার পিছনে নামাজ পড়া জায়েজ হবে না বলে ফতোয়া দিয়ে ইমামতির জন্য দুইজন হাফেজকে পাঠান।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান এসএম মহসীন বলেন, আমি ওই মসজিদের সভাপতি। আমি ইমাম সাহেবকে তারাবি নামাজ পড়ানোর জন্য নিষেধ করিনি। বরং তিনি নিজে থেকেই নামাজ পড়াবেন না বলে জানিয়েছেন। সভাপতি হিসেবে এক মুসুল্লি এ বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি তারাবি নামাজ পড়ানোর জন্য দুইজন হাফেজকে পাঠিয়েছি; কিন্তু মুসল্লিরা ওই হাফেজের পেছনে নামাজ পড়েননি। ইমাম সাহেবকে কোনো ভয়ভীতি দেখাইনি বা তার বিপক্ষে কোনো ফতোয়াও দেইনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।