জুমবাংলা ডেস্ক : সাভারে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে গত ১৮ জুলাই যেভাবে বর্বরতম উপায়ে হত্যা করা হয় তা দেখে যে কোনো পাষণ্ডেরও হৃদয়ে আঘাত করবে। তবুও মন গলেনি পুলিশের, নেয়নি মামলা।
শেখ হাসিনার পতনের পর তাকে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেই সময়ে সাভারে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের আসামি করে গত ২৫ আগস্ট ঢাকার আদালতে মামলা করেন ইয়ামিনের মামা আবদুল্লাহ আল মুনকাদির রোকন। আদালত এজাহার গ্রহণে নির্দেশ দেন সাভার থানাকে। বাদীপক্ষে মামলা আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান মারুফ ও সাকিল আহমাদ। এর আট দিন পর পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করেছে।
সোমবার (২ আগস্ট) সকালে নিহত ইয়ামিনের মামা আব্দুল্লাহ আল কাবির বাদী হয়ে এই মামলা করেন। এতে আসামি করা হয়েছে গুলির নির্দেশদাতা তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক আইজিপিকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান।
শেখ হাসিনাসহ মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহহিল কাফি, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার সাবেক ওসি শাহ জামান, উপপরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ, আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হারুন অর রশিদ ও এসআই সাব্বির আহাম্মেদ।
মামলায় আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিব, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর, তার মামা কুটি মোল্লা, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের কথিত ভাগ্নে, রাজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন ওরফে ট্যাপা জাকির, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সহসভাপতি নিজামউদ্দিন টিপু, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম রুবেল, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল গনি, তার ছেলে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, কামরুল হাসান শাহীন, মেহেদী হাসান তুষার, আওয়ামী লীগ নেতা ও বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সুজন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীবের একান্ত সহকারী মো. রাজু, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাসুদ চৌধুরী, সাভার পৌর সভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরে আলম নিউটন, ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা, ব্যাংক কলোনি ছাপড়া মসজিদ এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রাজীব মাহমুদ, তার ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহাম্মেদ রুবেল, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম মণ্ডল, ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজান ওরফে জি এস মিজান, সাভার পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ লিটন, নাছির উদ্দিন লিটন, তার ভাগ্নে সাভার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াকিন ইয়াছার, সাভার পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান অভি, যুবলীগ নেতা ফয়সাল নাইম তুর্যসহ অজ্ঞাতপরিচয় অনেকে।
এমআইএসটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন নিহত শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই দুপুরে সাভারে প্রথম শহীদ হন তিনি।
সে সময় ধারণ করা মর্মস্পর্শী ভিডিওতে দেখা যায়, আহত অবস্থায় সাঁজোয়া যানের ওপর থেকে তাকে সড়কে ফেলে দেয় পোশাক পরিহিত এক পুলিশ সদস্য। তখনও জোরে শ্বাস নিচ্ছেন ইয়ামিন। তার একটি পা লেগে ছিল সাঁজোয়া যানের চাকার সঙ্গে। এতে বিরক্ত পুলিশ সদস্য গাড়ি থেকে নেমে আহত ইয়ামিনকে পিচঢালা সড়কের ওপর টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে দেয়। তখনও নড়ছিল এই তরুণের শরীর। কিন্তু পুলিশ তাকে হাসপাতালে না নিয়ে প্রায় চার ফুট উঁচু বিভাজকের ওপর দিয়ে বস্তার মতো সড়কের সার্ভিস লেনে ফেলে দেয়। তখনও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করছিল পুলিশ সদস্যরা।
সাভারের ব্যাংকটাউন মহল্লায় থাকে ইয়ামিনের পরিবার। তার বাবা মো. মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমার বাসায় পুলিশ এসেছিল কয়েকজন। তারা বলে, তারা সহযোগিতা করতে চায়। কীভাবে এজাহার করতে হবে বলল। ওরা একটা এজাহারের খসড়া দিতে চেয়েছিল। তাতে দেখা গেল, সব (আসামি) রাজনৈতিক নেতার নাম। পুলিশের কারও নাম নাই।’
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা জামায়াতের
মামলার বাদী রোকন বলেন, ‘পুলিশ যে খসড়া দিয়েছিল, তা আমাদের পছন্দ হয়নি।’ কারণ, তারা খসড়া এজাহার থেকে তাদের অফিসারের নাম বাদ দিয়েছিল।’
ইয়ামিনের বুকের বাঁ পাশ ও গলায় অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন ছিল। ভিডিওতে ইয়ামিনকে বর্বরতম উপায়ে হত্যার দৃশ্য সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।