জুমবাংলা ডেস্ক : ওপেক ত্যাগের পর ইরানের ব্লকে এখন আরো শক্তিশালী কাতার, এতে শঙ্কায় রয়েছে সৌদি আরব। মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সৌদি আরবের ওপর যেসব বিপর্যয় নেমে এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম কাতারের ওপেক ত্যাগ। যুবরাজ প্রতিবেশী দেশটিকে যেভাবে কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন, তাতে উপসাগরীয় এ ছোট তবে জ্বালানির বাজারে প্রভাবশালী দেশ গত বছরের ডিসেম্বরে ওপেকের সঙ্গে ৫৭ বছরের সম্পর্কের ইতি টানতে বাধ্য হয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশলে যুবরাজের বেপরোয়া ভাব কাতারকে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষুদ্র মার্কিন বলয় থেকে বেরিয়ে ইরান ও তার মিত্রদের প্রসারিত বাহুডোরে আবদ্ধ হতে উৎসাহিত করেছে।
এর ফলে তথাকথিত ‘গ্যাস ওপেক’ গঠনে রাশিয়ার উচ্চাভিলাষ আরো জোর পেয়েছে। মূলত উপসাগরীয় প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানিকারক দেশ রাশিয়া, ইরান ও কাতারকে কেন্দ্র করেই সংগঠনটি পরিচালিত হবে। সেই সঙ্গে দুই দেশের গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে ইরান ও কাতার।
কাতার ও ইরানের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উৎস উপসাগরে ৯ হাজার ৭০০ কিলোমিটারজুড়ে একটি যৌথ উন্মুক্ত অববাহিকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটারে রয়েছে ইরানের সাউথ পার্স ক্ষেত্র। আর বাকি ৬ হাজার কিলোমিটারে কাতারের নর্থ ফিল্ড গ্যাসক্ষেত্র। এ এলাকাটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ গ্যাসভাণ্ডার, ৫১ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস এবং ৭ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার কঠিন গ্যাস রয়েছে এখানে।
কাতারের পূর্ব প্রান্ত এবং ইরানের পশ্চিম প্রান্তের উপকূলে দুই দেশের গ্যাসক্ষেত্রের সীমানা মিলে গেছে। গ্যাসের ভাণ্ডার হিসেবে উল্লেখযোগ্য কিছু না হলেও এ সীমানার অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গত বছর কাতার ওপেক থেকে বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত সাউথ পার্স এলাকা সম্প্রসারণে ব্যাপক তত্পর ছিল ইরান। অন্যদিকে কাতারের নর্থ ফিল্ড উন্নয়ন ছিল স্থগিত। ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) বাস্তবায়নের এক বছরের মাথায় ইরান সাউথ পার্স উন্নয়নে নতুন বিদেশী মিত্র পায়। ফলে সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের গতি বাড়ে। ওই সময় কাতার সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে স্থিতাবস্থা তুলে নেয়। কিন্তু দক্ষিণ পার্সে ইরানের অব্যাহত উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কারণে বিশেষ করে সীমানার ওভারলেপ এরিয়ায় নর্থ ফিল্ডের উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছিল না কাতার।
যুক্তরাষ্ট্র জেসিপিওএ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার এবং ইরানের ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপের পর গত বছরের জুন থেকে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় এবং কাতারের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক শুরু করেন। পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে উভয় পক্ষ অবশেষে নভেম্বরের শেষ নাগাদ একটি সমঝোতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়।
এ আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ইরানের এক কর্মকর্তা অয়েল প্রাইস ডটকমকে জানান, এ আলোচনায় দুটি বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে। এক. সীমান্ত এলাকায় ইরান বেপরোয়া উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কৌশল থেকে সরে আসবে। দুই. রাশিয়া, ইরান ও কাতারে উৎপাদিত গ্যাসের বাজার, মূল্য, বিপণন কৌশল নির্ধারণে ভবিষ্যৎ সহযোগিতা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বসবে কাতার।
তিনি আরো বলেন, একই সময় প্রধান তেল ও সন্নিকটস্থ গ্যাসক্ষেত্রগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার বিনিময়ে রাশিয়া ইরানকে বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি এর প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবের নেতৃত্বে কাতারের ওপর কোনো আঘাত এলে রাশিয়া সব ধরনের সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।