সম্প্রতি স্মার্টফোনে স্টারলিংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। বর্তমানে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্যাটেলাইট পাঠানোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে তারহীন ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের পাশাপাশি ফোন কল, টেক্সট মেসেজিং ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবা চালু করতে যাচ্ছে স্পেসএক্স। ইতিমধ্যে এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত ২৫ অক্টোবর, সোমবার কক্ষপথে নতুন আরও ১২টি ‘ডিরেক্ট টু সেল’ নামে বিশেষ স্যাটেলাইট পাঠায় স্পেসএক্স। ফলে কক্ষপথে এমন স্যাটেলাইটের মোট সংখ্যা এখন ৩২০টি। স্টারলিংকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সরাসরি ফোন কলের সুবিধা দিতে তারা প্রস্তুত। এ জন্যই গ্রাহক পর্যায়ে সেবা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারিকেন কবলিত অঞ্চলে বিনামূল্যে টেক্সট মেসেজিং সেবা দেওয়ার জন্য উপগ্রহগুলো সক্রিয় করেছেন প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে প্রযুক্তিটি নিয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন স্পেসএক্স। তাতে সফলভাবেই তারা সবকিছু শেষ করেছে।
স্টারলিংকের বেতার তরঙ্গ পৃথিবীতে থাকা বিদ্যমান যোগাযোগ তরঙ্গের মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল অনেক প্রযুক্তিবিদদের মনে। তবে সে ধারণা ঠিক নয় বলে জানিয়েছে ইলন মাস্কের এ প্রতিষ্ঠান। দুই মাসের বেশি সময় তাঁদের করা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনো তরঙ্গ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগ বা প্রমাণ মেলেনি।
স্টারলিংকের এ সুবিধা পেতে বাড়তি কোনো যন্ত্র বা অ্যাপ্লিকেশনের প্রয়োজন হবে না। সরাসরি ফোন থেকেই স্যাটেলাইটে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে এ সেবা নেওয়া যাবে। ফলে দুর্গম অঞ্চলে, যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, সেখান থেকে স্মার্টফোন দিয়ে স্টারলিংকের ডিরেক্ট টু সেল স্যাটেলাইটে যুক্ত হওয়া যাবে। করা যাবে ফোন কল, টেক্সট ও ইন্টারনেট ব্যবহার।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টি-মোবাইলের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে সম্প্রতি স্টারলিংকের ডিরেক্ট টু সেল প্রজেক্টের বিষয়ে কথা বলেছে। টি-মোবাইলের প্রধান নির্বাহী এ বছরের শেষদিকে বা আগামী বছর শুরুর দিকে স্টারলিংকের এ সুবিধার জন্য একটি বেটা প্রোগ্রাম চালাবে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে পৃথিবীর চারপাশে প্রায় ৭ হাজারের বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে স্টারলিংকের। এর মধ্য ৩২০টি ছাড়া বাকি সব ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে ‘ডিরেক্ট টু সেল’ স্যাটেলাইটের সংখ্যা আরও ব্যাপকভাবে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
স্টারলিংকের নেভিগেশন সেন্সর প্রতিটি উপগ্রহের অবস্থান ও উচ্চতা বিবেচনা করে ব্রডব্যান্ড সেবা দেয়। অপটিক্যাল স্পেস লেজার ব্যবহার করে স্টারলিংক। প্রতিটি স্টারলিংক স্যাটেলাইটে তিনটি স্পেস লেজার (অপটিক্যাল ইন্টারস্যাটেলাইট লিংক বা আইএসএলএস) রয়েছে। এই লেজারের মাধ্যমে ২০০ গিগাবিট পর্যন্ত ডেটা পাঠানো যায়। স্টারলিংক গ্রাহকদের বেশি ব্যান্ডউইডথের সংযোগ দেওয়ার জন্য স্যাটেলাইটে পাঁচটি উন্নত কু-ব্যান্ড ফেজড অ্যারে অ্যান্টেনা ও তিনটি ডুয়াল-ব্যান্ড (কা-ব্যান্ড ও ই-ব্যান্ড) অ্যান্টেনা ব্যবহার করে।
বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম এখনও চালু হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রদর্শনীর জন্য কিছু রিটেইল প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের কানেক্টর ডিভাইস এনেছেন। বাংলাদেশ বর্তমানে স্টারলিংকের সেবার আওতায় আছে। তবে সরকারিভাবে দেশে স্টারলিংকের সুবিধা নেওয়ার বৈধতা এখনো নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।