জুমবাংলা ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ইসরাইল ও আমেরিকার সাথে আরববিশ্বের বিরোধ ও দ্বন্দ্বের চিরস্থায়ী অবসানের ক্ষেত্রে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার চিরস্থায়ী একটা সমাধান হওয়া সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা বিশ্বের রাজনীতি সচেতন সব মানুষই বোধহয় কমবেশি জানেন। বিশেষ করে ‘ইসরাইল বনাম আরববিশ্ব’ মনোভাব বা দ্বন্দ্ব আরবি ভাষার ও আরব ভূখন্ডের গন্ডি পেরিয়ে সময়ের সাথে ক্রমে যেভাবে ‘ইসরাইল বনাম মুসলিম বিশ্ব’ মনোভাব বা দ্বন্দ্ব হিসেবে রূপ ধারণ করেছে, তা একজন বাংলাদেশি মুসলমান হিসেবে সেই রাজনৈতিক প্রাথমিক জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই সবার কাছে বেশ কৌতূহলপূর্ণ একটা বিষয়। আজ আপনাদের জন্য রয়েছে তৃতীয় পর্ব।
১৯৩৬ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসীদের বিপুল উপস্থিতি ও ইহুদিদের প্রতি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত বিক্ষোভ প্রদর্শন করা থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সাথে সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ফিলিস্তিনি আরবরা যা ইতিহাসে ব্যর্থ ‘১৯৩৬-১৯৩৯ আরব বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। অবশ্য ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি আরবদের পরিকল্পিত বিদ্রোহ সফল না হলেও শেষ পর্যন্ত ‘হোয়াইট পেপার ১৯৩৯’ প্রণয়ন করে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদিদের উপস্থিতি ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা করে।
এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানিতে ইহুদিদেরকে নিশ্চিহ্ন করার ‘নাযি হলোকস্ট’ সংঘটিত হলে অসংখ্য ইহুদি পালিয়ে ফিলিস্তিনে এসে আশ্রয় নিলে বেআইনি ইহুদি অভিবাসীর সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় যা উক্ত এলাকায় বসবাসকারী ইহুদি-মুসলিম সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটায় এবং দুই জাতির ভেতর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার জন্ম দেয়। এ সময় দুই জাতির মধ্যে দফায় দফায় ‘রায়ট (জাতিগত দাঙ্গা) সংঘটিত হয়।
ব্রিটিশ সরকার আরবদের পক্ষে হোয়াইট পেপার ১৯৩৯ প্রণয়ন করার ক্ষুব্ধ ইহুদিরা এ পর্যায়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। ফলে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিলতার দিকে ধাবিত হলে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদি ও মুসলমানদের মাঝে কোনো প্রকার কূটনৈতিক শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। তখন নবগঠিত জাতিসংঘের হাতে ব্রিটিশ সরকার দায়িত্ব অর্পণ করে ফিলিস্তিনের ইহুদি-মুসলিম সমস্যার একটা শন্তিপূর্ণ সামাধান করে দেওয়ার জন্য।
জাতিসংঘ ১১ সদস্যের একটা নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে এবং তাদের মাসাধিক কাল গবেষণালব্ধ পরামর্শ অনুযায়ী ১৯৪৭ সালে ইহুদি অধ্যুষিত ‘ইসরাইল’ ও মুসলিম অধ্যুষিত ‘ফিলিস্তিন’ নামের দুটো পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব করা হয়। তবে মুসলিম ও ইহুদি উভয় ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ও পুণ্যভূমি হিসেবে বিবেচিত জেরুজালেমকে জাতিসংঘের নিজস্ব ক্ষমতার আওতায় রাখার প্রস্তাব করা হয়। তবে মুসলিম ও ইহুদি উভয় ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ও পুণ্যভূমি হিসেবে বিবেচিত জেরুজালেমকে জাতিসংঘের নিজস্ব ক্ষমতার আওতায় রাখার প্রস্তাব করা হয় উত্থাপিত ওই বিলে।
১৯৪৭ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে ৩৩ বনাম ১৩ ভোট (১০টা দেশের মুখপাত্রের অনুপস্থিতে) ‘রেজ্যুলেশন ১৮১-এর মাধ্যমে বিলটি পাস হয়। নবগঠিত আরবলীগ তথা আরব দেশগুলো বিলের বিপক্ষে ভোট দেয়। এমনকি, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিভাজনকে বেআইনি বলে দাবি করে আরবলীগ এবং গোটা ফিলিস্তিনকে আরব মুসলিমদের একক শাসনাধীনে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানায় তারা।
উল্লেখ্য, পূর্ব আরব সাগর থেকে পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর এবং উত্তরে ভূমধ্যসাগর থেকে দক্ষিণে হর্ন অব আফ্রিকা’ ও ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত, সুবিশাল আরব ভূখন্ডের একক ঐতিহ্য ভাষা ও কৃষ্টি বিনষ্টের আশঙ্কায় আরবলীগ কর্তৃক ইসরাইল প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার পেছনে প্রধান কারণ বা চালিকাশক্তি ছিল মূলত আরব জাতীয়তাবাদ ধর্ম নয়। কেননা ব্রিটিশ বা ফরাসী ঔপনিবেশিক শাষক থেকে সম্প্রতি মুক্ত হওয়া ও প্রস্তাবিত ইসরায়েলের সম্ভাব্য প্রতিবেশী প্রতিবেশী এসব আরব রাষ্ট্রগুলোর অনেকের শাসন ক্ষমতায় সে সময় আসীন ছিল সেক্যুলারপন্থিরা (ধর্ম নিরপেক্ষরা)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।