জুমবাংলা ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ইসরাইল ও আমেরিকার সাথে আরববিশ্বের বিরোধ ও দ্বন্দ্বের চিরস্থায়ী অবসানের ক্ষেত্রে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার চিরস্থায়ী একটা সমাধান হওয়া সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা বিশ্বের রাজনীতি সচেতন সব মানুষই বোধহয় কমবেশি জানেন। বিশেষ করে ‘ইসরাইল বনাম আরববিশ্ব’ মনোভাব বা দ্বন্দ্ব আরবি ভাষার ও আরব ভূখন্ডের গন্ডি পেরিয়ে সময়ের সাথে ক্রমে যেভাবে ‘ইসরাইল বনাম মুসলিম বিশ্ব’ মনোভাব বা দ্বন্দ্ব হিসেবে রূপ ধারণ করেছে, তা একজন বাংলাদেশি মুসলমান হিসেবে সেই রাজনৈতিক প্রাথমিক জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই সবার কাছে বেশ কৌতূহলপূর্ণ একটা বিষয়। আজ আপনাদের জন্য রয়েছে চতুর্থ পর্ব।
ইহুদিরা জাতিসংঘ প্রদত্ত প্রস্তাব ও ম্যাপ মেনে নিলেও ফিলিস্তিনি মুসলিমরা স্বভাবতই তা প্রত্যাখ্যান করে। কেননা ৩২ শতাংশ ইহুদি জনগণকে (যাদের অধিকাংশই অভিবাসী) যেখানে ফিলিস্তিনি ভূমির ৫৬ শতাংশ প্রদান করা হয়, সেখানে ৬৮ শতাংশ মূল আদিবাসী মুসলিম আরবদেরকে প্রদান করা হয় মাত্র ৪৪ শতাংশ ভূমি। অবশ্য প্রস্তাবিত ম্যাপ অনুযায়ী ইসরায়েলের রাষ্ট্র সীমানার ভেতর বসবাসকারী প্রায় দশ লক্ষ অধিবাসীর ভেতর ইহুদি ও মুসলিমদরে সংখ্যা ছিল প্রায় সমান সমান।
পক্ষান্তরে, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র সীমানার ভেতর বসবাসকারী প্রায় আট লক্ষ অধিবাসীর ভেতর ইহুদিদের সংখ্যা ছিল মাত্র দশ হাজার। আর জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত জেরুজালেমে ইহুদি ও মুসলিমদের প্রস্তাবিত সংখ্যা ছিল সমান সমান চার লক্ষ করে। জাতিসংঘ কমিটির দাবি অনুযায়ী ইসরাইলকে অধিক পরিমাণে ভূমি দেয়ার পেছনে যুক্তি ছিল উক্ত এলাকায় ভবিষ্যত ইহুদি অভিবাসীদের সঙ্কুলানের ব্যবস্থা রাখা।
এছাড়া মানুষ বসবাসের জন্য প্রতিকূল, দক্ষিণের নেগেভ মরুভূমি ইসরাইলকে দেয়া হয় এই উদ্দেশ্য যেন ভবিষ্যতে আগত ইহুদি অভিবাসীরা সেখানে নিজেদের প্রয়োজনে বসতি গড়ে নিতে পারে। জাতিসংঘের দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন বিভাজনের প্রস্তাব অনুমোদন ইহুদি শিবির যতখানি আনন্দ বয়ে আনে, ঠিক ততখানিই অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ বয়ে আনে আরব শিবিরে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও দফায় সংঘর্ষ বাধে ফিলিস্তিনের ইহুদি ও মুসলিমদের ভেতর এবং প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটে।
১৯৪৮ সালের মে মাসে ব্রিটিশ সরকারের ফিলিস্তিন ম্যান্ডেট-এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগের দিন ইসরাইল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই আমেনিকা ও রেজা শাহ পাহলভির ইরান ইসরাইলকে স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই আমেরিকা ও রেজা শাহ পাহলাভির ইরান ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দান করে। যা অনুসরণ করে পরবর্তী দিনগুলোতে অন্যান্য অনেক অমুসলিম দেশ ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দান করে। তবে ইসরাইল স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরদিনই ঈজিপ্ট লেবানন সিরিয়া জর্ডান ও ইরাক ইসরায়েলে সামরিক হামলা চালায়।
ইউরোপীয় উপনিবেশ থেকে সম্প্রতি মুক্ত হওয়া এসব আরবদেশ সামরিকভাবে সে সময় তেমন একটা শক্তিশালী না হওয়ায় ইসরাইলকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়। ১৯৪৯ সালের জুলাইতে সিরিয়ার সাথে আর্মিস্টিস? (যুদ্ধবিরতি) চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইসরাইল-আরব যুদ্ধের অবসান ঘটে। তবে ইসরাইল তার সার্বভৌমত্বকে ধরে রাখতে সমর্থ হয় এবং ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে নিজেদের রাষ্ট্র সীমানা ১৯৪৭-এর জাতিসংঘের অনুমোদিত বিভাজন ম্যাপের চেয়ে ন্যূনতম আরও ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়।
আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন ইসরাইল নিজস্ব ভূভাগ (জাতিসংঘের ম্যাপ অনুযায়ী) ও দখলকৃত এলাকা থেকে মুসলিম অধিবাসীদের ঢালাওভাবে বিতাড়ন করে এবং নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মুসলমানদের মাঝে ত্রাসের সৃষ্টি করে। নিজেদের আবাসভূমি থেকে উৎখাত হওয়া ও প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনি আরবরা ইসরায়েলি সীমানার বাইরে ও আশপাশের আরবদেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করে। অবশ্য এর বিপরীত চিত্রটাও এখানে উল্লেখ করা দরকার।
আরবদেশগুলো থেকে অন্তত আড়াই থেকে তিন লক্ষ ইহুদি ইসরায়েলে মাইগ্রেট করে ১৯৪৮ সালের ইসরাইল আরব যুদ্ধের পর।
এছাড়া ১৯৬৭ সালের অন্যতম বৃহৎ ইসরাইল-আরব যুদ্ধের পর আশপাশের প্রায় ১০ টা আরবদেশ থেকে অন্তত সাড়ে আট লক্ষ ইহুদি ইসরায়েলে মাইগ্রেট করে। এর ভেতর ধর্মীয় ও আদর্শগত কারণে স্বেচ্ছায় যত সংখ্যক ইহুদি ইসরায়েলে মাইগ্রেট করেছে, নিজেদের বাসস্থান থেকে বিতাড়িত কিংবা অত্যাচারিত হয়ে বাধ্য হয়ে ইসরায়েলে মাইগ্রেট করেছে এমন ইহুদির সংখ্যা সম্ভবত তার চেয়ে অনেক বেশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।