জুমবাংলা ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ইসরাইল ও আমেরিকার সাথে আরববিশ্বের বিরোধ ও দ্বন্দ্বের চিরস্থায়ী অবসানের ক্ষেত্রে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার চিরস্থায়ী একটা সমাধান হওয়া সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা বিশ্বের রাজনীতি সচেতন সব মানুষই বোধহয় কমবেশি জানেন। বিশেষ করে ‘ইসরাইল বনাম আরববিশ্ব’ মনোভাব বা দ্বন্দ্ব আরবি ভাষার ও আরব ভূখন্ডের গন্ডি পেরিয়ে সময়ের সাথে ক্রমে যেভাবে ‘ইসরাইল বনাম মুসলিম বিশ্ব’ মনোভাব বা দ্বন্দ্ব হিসেবে রূপ ধারণ করেছে, তা একজন বাংলাদেশি মুসলমান হিসেবে সেই রাজনৈতিক প্রাথমিক জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই সবার কাছে বেশ কৌতূহলপূর্ণ একটা বিষয়। আজ আপনাদের জন্য রয়েছে সপ্তম পর্ব।
দেশটির সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কারণে প্রচুর পরিমাণে আর্থিক সহায়তা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল প্রতি বছর ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা পায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ভেটোর অর্ধেকই দেয়া হয়েছে ইসরাইলের বিপক্ষের সব ধরনের রেজ্যুলেশন আটকে দিতে।
ওবামা প্রশাসনের ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ভিতরে ভিতরে পুড়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে যান নেতানিয়াহু।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের ২৩ মে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেরুজালেম সফর করেন তিনি। এরপর ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা দিয়ে রীতিমতো আগুনে ঘি ঢেলে দেন।
এতে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব আবারও চরমে ওঠে। শুরু হয় সংঘর্ষ এবং সহিংতা। ট্রাম্পের ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত এই সংঘর্ষে প্রায় ৩ শতাধিক প্রাণ হানি হয়েছে। গত ৫ মার্চ হোয়াইট হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন নেতানিয়াহু। সেখানে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের বিষয়ে মত দেন তিনি।
ইসরায়েল প্রসঙ্গে ওবামা ও ট্রাম্পের এই সুক্ষ্ম কিন্তু স্পষ্ট পার্থক্যই যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলপন্থীদের সঙ্গে দলীয় রাজনীতি বিশেষ করে রিপাবলিকানদের দূরত্বকে নির্দেশ করছিলো। যদি ডেমোক্রাটরা স্বভাবগত ভাবে ইসরাইলের সমালোচনা করতো, তাহলে ইসরাইলও তাদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সতর্ক আচরণ করতো।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক শক্তিশালী হয় স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। ভূ-রাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব টিকিয়ে রাখতে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার বন্ধু ইরান, সিরিয়া ও লিবিয়ার মতো রাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে আধিপত্য বিস্তারের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল রাষ্ট্রের মতো একটি বন্ধু পাওয়াটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।
এই সম্পর্কের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি লবি ও ধর্মীয় বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক দেলোয়ার আরও বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে ইসরায়েল খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। মিশর, জর্ডান, সিরিয়া এবং ভূমধ্যসাগরে প্রভাব বিস্তার করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এসব বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতেই যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সম্পর্ক বর্তমান রূপ পেয়েছে।’
ব্যক্তি ট্রাম্পের মনোস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক দর্শনের নেতিবাচক প্রভাব বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য সংকটের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাম্পের সাইকোলজিক্যাল ডিসওর্ডার ও জ্ঞানশূন্যতার কারণে স্পর্শকাতর বিভিন্ন ইস্যুগুলো চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সে এসে আরও ভয়ানকভাবে সমস্যাগুলোকে উসকে দিয়েছে। যেমনটা আমরা দেখেছি ন্যাটো, চীনের ক্ষেত্রে। ইসরায়েল পলিসির যে নাটকীয়তা আমরা লক্ষ্য করছি সেখানে বিশেষ ব্যক্তিত্বের প্রভাব রয়েছে।’
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও জাতিসংঘের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার উপর জোড় দেন এই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘ ট্রাম্পের ব্যক্তি সিদ্ধান্ত মার্কিন ফরেন পলিসিকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তাদের রিকগনিশন প্রয়োজন। আমেরিকার আধিপত্যবাদী নীতি থেকে সরে আসতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে এখন মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে। জাতিসংঘেও শক্তি ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে। এই ভারসাম্য যখন আরও শক্তিশালী হবে তখন বর্তমান অবস্থা থেকে শান্তিপূর্ণ অবস্থার যাওয়ার প্রক্রিয়ায় গুণগত পরিবর্তন আসবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।