Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ
    লাইফস্টাইল ডেস্ক
    লাইফস্টাইল

    ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ

    লাইফস্টাইল ডেস্কMd EliasJuly 3, 202517 Mins Read
    Advertisement

    বাতাসে কান পেতে রেখেছিলাম। পাশের ফ্ল্যাট থেকে ভেসে আসছিল আর্তচিৎকার, কাঁদুনি আর ভাঙা কাঁসির আওয়াজ। পরদিন সকালে দেখা গেল, নতুন দম্পতি – মাত্র ছয় মাস আগে যাদের বিয়েতে উলুধ্বনি উঠেছিল – আলাদা হয়ে গেছেন। কারণ? অবিশ্বাস, অবহেলা, আর সম্পর্কের ভিত শক্ত করার আগেই নিজেদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া। এই করুণ দৃশ্য শুধু আমার প্রতিবেশীর গল্প নয়; বাংলাদেশে দ্রুত বাড়তে থাকা বিবাহবিচ্ছেদের হার, পারিবারিক সহিংসতার খবর, আর হতাশ প্রেমের ট্র্যাজেডি আমাদের চারপাশের রোজনামচায় ঢুকে গেছে। কেন ভেঙে পড়ছে সম্পর্ক? কেন এত অশান্তি? হয়তো উত্তর খুঁজতে হবে ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ নামের সেই আলোকিত সড়কে, যেখানে শুধু আবেগ নয়, বরং ঐশী নির্দেশনা আর মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে স্থায়ী শান্তির ভিত। ইসলাম কখনো সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করেনি; বরং তাকে দিয়েছে সুস্পষ্ট, সুন্দর, আর শান্তিপূর্ণ রূপরেখা – যার কেন্দ্রে আছে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পারস্পরিক সম্মান।

    ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ

    ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ – মৌলিক নীতিমালা ও দার্শনিক ভিত্তি

    ইসলাম শুধু একটি ধর্ম নয়; এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। আর এই বিধানের কেন্দ্রে রয়েছে মানুষের মধ্যকার সম্পর্ককে সুস্থ, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ বলতে বুঝায়, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর প্রদর্শিত নীতিমালার আলোকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সকল স্তরের সম্পর্ককে গড়ে তোলা ও পরিচালনা করা। এই পথের ভিত্তি রচিত হয়েছে কয়েকটি মৌলিক স্তম্ভের উপর:

    • তাওহিদের স্বীকৃতি (আল্লাহর একত্ববাদ): ইসলামিক সম্পর্কের প্রথম ও প্রধান ভিত্তি হলো এই উপলব্ধি যে সবকিছুর স্রষ্টা, মালিক ও নিয়ন্ত্রক একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। এই বিশ্বাস সম্পর্ককে ইবাদতের মর্যাদা দেয়। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, পিতা-পুত্রের দায়িত্ববোধ, প্রতিবেশীর হক – সবই পালিত হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। এটি স্বার্থপরতা, অহংকার ও শোষণমূলক মনোভাব দূর করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, “তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসা ছাড়া ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন এক জিনিসের কথা বলব না, যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।” (সহীহ মুসলিম)। এখানে ভালোবাসার ভিত্তিই হলো ঈমানের বন্ধন।

    • রিসালাতের অনুসরণ (নবীর আদর্শ): শান্তির পথে চলার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শই হলো সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা। তাঁর আচরণ, কথাবার্তা, সিদ্ধান্ত ও শিক্ষা সম্পর্ক গঠন ও রক্ষায় পাথেয়। কুরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত ২১)। রাসূল (সা.) কীভাবে স্ত্রীদের সাথে স্নেহশীল আচরণ করতেন, সন্তানদের সাথে কতটা কোমল ছিলেন, সাহাবীদের সাথে কেমন ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন, প্রতিবেশীদের অধিকার কতটা গুরুত্ব দিতেন – এর প্রতিটি দিকই ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবনচরিত অধ্যায়ন ও অনুসরণ ছাড়া এই পথে চলা অসম্ভব।

    • আখিরাতে বিশ্বাস (পরকালীন জবাবদিহিতা): ইসলামিক দৃষ্টিকোণে প্রতিটি সম্পর্ক এবং এর মধ্যকার প্রতিটি আচরণ, প্রতিটি কথাবার্তা পরকালের হিসাব-নিকাশের সাথে জড়িত। এই বিশ্বাস মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে। স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি, স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি, পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি, সন্তান পিতা-মাতার প্রতি, বন্ধু বন্ধুর প্রতি – প্রত্যেকেরই জবাবদিহি করতে হবে মহান আল্লাহর কাছে। এই চেতনা মানুষকে অন্যায়, অবিচার, বিশ্বাসঘাতকতা ও ক্ষতিকর আচরণ থেকে বিরত রাখে। কুরআন স্পষ্ট বলে দিয়েছে, “নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তঃকরণ – এ সবকিছু সম্পর্কেই জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৩৬)। এই আয়াত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

    • হক্ব ও আদবের সমন্বয় (অধিকার ও শিষ্টাচার): ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হলো প্রত্যেক সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সুস্পষ্ট অধিকার (হক্ব) ও কর্তব্যের স্বীকৃতি এবং সেই অধিকার আদায় ও কর্তব্য পালনে প্রাসঙ্গিক শিষ্টাচার (আদব) মেনে চলা। এটি ভারসাম্য তৈরি করে। যেমন, স্ত্রীর উপর স্বামীর হক্ব আছে, আবার স্বামীর উপর স্ত্রীর হক্ব আছে (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ২২৮)। পিতা-মাতার সন্তানের উপর অবিশ্বাস্য অধিকার রয়েছে (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ২৩-২৪), আবার সন্তানের জন্যও পিতা-মাতার নির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, সমাজের সদস্য – সবারই একে অপরের উপর হক্ব রয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। এই হক্ব আদায় করতে গিয়েই প্রয়োজন আদবের – সম্মানজনক ভাষা, ধৈর্য, ক্ষমা, ন্যায়পরায়ণতা ও সদয় আচরণ। শান্তির পথ এই হক্ব ও আদবের সুষম মিশ্রণেই নির্মিত।

    এই মৌলিক নীতিগুলো ছাড়া, ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ অসম্পূর্ণ। এগুলোই গড়ে তোলে সেই শক্ত ভিত্তি, যার উপর দাঁড়িয়ে সম্পর্ক শুধু টিকে থাকে না, ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়, পরিবার ও সমাজে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করে। ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় বসবাসরত ড. আয়েশা সিদ্দিকা, একজন ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক, তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, যেসব দম্পতি সচেতনভাবে এই মৌলিক নীতিগুলো (বিশেষ করে আখিরাতে বিশ্বাস ও রিসালাতের অনুসরণ) তাদের দাম্পত্য জীবনে প্রয়োগ করেন, তাদের মধ্যে সন্তুষ্টির হার এবং সম্পর্কের স্থায়িত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এটি শুধু তত্ত্ব নয়; এটি বাস্তব জীবনে শান্তির পথের কার্যকারিতার প্রমাণ।

    বিবাহপূর্ব সম্পর্ক: ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ও শান্তিপূর্ণ পন্থা

    আধুনিক সমাজে ‘ডেটিং কালচার’ একটি স্বাভাবিক প্রথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও, ইসলাম এই ধরনের অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত মেলামেশাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ইসলাম বিবাহের আগে পাত্র-পাত্রীর পরিচয় বা পছন্দ-অপছন্দ জানার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। বরং, ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ এখানেও একটি সুস্পষ্ট, মার্জিত ও শালীন কাঠামো দিয়েছে, যার লক্ষ্য সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সঙ্গীর ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ও ধর্মীয় নিষ্ঠা যাচাই করা, পাশাপাশি হারাম কাজ (যেমন নির্জনে মেলামেশা, শারীরিক স্পর্শ) থেকে বেঁচে থাকা। এই পথের মূল উপাদানগুলো হলো:

    1. মাহরামের ভূমিকা ও শারঈ সীমানা: ইসলামে বিবাহপূর্ব আলোচনা বা দেখা-সাক্ষাৎ কখনোই একান্তে বা গোপনে হওয়ার অনুমতি নেই। শান্তির পথ হলো মাহরাম (যাদের সাথে বিবাহ হারাম, যেমন পিতা, ভাই, চাচা, মামা) এর উপস্থিতি ও তত্ত্বাবধানে এগিয়ে যাওয়া। মাহরাম শুধু শারীরিক সুরক্ষাই দেয় না, বরং জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে পাত্র-পাত্রীর পছন্দ যাচাইয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাদের দায়িত্ব হলো প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে, পরিবারের মূল্যবোধ ও ধর্মীয় চেতনার সাথে সঙ্গতি রেখে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোতে সাহায্য করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, “কোন নারীর সাথে তার মাহরাম ব্যতীত সাক্ষাৎ করা বৈধ নয়।” (সহীহ মুসলিম)। এই বিধান সম্ভাব্য অপব্যবহার, ভুল বোঝাবুঝি ও পাপাচার থেকে রক্ষা করে, যা প্রায়শই অবাধ মেলামেশার ফলাফল।

    2. উদ্দেশ্যের স্পষ্টতা ও সময়সীমা: বিবাহপূর্ব আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শুধুমাত্র বিবাহের সম্ভাবনা যাচাই করা। এটিকে দীর্ঘায়িত ‘রিলেশনশিপ’ বা শুধু বন্ধুত্বের নামে চলমান রাখা ইসলামে অনুমোদিত নয়। ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ এখানে স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধের উপর জোর দেয়। উভয় পক্ষের (এবং তাদের পরিবারের) উদ্দেশ্য যদি বিবাহ হয় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান ও যাচাই-বাছাই শেষে যদি বিবাহ না হয়, তাহলে উচিত সম্মানজনকভাবে পথ আলাদা করে নেওয়া। দীর্ঘ সময় ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলে থাকা বা ‘টেস্ট ড্রাইভ’ মনোভাব ইসলামিক নীতির পরিপন্থী এবং পরবর্তীতে হতাশা ও মানসিক আঘাতের কারণ হতে পারে।

    3. প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোচনা: মাহরামের উপস্থিতিতে পাত্র-পাত্রী ধর্মীয় বিশ্বাস ও আমল, জীবনদর্শন, ক্যারিয়ার লক্ষ্য, পরিবার পরিকল্পনা, পারিবারিক মূল্যবোধ, আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। এই আলোচনা হওয়া উচিত ভদ্র ও সম্মানজনক ভাষায়, অতীত সম্পর্ক বা অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনা ও আদর্শগত সঙ্গতির উপর ফোকাস রেখে। এটি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংঘাত কমাতে সাহায্য করে। ইসলামিক স্কলারগণ প্রায়ই বলেছেন, “বিবাহ শুধু আবেগ নয়, এটি একটি চুক্তি। আর যেকোনো চুক্তির আগে শর্তাবলী স্পষ্টভাবে জানা জরুরি।”

    4. দৃষ্টি ও আচরণের সংযম: কুরআনে মুমিন নারী-পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টি নত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে (সূরা আন-নূর, আয়াত ৩০-৩১)। বিবাহপূর্ব সাক্ষাতের সময়েও এই নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপ্রয়োজনীয় দৃষ্টি, প্রলোভন সৃষ্টিকারী পোশাক, অশালীন বা ফ্লার্টিং ধরনের কথাবার্তা শান্তির পথে অন্তরায়। লক্ষ্য হওয়া উচিত সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রেখে পরস্পরের চরিত্র ও বিশ্বাসকে মূল্যায়ন করা, শারীরিক আকর্ষণ নয়। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, “চোখের জিনাও জিনা।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। এই হাদীস দৃষ্টির সংযমের গুরুত্ব কতটা তীব্রভাবে তুলে ধরে।

    5. ইস্তিখারা ও দোয়া: ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণের একটি সুন্দর দিক হলো যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে বিবাহের মতো ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য ও নির্দেশনা চাওয়া। সম্ভাব্য পাত্র/পাত্রী সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা ও তথ্য পাওয়ার পর, বিশেষ ইস্তিখারা সালাত আদায় করা এবং সৎ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এটি ব্যক্তিকে আবেগ ও স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আল্লাহর পছন্দের দিকে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। প্রার্থনা করে বলা যায়, “হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞানে যদি এই বিবাহ আমার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণকর হয়, তবে তা আমার জন্য নির্ধারণ করুন এবং সহজ করে দিন। আর যদি আমার জন্য অকল্যাণকর হয়, তবে তা আমার থেকে দূরে রাখুন এবং আমার জন্য কল্যাণ যেখানেই আছে সেটাই নির্ধারণ করুন।”

    বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে শহুরে এলাকায়, এই ইসলামিক নীতিমালা মেনে বিবাহপূর্ব পরিচয়ের প্রক্রিয়া ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অনেক তরুণ-তরুণী ও তাদের পরিবার এখন উপলব্ধি করছেন যে এই শান্তির পথ শুধু হারাম থেকে বাঁচায় না, বরং ভিত্তিহীন প্রত্যাশা কমিয়ে দিয়ে এমন এক সাথী নির্বাচনে সাহায্য করে যিনি শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য্য নয়, বরং চরিত্র, আদর্শ ও দীনের ক্ষেত্রেও সঙ্গতিপূর্ণ। এটি বিবাহোত্তর জীবনে অপ্রত্যাশিত সংঘাতের ঝুঁকি কমায় এবং দাম্পত্য সম্পর্ককে অধিকতর মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে। এটিই হলো প্রকৃত ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথের বাস্তব প্রতিফলন।

    দাম্পত্য সম্পর্ক: ইসলামে শান্তি ও মর্যাদার ভিত্তি

    বিবাহ ইসলামে একটি পবিত্র বন্ধন (মীসাকান গালীজা – সুদৃঢ় অংকলন, সূরা আন-নিসা, আয়াত ২১)। এটি শুধু শারীরিক চাহিদা পূরণের মাধ্যম নয়; বরং পারস্পরিক শান্তি, প্রশান্তি, ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অনন্য পথ। ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ দাম্পত্য জীবনে পরিপূর্ণতা লাভের জন্য যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও নীতিমালা দিয়েছে, তা অনুসরণ করলেই কেবল এই পবিত্র বন্ধন প্রকৃত অর্থে ‘জান্নাতের একটি অংশে’ পরিণত হতে পারে। আসুন দেখি এই পথের মূল স্তম্ভগুলো:

    • পরিপূর্ণ দায়িত্ব ও অধিকারের ভারসাম্য: ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই নির্দিষ্ট দায়িত্ব (ওয়াজিবাত) ও অধিকার (হুকুক) প্রদান করেছে। এই দায়িত্ব ও অধিকার পরস্পর সম্পূরক এবং ভারসাম্যপূর্ণ। স্বামীর উপর স্ত্রীর ভরণপোষণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ন্যায়সঙ্গত ও সম্মানজনক আচরণ করা ফরজ। কুরআনে বলা হয়েছে, “স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৯)। অন্যদিকে, স্ত্রীর উপর স্বামীর ঘর-সংসার দেখাশোনা, তার বৈধ নির্দেশনা মান্য করা (মা’রুফে), তার সম্পদ ও সম্মানের হিফাজত করা এবং নিজের সতীত্ব রক্ষা করা ফরজ। রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)। শান্তির পথ হলো এই দায়িত্ব-অধিকারের সুষম চর্চা; একজনের অধিকার অন্যজনের কর্তব্য। যখন উভয়েই নিজ নিজ দায়িত্ব সচেতনভাবে পালন করে এবং অন্যজনের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়, তখনই তৈরি হয় পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও শান্তির পরিবেশ। বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে সমাজে গবেষণায় দেখা গেছে, দাম্পত্য অশান্তির একটি বড় কারণ এই দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে অস্পষ্টতা বা একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি।

    • সুন্দর ও ন্যায়সঙ্গত আচরণ (মু’আশারা বিল মা’রুফ): স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আচরণ হওয়া উচিত সর্বোচ্চ শিষ্টাচার, কোমলতা, ধৈর্য ও ন্যায়পরায়ণতা ভিত্তিক। কুরআন স্বামীদের নির্দেশ দেয় স্ত্রীদের সাথে ‘মা’রুফ’ (ন্যায়সঙ্গত, সুন্দর, স্বীকৃত) পন্থায় জীবনযাপন করার (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৯)। রাসূল (সা.) ছিলেন এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি কখনো স্ত্রীদের সাথে রুক্ষ আচরণ করেননি, তাদের অনুভূতির মূল্য দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন গৃহকার্যে, মজা করেছেন, উপহার দিয়েছেন এবং সর্বদা তাদের সম্মান রেখেছেন। স্ত্রীদের জন্যও নির্দেশনা রয়েছে স্বামীর সাথে সদাচরণের। ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ এখানে শুধু আইনগত দিক নয়, বরং আন্তরিকতা ও মানবিকতার উপর জোর দেয়। রাগ নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমা প্রদর্শন, ধন্যবাদ জ্ঞাপন, ছোটখাটো উপহার, হাসিমুখে কথা বলা – এই ছোট ছোট বিষয়গুলোই দাম্পত্য জীবনে বড় ধরনের শান্তির পথ প্রশস্ত করে। চট্টগ্রামের এক যুবক রাশেদুল ইসলাম তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, “প্রথম দিকে ছোট বিষয় নিয়ে তর্ক বড় হতো। যখন নবীজি (সা.) এর আদর্শ মেনে স্ত্রীর ভুলত্রুটির প্রতি ধৈর্য ধারণ ও ক্ষমা করতে শিখলাম, আর ছোট ছোট ভালোবাসার প্রকাশ (লাইক ফুল বা তার পছন্দের খাবার আনা) শুরু করলাম, সম্পর্কটা একদম অন্যরকম হয়ে গেল।”

    • সুস্থ যোগাযোগ ও মতবিনিময় (শূরা): ইসলাম পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরামর্শ (শূরা)-কে উৎসাহিত করে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খোলামেলা, সৎ ও সম্মানজনক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যা দেখা দিলে তা চেপে না রেখে বা অভিমান না করে, বরং সুন্দরভাবে আলোচনা করে সমাধান খোঁজা উচিত। রাসূল (সা.) তাঁর স্ত্রীদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করতেন। শান্তির পথ হলো একগুঁয়েমি, রাগ বা নীরবতা দিয়ে সমস্যার সমাধান না খোঁজা; বরং ধৈর্য ধরে কথা বলা, একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করা এবং সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছানো। “তোমাদের কাজকর্ম পরস্পর পরামর্শক্রমে কর।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯) – এই আয়াত শুধু সামষ্টিক জীবনে নয়, পারিবারিক জীবনের জন্যও সমভাবে প্রযোজ্য।

    • সহনশীলতা, ক্ষমা ও আন্তরিক ভালোবাসা: দাম্পত্য জীবনে মতভেদ, ভুলত্রুটি বা রাগারাগি স্বাভাবিক। ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ এখানে ক্ষমা (আফও), সহনশীলতা (সবর) ও আন্তরিক ভালোবাসার (মাওয়াদ্দাহ ওয়া রহমাহ) উপর জোর দেয়। কুরআনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই মাওয়াদ্দাহ ওয়া রহমাহর (স্নেহ ও মমতা) কথা উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা আর-রূম, আয়াত ২১)। রাগ নিয়ন্ত্রণ করা, অহংকার ত্যাগ করা, ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করে দেয়া – এগুলোই সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ করে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “মুমিন পুরুষ কোন মুমিন নারীকে ঘৃণা করবে না; যদি তার এক স্বভাব অপছন্দ হয়, তবে অপর স্বভাব তাকে সন্তুষ্ট করে নেবে।” (সহীহ মুসলিম)। এটি শিক্ষা দেয় পূর্ণাঙ্গ মানুষ খোঁজার বদলে একে অপরের ভালো দিকগুলোকে মূল্য দিতে এবং ত্রুটিগুলোকে সহনশীলতার সাথে দেখতে।

    • আধ্যাত্মিক বন্ধন: দাম্পত্য সম্পর্ককে শুধু জাগতিক না ভেবে বরং ইবাদতের মাধ্যম হিসেবে দেখা ইসলামের একটি অনন্য দিক। একসাথে নামাজ আদায় করা, রোজা রাখা, কুরআন তিলাওয়াত করা, দান-সদকা করা – এসব কাজ দম্পতির মধ্যে শুধু আল্লাহর স্মরণই বাড়ায় না, বরং তাদের মধ্যে এক আধ্যাত্মিক বন্ধনও তৈরি করে। তারা একে অপরের জন্য দোয়া করে, ধর্মীয় বিষয়ে একে অপরকে সাহায্য করে। এই আধ্যাত্মিক সমন্বয় দাম্পত্য জীবনে গভীর শান্তি, তৃপ্তি ও স্থিতিশীলতা আনে। এটি তাদের পার্থিব ঝগড়া-বিবাদকেও একটি বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে সাহায্য করে।

    ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ অনুসরণ করে দাম্পত্য জীবন হয়ে ওঠে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহযোগিতা ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের এক মসৃণ পথ। এটি বিবাহকে শুধু টিকিয়ে রাখে না, বরং তাকে করে তোলে সুখ, শান্তি ও আল্লাহর নৈকট্যের উৎস। বাংলাদেশের মতো সমাজে, যেখানে পারিবারিক অস্থিরতা ক্রমবর্ধমান, এই পথই হতে পারে টেকসই সমাধান। ঢাকার মিরপুরে ‘ফ্যামিলি হারমনি প্রজেক্ট’ নামে একটি কমিউনিটি উদ্যোগ ইসলামিক দাম্পত্য নীতিমালার উপর ওয়ার্কশপ পরিচালনা করে আসছে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী দম্পতিদের ৮৫% এরও বেশি তাদের দাম্পত্য জীবনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও শান্তির অনুভূতি নিশ্চিত করেছেন, যা শান্তির পথের বাস্তব সফলতা।

    পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন রক্ষায় ইসলামিক নির্দেশনা: সম্প্রীতির জাল বুনন

    ইসলামিক জীবনবিধান শুধু দাম্পত্য সম্পর্কে সীমাবদ্ধ নয়; এটি ব্যক্তিকে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী এবং বৃহত্তর সমাজের সাথেও সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার নির্দেশনা দেয়। ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ এখানে ব্যক্তিকে দায়িত্বশীল সামাজিক সত্ত্বা হিসেবে গড়ে তোলে, যার মূল লক্ষ্য সমাজে শান্তি, ন্যায়বিচার ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা। এই বিস্তৃত পরিসরে সম্পর্ক নির্ধারণের মূলনীতিগুলো হলো:

    • পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সেবা (বিররুল ওয়ালিদাইন): ইসলামে পিতা-মাতার মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে একাধিক স্থানে নিজের ইবাদতের পরই পিতা-মাতার হক্ব আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন, বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদের সাথে সদাচরণের কথা বলেছেন (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৩-২৪)। ‘বিরর’ শুধু আর্থিক সহায়তা নয়; এটি অন্তর্ভুক্ত করে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কোমল ব্যবহার, তাদের চাহিদা ও অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীলতা এবং তাদের জন্য দোয়া করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, “পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।” (সুনানে তিরমিযী)। পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক ব্যক্তির নিজের জীবনে বরকত ও শান্তির পথ উন্মুক্ত করে। আধুনিক নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে, বিশেষ করে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য, নিয়মিত ফোন, সম্ভব হলে সফর, এবং তাদের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট থাকা এই হক্ব আদায়ের অংশ।

    • আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা (সিলাতুর রাহিম): রক্তের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া, তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি পেতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। সিলাতুর রাহিম শুধু নৈকট্যের আত্মীয়দের নয়; এমনকি যারা সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, তাদের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে (সূরা হামীম সাজদাহ, আয়াত ৩৪)। এই সম্পর্ক রক্ষা পারিবারিক ঐক্য, পারস্পরিক সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা জাল তৈরি করে, যা সমাজে শান্তির পথ সুগম করে। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে এখনও এই আত্মীয়তার বন্ধন শক্তিশালী, যা সামাজিক সংহতির একটি বড় স্তম্ভ।

    • প্রতিবেশীর হক্ব আদায়: ইসলাম প্রতিবেশীর অধিকারকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “জিবরীল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে এত বেশি অসিয়ত করতে থাকলেন যে, আমি মনে করলাম তিনি তাকে (প্রতিবেশীকে) উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবেন।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। প্রতিবেশীর হক্বের মধ্যে রয়েছে:
      • তাদের ক্ষতি না করা (শারীরিক, মানসিক বা সম্পদের)
      • তাদের বিপদে সাহায্য করা
      • তাদের অভাব-অভিযোগ শোনা
      • শুভেচ্ছা বিনিময় করা (সালাম দেওয়া)
      • তাদেরকে উপহার দেওয়া (এমনকি সামান্য কিছু হলেও)
      • তাদের সম্মান রক্ষা করা
      • তাদের অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া
      • তাদের মৃত্যুতে সমবেদনা জানানো
      • তাদের সচ্ছল হলে আনন্দ করা ও দরিদ্র হলে সাহায্য করা

    প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক গোটা পাড়া বা এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি সামাজিক শান্তির পথের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

    • সামাজিক দায়িত্ব: দান, সদকা ও ইনসাফ: ইসলাম ব্যক্তিকে তার সম্পদ ও ক্ষমতা দিয়ে সমাজের দুর্বল, অসহায়, এতিম, মিসকিন ও অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করতে উৎসাহিত করে। যাকাত ফরজ করা হয়েছে সম্পদের একটি অংশ গরিব-দুঃখীর মাঝে বণ্টনের জন্য। এর বাইরেও স্বতঃস্ফূর্ত দান (সদকাহ) অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। কুরআনে বারবার ইনসাফ (ন্যায়বিচার) প্রতিষ্ঠার আদেশ দেয়া হয়েছে, এমনকি শত্রুর ক্ষেত্রেও (সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত ৮)। সমাজে শোষণ, জুলুম, ঘুষ, চুরি, রাহাজানি ইত্যাদি হারাম করা হয়েছে। ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ এখানে ব্যক্তিকে শুধু নিজ পরিবার নয়, বরং গোটা সমাজের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হওয়ার শিক্ষা দেয়। এটি সামাজিক সম্প্রীতি, সহনশীলতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের ভিত্তি। বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (NGO) যেমন ব্র্যাক, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ প্রভৃতি যাকাত ও সদকার মাধ্যমে গরিব মানুষের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে, যা সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।

    • সকলের সাথে সদাচরণ ও কল্যাণ কামনা: ইসলাম শুধু মুসলিমদের সাথেই নয়, অমুসলিমদের সাথেও সুন্দর ও ন্যায়সঙ্গত আচরণের নির্দেশ দিয়েছে, যতক্ষণ না তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা শত্রুতা করে (সূরা আল-মুমতাহিনাহ, আয়াত ৮)। রাসূল (সা.) অমুসলিম প্রতিবেশীদের অধিকার রক্ষা করেছেন। সাধারণভাবে, ইসলামের শিক্ষা হলো সকল মানুষের সাথেই আদব, শিষ্টাচার ও ইনসাফের সাথে কথা বলা ও আচরণ করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, “সব সৃষ্টিই আল্লাহর পরিবার। সুতরাং আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই সর্বাধিক প্রিয় যে তাঁর পরিবারের (সৃষ্টির) সাথে সর্বোত্তম আচরণ করে।” (শু’আবুল ঈমান, বায়হাকী)। এই সর্বজনীন কল্যাণ কামনা ও সদাচরণই সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তোলে।

    ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে এই বিস্তৃত নির্দেশনাগুলো অনুসরণের মাধ্যমে গোটা সমাজকে একটি শান্তিপূর্ণ, সহানুভূতিশীল ও ন্যায়ভিত্তিক পরিবেশে রূপান্তরিত করে। এটি ব্যক্তিকে তার স্বার্থের গণ্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে নিয়োজিত হতে অনুপ্রাণিত করে, যা সমষ্টিগত শান্তির পথে অগ্রযাত্রার মূল চাবিকাঠি। বাংলাদেশের মত বহুত্ববাদী সমাজে এই নীতিমালার যথাযথ চর্চাই পারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তি নিশ্চিত করতে।

    জেনে রাখুন

    1. ইসলামিক ডেটিং কি জায়েজ?
      না, ইসলামে পাশ্চাত্য ধাঁচের অবাধ, নির্জনে বা মাহরাম ছাড়া ডেটিং সম্পূর্ণ হারাম। তবে বিবাহের ইচ্ছা নিয়ে মাহরামের উপস্থিতি ও তত্ত্বাবধানে সম্ভাব্য পাত্র/পাত্রীর সাথে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করা জায়েজ, যাকে প্রস্তাবনা বা ‘খোতবা’ পর্যায় বলা যায়। এটিই হল শান্তির পথ যা হারাম সম্পর্ক ও তার ক্ষতিকর ফলাফল থেকে রক্ষা করে। এর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র বিবাহের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান ও যাচাই করা, বিনোদন বা দীর্ঘমেয়াদী অনিশ্চিত সম্পর্ক নয়।

    2. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইসলামিক অধিকার কী কী?
      ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের উপর সুস্পষ্ট হক্ব রয়েছে। স্বামীর উপর স্ত্রীর হক্বের মধ্যে রয়েছে: বৈধ ভরণপোষণ (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা), ন্যায়সঙ্গত ও সম্মানজনক আচরণ, শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। স্ত্রীর উপর স্বামীর হক্বের মধ্যে রয়েছে: গৃহকার্য ও সন্তান লালন-পালনে সহযোগিতা (মা’রুফ অনুযায়ী), স্বামীর সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করা, নিজের সতীত্ব রক্ষা করা এবং তার বৈধ নির্দেশ মেনে চলা। ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ এই অধিকার ও কর্তব্যের ভারসাম্যপূর্ণ পালনের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয়।

    3. ইসলামে বিবাহবিচ্ছেদ কি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ?
      না, ইসলাম বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক) কে অত্যন্ত অপছন্দনীয় (মাকরূহ তাহরীমী) কিন্তু একেবারে নিষিদ্ধ করেনি। এটি বৈধ যখন দাম্পত্য জীবনে চরম অসঙ্গতি, অশান্তি, ক্ষতি বা ধর্মীয় সীমালঙ্ঘন দেখা দেয় এবং সকল প্রকার সমঝোতা ও সালিশের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে এটি সর্বশেষ সমাধান (আখেরী হালাত)। রাসূল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল কাজ হলো তালাক।” (সুনানে আবু দাউদ)। শান্তির পথ হলো সবর, ক্ষমা, আলোচনা ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে সম্পর্ক ঠিক করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

    4. প্রতিবেশীর ইসলামিক হক্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
      ইসলামে প্রতিবেশীর হক্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপক। রাসূল (সা.) একে ঈমানের সাথে সম্পর্কিত করেছেন। প্রতিবেশীর হক্বের মধ্যে পড়ে: তাদেরকে কষ্ট না দেওয়া (শারীরিক, মানসিক, শব্দদূষণ, দৃষ্টিদূষণ), তাদের সাহায্য করা (প্রয়োজনে), তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, সালাম দেওয়া, উপহার আদান-প্রদান করা, তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সম্মান রক্ষা করা। ভালো প্রতিবেশী শান্তির পথে চলার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ এবং পারিবারিক শান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

    5. পারিবারিক কলহ নিরসনে ইসলামের পরামর্শ কী?
      ইসলাম পারিবারিক কলহ নিরসনে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ধাপের কথা বলে:

      • সরাসরি আলোচনা: সংশ্লিষ্ট পক্ষদের নিজেদের মধ্যে সুন্দরভাবে (মা’রুফ) কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা।
      • পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যস্থতা: যদি সরাসরি আলোচনায় সমাধান না হয়, উভয় পক্ষের আত্মীয়দের মধ্যে থেকে এক বা একাধিক ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে সালিশি (মধ্যবর্তী) নিয়োগ করা (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৫)।
      • ধৈর্য ও ক্ষমা: ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কলহ না বাঁধানো, ধৈর্য ধারণ করা এবং ক্ষমাশীল মনোভাব পোষণ করা।
      • দোয়া ও আল্লাহর উপর ভরসা: আল্লাহর কাছে পারিবারিক শান্তি ও সমস্যা সমাধানের জন্য দোয়া করা।
        এই পদ্ধতিগত শান্তির পথ অনুসরণ করলে পারিবারিক বন্ধন রক্ষা পায় এবং অশান্তি দূর হয়।
    6. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করলে ইসলাম কী বলে?
      আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা (কাত’উর রাহিম) ইসলামে কবিরা গুনাহ। রাসূল (সা.) বলেছেন, “আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। এর মধ্যে পড়ে আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলা বন্ধ রাখা, তাদের খোঁজখবর না নেওয়া, তাদের সাহায্য না করা এবং তাদের সাথে রূঢ় আচরণ করা। ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ নির্দেশ দেয় আত্মীয়তা রক্ষা করতে, এমনকি যদি অন্য পক্ষ সম্পর্ক ছিন্নও করে তবুও তা পুনঃস্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে। এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক বরকত ও শান্তির চাবিকাঠি।

    ইসলামিকভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ: শান্তির পথ শুধু একটি তাত্ত্বিক ধারণা নয়; এটি একটি বাস্তবসম্মত, জীবনঘনিষ্ঠ ও পরিপূর্ণ গাইডলাইন, যা ব্যক্তিগত আবেগ থেকে শুরু করে পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক সম্প্রীতির প্রতিটি স্তরকে সুসংহত করে তোলে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে। এই পথ অনুসরণের অর্থ হল স্বার্থপরতা, অহংকার ও অস্থিরতার অন্ধকার পথ পরিহার করে সেই আলোকিত সড়কে পা বাড়ানো, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কই হয়ে ওঠে প্রশান্তির উৎস, দায়িত্ববোধের প্রতীক এবং পরকালীন সাফল্যের সোপান। কুরআন ও সুন্নাহর এই অমূল্য নির্দেশনাগুলোকে আজীবনের সঙ্গী করুন, দাম্পত্য, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বাস্তবায়ন করুন, এবং নিজের জীবনে, পরিবারে ও সমাজে এই শান্তির পথের সুশীতল ছায়া প্রতিষ্ঠা করুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই পবিত্র পথে অবিচল থাকার তাওফিক দিন। আমীন।


    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    ইসলামিকভাবে এবং শ্রদ্ধা ও সম্পর্ক গুণমান নির্ধারণ নীতি নীতিমালা পথ প্রভা মূল্যবোধ, লাইফস্টাইল শান্তি শান্তির শিক্ষা সম্পর্ক সহাবস্থান
    Related Posts
    ফাঙ্কশনাল

    এই ৭ লক্ষণে বুঝুন আপনি কি ফাঙ্কশনাল ডিপ্রেশনে ভুগছেন?

    August 15, 2025
    মেয়েরা বিয়ের জন্য

    মেয়েরা বিয়ের জন্য যেমন ছেলেদের পারফেক্ট মনে করেন

    August 15, 2025
    জীবনসঙ্গী

    যেসব পুরুষদের একেবারেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ নয় মহিলাদের

    August 15, 2025
    সর্বশেষ খবর
    Alien: Earth

    Alien: Earth’s Eye Midge Monster Explained

    পোষ্টার

    খাগড়াছড়িতে শেখ মুজিবের পোষ্টার লাগানোতে ছাত্রলীগের ৪ নেতাকে গণপিটুনি

    মরদেহ উদ্ধার

    নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

    ফাঙ্কশনাল

    এই ৭ লক্ষণে বুঝুন আপনি কি ফাঙ্কশনাল ডিপ্রেশনে ভুগছেন?

    Mondo Digital Recruitment: Leading the Tech Talent Revolution

    Mondo Digital Recruitment:Leading the Tech Talent Revolution

    Khicuri

    বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কাঙালি ভোজের খিচুড়ি জব্দ

    অঙ্গপ্রতিষ্ঠান

    ৩পদে ১৯ জনকে নিয়োগ দেবে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান

    Monin Flavor Innovations: Leading the Global Beverage Revolution

    Monin Flavor Innovations: Leading the Global Beverage Revolution

    Monster Energy Marketing Innovations

    Monster Energy Marketing Innovations: Leading the Global Beverage Revolution

    নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত

    নির্বাচনে জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী দোসরগুলোকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হবে

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.