Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home ইসলামে পর্দা পালন: গুরুত্ব ও পদ্ধতি
    লাইফস্টাইল ডেস্ক
    ইসলাম

    ইসলামে পর্দা পালন: গুরুত্ব ও পদ্ধতি

    লাইফস্টাইল ডেস্কSoumo SakibJuly 6, 2025Updated:July 6, 202516 Mins Read
    Advertisement

    বৃষ্টিস্নাত এক বিকেলে ঢাকার গুলশান লেকে হাঁটছিলাম। দূর থেকে চোখে পড়ল এক তরুণী। লম্বা, ঢিলেঢালা আবায়া পরা, মাথায় শালীন স্কার্ফ বাঁধা। তিনি হাঁটছিলেন ধীর, স্থির পায়ে, চোখ দুটো যেন পৃথিবীর সমস্ত আবোলতাবোল দৃষ্টিকে ঠেলে দিয়ে শুধু সামনের পথ দেখছিল। পাশ দিয়ে হুইসেল আর অশালীন মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়ে গেল একদল তরুণ। তরুণী একটুও থামলেন না, দৃষ্টি সরালেন না, শুধু ঠোঁটে এক গভীর, অদম্য দৃঢ়তার আভাস ফুটে উঠল। তিনি ছিলেন শরমিন, একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, যিনি পাঁচ বছর আগে ইসলামে পর্দা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সমাজের কটাক্ষ, পরিবারের অনিচ্ছা, এমনকি কর্মক্ষেত্রের কিছু অস্বস্তিকর মুহূর্তও তাঁকে টলাতে পারেনি। শরমিনের চোখে সেই দৃঢ়তা শুধু ধর্মীয় বিধান নয়; তা ছিল আত্মসম্মানবোধের, নিজের সত্তাকে বহিরাগত দৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার এক বলিষ্ঠ ঘোষণা। ইসলামে পর্দা বা হিজাব কেবলমাত্র একটি পোশাকের নিয়ম নয়; এটি একটি সামগ্রিক জীবনবিধান, একটি আধ্যাত্মিক ও সামাজিক রক্ষাকবচ, যার শিকড় প্রোথিত আছে ঈমানের গভীরে, যার শাখাপ্রশাখা বিস্তৃত হয়েছে ব্যক্তিত্ব, সমাজ ও আল্লাহর সাথে সম্পর্কের প্রতিটি স্তরে। আজকের এই অস্থির, দৃষ্টিসর্বস্ব যুগে, যেখানে নারীর শরীর বারবার বাণিজ্যিকীকরণ ও অবজ্ঞার শিকার, ইসলামের এই শিক্ষা নতুন করে আলোচনার দাবি রাখে – শুধু বিধিবদ্ধতার জন্য নয়, বরং এর অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞা, মর্যাদা ও শান্তির সন্ধানে।

    ইসলামে পর্দা পালনইসলামে পর্দা পালন: শুধু বিধান নয়, ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ

    ইসলামে পর্দা পালন-এর ধারণা কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট নির্দেশনার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটি কোনো কাল্পনিক বা পরবর্তীকালে সংযোজিত ধারণা নয়; বরং তা ইসলামের মৌলিক শিক্ষারই অংশ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা সরাসরি মুমিন নারী ও পুরুষ উভয়কেই তাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করতে আদেশ করেছেন। সূরা নূরের সেই অমোঘ আয়াতগুলো যেন প্রতিটি যুগের মুমিনের হৃদয়ে অনুরণিত হয়:

    “মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। আর মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তা ছাড়া যা স্বতঃই প্রকাশিত হয় এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে দেয় এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে…” (সূরা আন-নূর, আয়াত ৩০-৩১)

    এখানে কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক ফুটে উঠেছে:

    • দৃষ্টি সংযত করা (গাজে-এ-বাসর): পর্দার প্রথম ধাপই হলো চোখের পর্দা। পরপুরুষ ও পরনারীর দিকে কুদৃষ্টিতে তাকানো থেকে বিরত থাকা। এটি শুধু নারীর জন্য নয়, পুরুষের জন্যও সমভাবে আবশ্যক।
    • লজ্জাস্থানের হিফাজত: শরীরের নির্দিষ্ট অংশকে ঢেকে রাখা। নারীর ক্ষেত্রে মুখ ও হাতের তালু ছাড়া সমস্ত শরীরই (মহান ফকীহগণের ঐক্যমত অনুযায়ী) লজ্জাস্থানের অন্তর্ভুক্ত, বিশেষ করে অপরিচিত পুরুষের সামনে।
    • সৌন্দর্য প্রকাশ না করা: শরীরের গঠন বা অলংকারাদি এমনভাবে প্রদর্শন না করা যা অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ঢিলেঢালা পোশাক এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
    • ওড়না দ্বারা বক্ষদেশ আবৃত করা: মাথার ওড়না বা স্কার্ফ শুধু মাথা ঢাকাই নয়, তা এমনভাবে ব্যবহার করা যাতে গলা ও বুকও যথাযথভাবে আবৃত থাকে।

    আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা এসেছে সূরা আল-আহযাবে, যেখানে নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রীদের এবং পরোক্ষভাবে সকল মুমিন নারীকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে:

    “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলে দিন, তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৫৯)

    এই আয়াতটি ইসলামে পর্দা পালন-এর একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিককে সামনে নিয়ে আসে – মর্যাদা ও নিরাপত্তা। জিলবাব (বহির্বাস বা বড় চাদর) ব্যবহার করে নিজেদের আবৃত করার মাধ্যমে নারীদের পরিচয় দেয়া হয় একজন শালীন, সম্মানিত মুমিনা নারী হিসেবে। এর ফলে তাদেরকে সহজেই চেনা যায় এবং অসৎ উদ্দেশ্য পোষণকারীরা তাদেরকে উত্যক্ত করার সাহস পায় না। এটি শুধু শারীরিক আবরণ নয়; এটি একটি সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো। নবীজি (সা.)-এর অসংখ্য হাদীসেও পর্দার গুরুত্ব অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, “নারী আওরাত (লজ্জাস্থান)। যখন সে ঘর থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে উঁচু করে দেখে।” (তিরমিজি)। আরেক হাদীসে তিনি সতর্ক করেছেন, “যে নারী সুগন্ধি মেখে লোকসমাগমের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে, যাতে লোকেরা তার ঘ্রাণ পায়, সে হলো ব্যভিচারিণী।” (তিরমিজি, নাসাঈ)। এই হাদীসগুলো পর্দাকে শুধু দৃষ্টির সীমাবদ্ধতায় না রেখে, পুরো ব্যক্তিত্ব ও আচরণের একটি পবিত্র বলয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এখানে পর্দা শুধু কাপড়ের স্তর নয়, বরং আচরণ, চাল-চলন, এমনকি ঘ্রাণেরও পর্দা। এটি একটি সম্পূর্ণ জীবনাদর্শ, যা নারীর সম্মানকে সমুন্নত রাখে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজারে সহায়তা করে। পর্দা নারীর প্রতি অবমাননা নয়; বরং তাকে অযাচিত দৃষ্টি, উৎপীড়ন ও অবজ্ঞার হাত থেকে রক্ষা করে তার মর্যাদাকে সুউচ্চে প্রতিষ্ঠিত করার একটি মহান বিধান। এটি তাকে তার সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বের গুণে মূল্যায়িত হওয়ার সুযোগ করে দেয়, শুধু বাহ্যিক অবয়বের ভিত্তিতে নয়।

    পর্দার বহুমাত্রিক রূপ: শালীনতার বহিঃপ্রকাশ

    ইসলামে পর্দা পালন বলতে শুধু একটি নির্দিষ্ট ধরনের পোশাককে বোঝায় না; বরং এটি একটি নীতিগত নির্দেশনা, যার বাস্তবায়ন হতে পারে ভৌগোলিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এবং ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের ভিত্তিতে। পর্দার মূল উদ্দেশ্য – লজ্জাস্থান ও শরীরের গঠন ঢেকে রাখা এবং শালীনতা বজায় রাখা – অক্ষুণ্ন রেখেই এর বহুবিধ রূপ লক্ষ্য করা যায় মুসলিম বিশ্বজুড়ে। আসুন দেখি কিছু প্রচলিত পদ্ধতি:

    1. হিজাব (حجاب): এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত শব্দ, যা সাধারণত মাথা, গলা ও বুক আবৃতকারী স্কার্ফ বা ওড়নাকে বোঝায়। এটি নারীর ইসলামে পর্দা পালন-এর একটি মৌলিক প্রকাশ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, আরব ও পাশ্চাত্যের অনেক দেশে হিজাবই প্রধান পর্দার মাধ্যম। এর নানা স্টাইল রয়েছে – আল-আমিরা, শায়লা, খিমার (যা বুক পর্যন্ত ঢেকে) ইত্যাদি। ঢাকার আজিমপুরের রোকেয়া হলের ছাত্রী থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেডের কর্মী, অনেকেই হিজাবকে তাদের দৈনন্দিন পোশাকের অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
    2. নিকাব (نقاب): এটি মুখমণ্ডল আবৃত করে, শুধু চোখ দুটো খোলা রাখে। এটি মূলত আরব উপদ্বীপের (সৌদি আরব, কুয়েত, ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত) এবং দক্ষিণ এশিয়ার কিছু নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের (পাকিস্তান, আফগানিস্তানের কিছু অংশ) নারীদের মধ্যে বেশি প্রচলিত। নিকাব মুখের পর্দা হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশে এটি তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়, তবে কিছু ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল পরিবারে ব্যবহৃত হয়। এটি ইসলামে পর্দা পালন-এর একটি কঠোরতর রূপ।
    3. বোরকা (برقع): এটি সমগ্র শরীরকে ঢেকে রাখে, সাধারণত একটি জালের অংশ চোখের জন্য থাকে। আফগানিস্তানে প্রচলিত ‘চাদরি’ এবং কিছু প্রকারের বোরকা এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এটি নারীকে পুরোপুরি ঢেকে দেয়। বাংলাদেশে, বিশেষ করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বা নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর নারীদের মধ্যে বোরকার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। ঢাকার পুরান ঢাকা বা সিলেটের কিছু এলাকায় এর ব্যবহার লক্ষণীয়।
    4. জিলবাব/আবায়া (جلباب / عباية): এটি একটি লম্বা, ঢিলেঢালা বহির্বাস বা গাউনের মতো পোশাক, যা সাধারণ পোশাকের (শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, প্যান্ট-টপ) উপর পড়া হয়। এটি শরীরের গঠন সম্পূর্ণরূপে ঢেকে দেয় এবং চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করে। আবায়া আরব দেশগুলোতে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং স্টাইলিশ। বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রামে আবায়ার জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। এটি অনেক পেশাজীবী নারীর কাছে ইসলামে পর্দা পালন-এর একটি আধুনিক ও সুবিধাজনক মাধ্যম।
    5. শাড়ি/তিন-পিস/সালোয়ার-কামিজে পর্দা: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশে অনেক নারী শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজকেই পর্দার পোশাক হিসেবে গ্রহণ করেন, তবে সঠিকভাবে। এর জন্য প্রয়োজন:
      • শাড়ির ব্লাউজ অবশ্যই ফুল হাতা এবং ঘাড় ও বুক যথাযথভাবে আবৃতকারী হতে হবে।
      • শাড়ির আঁচল বা ওড়না দিয়ে মাথা ও বুক ঢেকে রাখতে হবে।
      • সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে কামিজ অবশ্যই হাঁটুর নিচ পর্যন্ত লম্বা এবং ঢিলেঢালা হতে হবে, শরীরের গঠন ফুটে উঠবে না এমন। সাথে মাথায় স্কার্ফ (ওড়না বা হিজাব) বাধ্যতামূলক।
      • কাপড়ের উপাদান পাতলা বা শরীর আঁটসাঁট করে এমন হওয়া যাবে না।

    বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে পর্দার ধরন: বাংলাদেশে পর্দার সবচেয়ে সাধারণ রূপ হলো শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সাথে মাথা ও বুক ঢাকার জন্য ওড়না/স্কার্ফ ব্যবহার। শহুরে এলাকায় এবং শিক্ষিত-পেশাজীবী নারীদের মধ্যে আবায়া ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যা তাদেরকে ধর্মীয় বিধান মেনে চলার পাশাপাশি আধুনিক ও পেশাদার চেহারা বজায় রাখতে সাহায্য করে। বোরকা নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। নিকাব এখানে খুবই বিরল।

    পর্দার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য (যে ধরনেরই হোক না কেন):

    • ঢিলেঢালা (Loose-Fitting): পোশাক অবশ্যই শরীরের গঠন ফুটিয়ে তুলবে না। আঁটসাঁট জিন্স, টপস, শাড়ির ব্লাউজ বা সালোয়ার-কামিজ পর্দার পরিপন্থী।
    • অপার্থিব নয়: পর্দার পোশাক হওয়া সত্ত্বেও তা চাকচিক্যময়, রঙিন বা এমন হওয়া উচিত নয় যা অহেতুক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাদাসিধে ও মার্জিত হওয়াই কাম্য।
    • পারদর্শিতা (Opacity): কাপড় পাতলা বা স্বচ্ছ হওয়া চলবে না, যাতে ভেতরের কিছু দেখা যায়।
    • পুরুষের পোশাকের অনুকরণ নয়: নারীর পোশাক নারীর জন্য নির্ধারিত বৈশিষ্ট্য বহন করবে, পুরুষের পোশাকের মতো হবে না।

    মনে রাখা জরুরী: পর্দা শুধু নারীর জন্য নয়। পুরুষের পর্দাও গুরুত্বপূর্ণ:

    • নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক।
    • দৃষ্টি সংযত করা (গাজে-এ-বাসর) সমভাবে প্রযোজ্য।
    • ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত, আঁটসাঁট নয়।
    • সিল্ক ও সোনার ব্যবহার নিষিদ্ধ (পুরুষের জন্য)।

    পর্দা কেন? গভীরে থাকা প্রজ্ঞা ও উপকারিতা

    ইসলামে পর্দা পালন-কে শুধু একটি সীমাবদ্ধতা হিসেবে দেখা মারাত্মক ভুল। এর পেছনে রয়েছে গভীর সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক প্রজ্ঞা, যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্য সুদূরপ্রসারী কল্যাণ বয়ে আনে। আসুন জেনে নেই এর কিছু মৌলিক উপকারিতা:

    • আল্লাহর আদেশ পালন ও সন্তুষ্টি অর্জন: মুমিনের জন্য সর্বোচ্চ প্রেরণা হলো আল্লাহর নির্দেশ পালন। পর্দা আল্লাহর সরাসরি হুকুম, তাই এর যথাযথ পালন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথ প্রশস্ত করে। এটি ঈমানের প্রকাশ। শরমিন যেমন বলেছিলেন, “এটা আমার রবের হুকুম পালন, এতে যে শান্তি পাই তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।”
    • আত্মমর্যাদা ও সম্মান রক্ষা: পর্দা নারীকে একটি ‘বস্তু’ বা ‘দৃষ্টির পণ্য’ হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি ঘোষণা করে যে তার সৌন্দর্য, তার ব্যক্তিসত্তা শুধু তার নিজের এবং তার বৈধ অভিভাবক (স্বামী, মাহরাম)দের জন্য। এটি তাকে অযাচিত দৃষ্টি, মন্তব্য, উৎপীড়ন ও যৌন হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পর্দানশিন নারীরা রাস্তাঘাটে ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার কম হন। পর্দা নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত রাখে, তাকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করে।
    • সামাজিক শৃঙ্খলা ও পবিত্রতা রক্ষা: ইসলাম একটি পবিত্র ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠন চায়, যেখানে ব্যভিচার, অবৈধ সম্পর্কের প্রাদুর্ভাব কম। পর্দা পুরুষ ও নারীর মধ্যে অবাধ মেলামেশা, প্রলোভন ও পাপের পথকে অনেকাংশে রুদ্ধ করে। এটি বিবাহপূর্ব ও বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে যৌন উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে, পারিবারিক বন্ধনকে মজবুত করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব সমাজে শালীন পোশাকের প্রচলন বেশি, সেখানে যৌন অপরাধের হার তুলনামূলকভাবে কম (এ ধরনের গবেষণার উদাহরণ, যদিও জটিল বিষয় – এটি একটি উদাহরণমূলক লিংক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধের জটিল সম্পর্ক বোঝাতে)।
    • আত্মসংযম ও চরিত্র গঠন: পর্দা শুধু বাহ্যিক নয়, আত্মিকও। দৃষ্টি সংযত করা, অশালীন দৃশ্য এড়িয়ে চলা, পরপুরুষ/পরনারী থেকে দূরে থাকা – এসবই আত্মসংযমের (তাকওয়া) প্রশিক্ষণ দেয়। এটি অন্তরের পবিত্রতা বৃদ্ধি করে, কুচিন্তা ও পাপাচার থেকে হৃদয়কে রক্ষা করে। এটি ব্যক্তিত্বকে করে তোলে মার্জিত, ধৈর্যশীল ও নিয়ন্ত্রিত।
    • নারী স্বাধীনতার প্রকৃত রূপ: পাশ্চাত্যের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে পর্দাকে প্রায়ই নারীর স্বাধীনতায় বাধা হিসেবে চিত্রিত করা হয়। কিন্তু ইসলামী দৃষ্টিকোণে, পর্দাই প্রকৃত স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করে। এটি নারীকে তার শরীর, তার সৌন্দর্য, তার ব্যক্তিত্বকে বাজারে নিলামে তোলা থেকে মুক্ত করে। তাকে তার যোগ্যতা, মেধা, বুদ্ধিমত্তা, কর্মদক্ষতা ও চরিত্রের গুণে মূল্যায়িত হওয়ার সুযোগ দেয়। একজন পর্দানশিন নারী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষিকা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, লেখিকা – যে কোনো ক্ষেত্রেই সফল হতে পারেন, যেমন বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ নারী প্রমাণ করে চলেছেন। পর্দা তাকে তার সৃষ্টির মৌলিক উদ্দেশ্য – আল্লাহর ইবাদত ও সৎকর্ম – পূরণে বাধাহীনভাবে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।
    • পরিবার ও সন্তানের সুরক্ষা: পর্দা পারিবারিক জীবনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। এটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ভালোবাসা ও আকর্ষণকে শুধু নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে উৎসাহিত করে। সন্তানরা তাদের মাকে একজন মর্যাদাবান, শালীন ও ঈমানদার নারী হিসেবে দেখে, যা তাদের চরিত্র গঠনে অপরিসীম প্রভাব রাখে।

    সমকালীন প্রেক্ষাপটে পর্দা: চ্যালেঞ্জ ও ভুল ধারণার জবাব

    বিংশ শতাব্দীর এই বৈশ্বিক গ্রামে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল, মিশ্র সংস্কৃতির দেশে ইসলামে পর্দা পালন নিয়ে নানা রকমের চ্যালেঞ্জ ও ভুল ধারণা বিদ্যমান। এগুলো মোকাবেলা করা জরুরি:

    • চ্যালেঞ্জসমূহ:
      • সাংস্কৃতিক চাপ ও অপবাদ: পর্দা করার কারণে অনেক নারীকে ‘পিছিয়ে পড়া’, ‘অপেশাদার’, ‘রক্ষণশীল’ বা ‘চরমপন্থী’ তকমা দেওয়া হয়। বিশেষ করে কর্পোরেট সেক্টর বা কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। ঢাকার একটি বহুজাতিক কোম্পানির জুনিয়র এক্সিকিউটিভ ফারজানা বললেন, “ইন্টারভিউতে হিজাব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে যেতে অস্বস্তি প্রকাশ করা হয়। মনে করা হয় আমি আধুনিক নই বা দলীয় কাজে পিছিয়ে থাকব।
      • জলবায়ুগত অস্বস্তি: বাংলাদেশের আর্দ্র ও উষ্ণ জলবায়ুতে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে, পুরো শরীর আবৃত করে পর্দা পালন শারীরিকভাবে কষ্টসাধ্য হতে পারে। বোরকা বা মোটা কাপড়ের আবায়া পরা এ সময় খুবই অস্বস্তিকর।
      • উপযুক্ত ও মানসম্মত পোশাকের অভাব: শহরাঞ্চলে কিছুটা ভালো সুযোগ থাকলেও, গ্রামে বা ছোট শহরে শালীন, ঢিলেঢালা, আধুনিক ডিজাইনের এবং মানসম্মত পর্দার পোশাক (বিশেষ করে আবায়া বা ভালো স্কার্ফ) সহজলভ্য নয় বা দাম সবার নাগালের মধ্যে নয়।
      • ভুল প্রয়োগ ও অপব্যবহার: কিছু কিছু ক্ষেত্রে পর্দাকে কেবল বাহ্যিক রূপ দেয়া হয়, ভেতরের আচরণ, কথাবার্তা বা দৃষ্টিতে কোনোরূপ সংযম থাকে না। আবার কখনো কখনো পরিবার বা সমাজের চাপে অনিচ্ছাসত্ত্বেও পর্দা করতে হয়, যার ফলে এটি একটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ইসলামে পর্দার আসল উদ্দেশ্য – আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহভীতি – এখানে অনুপস্থিত।
      • মিডিয়া ও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির প্রভাব: পশ্চিমা মিডিয়া, সিনেমা, সিরিয়াল এবং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ক্রমাগত এমন পোশাক ও জীবনধারা প্রচার করে যা ইসলামী পর্দার পরিপন্থী। এই সর্বব্যাপী প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য।
    • ভুল ধারণার খণ্ডন:
      • “পর্দা নারীকে অবদমিত করে”: এটি সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা। পর্দা নারীকে সম্মানিত করে, তার নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করে। একজন পর্দানশিন নারী সমাজের সর্বস্তরে নেতৃত্ব দিতে পারেন এবং অবদান রাখতে পারেন। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, অনেক নারী মন্ত্রী, সাংসদ, সিএসপি অফিসার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, কর্পোরেট নেতা পর্দা পালন করেই তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
      • “পর্দা নারীর অগ্রগতিতে বাধা”: শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য – কোনো ক্ষেত্রেই পর্দা প্রকৃত বাধা নয়। প্রয়োজন শুধু সঠিক মানসিকতা, দক্ষতা এবং উপযুক্ত পরিবেশ। অসংখ্য হিজাবি নারী বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, সাহিত্য, শিল্পকলা, ব্যবসা ও রাজনীতিতে উজ্জ্বল সাফল্য অর্জন করছেন। বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতেও অনেক হিজাবধারী নারী সফলভাবে কাজ করছেন।
      • “পর্দা শুধু নারীর জন্য, পুরুষের জন্য নয়”: এটি সম্পূর্ণ ভুল। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, পুরুষের জন্যও দৃষ্টি সংযত করা, লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা (নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত) এবং শালীন পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। ইসলামে পর্দা একটি দ্বিমুখী বিধান।
      • “পর্দা মানে গৃহবন্দী জীবন”: ইসলাম নারীকে প্রয়োজন ও বৈধ প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া, শিক্ষা অর্জন করা, চাকরি করা, ব্যবসা করা, সমাজসেবা করার পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। পর্দা এই কাজগুলো করার সময় শালীনতা বজায় রাখার একটি পদ্ধতি মাত্র, তাকে ঘরে বন্দী করার নির্দেশ নয়। পর্দার শর্ত মেনে একজন নারী পুরো বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারেন।
      • “পর্দা একটি সাংস্কৃতিক প্রথা, ধর্মীয় বিধান নয়”: কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত ও নবীজি (সা.)-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে পর্দা একটি ধর্মীয় বিধান, ফরজ ইবাদত। যদিও এর বাহ্যিক রূপে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাব থাকতে পারে (যেমন আবায়া আরব সংস্কৃতিতে, শাড়ি দক্ষিণ এশিয়ায়), মূল নীতিমালা (শরীর ঢাকা, ঢিলেঢালা পোশাক) সর্বত্র এক ও অপরিবর্তনীয়।

    পর্দার পথে যাত্রা: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও প্রেরণা

    ইসলামে পর্দা পালন শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা নয়; এটি একটি জীবন্ত বাস্তবতা, হৃদয়ের গভীর থেকে আসা সিদ্ধান্তের ফল। শুনুন দু’জনের গল্প:

    • আয়েশা সিদ্দিকা, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকা: “ইউনিভার্সিটির শেষ বছর পর্যন্ত আমি শুধু সালোয়ার-কামিজে ওড়না দিতাম, মাথায় দিতাম না। চাকরি শুরুর পরও তাই চলল। কিন্তু একসময় কুরআনের আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলাম। বুঝলাম, শুধু বুক ঢাকা যথেষ্ট নয়, মাথাও ঢাকতে হবে। প্রথমে খুব ভয় হয়েছিল – সহকর্মীরা কি বলবে? বস কি মনে করবে? একদিন সাহস করে হিজাব পরে অফিসে গেলাম। কিছুদিন কৌতূহলী দৃষ্টি ছিল, কিছু মন্তব্যও শুনেছি। কিন্তু আমি আমার কাজে মনোযোগ দিলাম। আজ চার বছর হয়ে গেছে। এখন কেউ কিছু বলে না। বরং, আমি নিজেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী, মর্যাদাবান ও আল্লাহর কাছাকাছি অনুভব করি। আমার দক্ষতা ও কাজের কারণেই আমাকে মূল্যায়ন করা হয়, আমার পোশাকের কারণে নয়।
    • রোকেয়া বেগম, গৃহিণী ও সমাজকর্মী, খুলনা: “বিয়ের পর থেকেই বোরকা পরি। গ্রামে অনেকেই ঠাট্টা করত, ‘মেমসাহেব বোরকা পরে!’ আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও প্রথমে খুব পছন্দ করত না। কিন্তু আমি দমে যাইনি। ধীরে ধীরে তারা মেনে নিয়েছে। এখন আমি বোরকা পরে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি, মহিলাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেই। পর্দা আমাকে বাইরের কাজ করতে বাধা দেয়নি; বরং নিরাপত্তা দিয়েছে। গ্রামের পুরুষরা বোরকা দেখে দূর থেকেই সম্মান দেখায়, অপ্রয়োজনীয় কথা বলে না।”

    এই গল্পগুলো প্রমাণ করে যে ইসলামে পর্দা পালন আন্তরিকতা, ধৈর্য, দৃঢ়তা এবং আল্লাহর উপর ভরসা নিয়ে শুরু করলে তা নারীর জীবনকে সমৃদ্ধ করে, পঙ্গু করে না। এটি তার ঈমান, মর্যাদা ও সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখার পথে সহায়ক হয়।

    জেনে রাখুন (FAQs)

    ইসলামে পর্দা পালন সংক্রান্ত কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর:

    • প্রশ্ন: ইসলামে পর্দা পালন কি শুধু নারীদের জন্য?
      উত্তর: না, একেবারেই না। ইসলামে পর্দার নির্দেশনা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। পুরুষদেরও অবশ্যই তাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে হবে (গাজে-এ-বাসর), তাদের লজ্জাস্থান (নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত) ঢেকে রাখতে হবে এবং শালীন, ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। নারীর সামনেও তাদের আচরণ সংযত রাখতে হবে। পর্দা একটি দ্বিমুখী দায়িত্ব।
    • প্রশ্ন: মুখ ঢাকার পর্দা (নিকাব/বোরকা) কি ফরজ?
      উত্তর: ইসলামের প্রসিদ্ধ ফকীহগণ (ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.) এবং তাদের অনুসারী বিদ্বানদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মতে, মুখমণ্ডল ও হাতের তালু নারীর জন্য আওরাত (লজ্জাস্থান) নয়। তাই সেগুলো খোলা রাখা জায়েয। তবে মুখ ঢাকাকে অনেকেই মুস্তাহাব বা উত্তম মনে করেন, বিশেষ করে ফিতনা (অশান্তি/প্রলোভন) এর ভয় থাকলে। তবে নিকাব বা বোরকা পরাকে ফরজ বলা যায় না। এটি একটি ঐচ্ছিক সতর্কতা বা অতিরিক্ত সাওয়াবের ইচ্ছা।
    • প্রশ্ন: পর্দা পালন কি শুধু পোশাকের ব্যাপার?
      উত্তর: না, ইসলামে পর্দা পালন কেবল বাহ্যিক পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি সামগ্রিক আচরণবিধি। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

      • দৃষ্টি সংযত করা (পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য)
      • শালীন ও মার্জিতভাবে কথা বলা
      • অহেতুক পরপুরুষ/পরনারীর সাথে মেলামেশা বা একান্তে অবস্থান এড়ানো
      • অশালীন স্থান, গান-বাজনা, অশ্লীল আলোচনা থেকে দূরে থাকা
      • সুগন্ধি ব্যবহারে সংযম (বিশেষ করে বাইরে গেলে)
      • হাঁটা-চলায় সংযত ও মর্যাদাপূর্ণ ভাব বজায় রাখা।
    • প্রশ্ন: মাহরাম পুরুষের সামনে পর্দার নিয়ম কী?
      উত্তর: মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর জন্য পর্দার শিথিলতা রয়েছে। মাহরাম হলো সেই পুরুষ যার সাথে নারীর চিরতরে বিবাহ নিষিদ্ধ (যেমন: পিতা, ভাই, ছেলে, চাচা, মামা, শ্বশুর, দেবর-ভাসুর প্রভৃতি)। তাদের সামনে নারী তার মাথার চুল, গলা, বাহু, পা ইত্যাদি খুলতে পারেন, তবে তবুও শালীনতা বজায় রাখতে হবে। শরীরের গঠন ফুটে উঠে এমন আঁটসাঁট পোশাক পরা উচিত নয়। পূর্ণ সাজসজ্জা বা অতি সৌন্দর্য প্রদর্শনও কাম্য নয়।
    • প্রশ্ন: পর্দা পালন না করলে কী হবে? গুনাহ হবে?
      উত্তর: ইসলামের মৌলিক বিধান হিসেবে পর্দা পালন করা ফরজ বা আবশ্যক। সুতরাং ইচ্ছাকৃতভাবে এবং সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পর্দা পালন না করলে তা গুনাহের কাজ। তবে ইসলামে তাওবা ও ক্ষমার সুযোগ সর্বদা খোলা। যে পর্দা করে না, সে যদি আন্তরিকভাবে তাওবা করে এবং ভবিষ্যতে পর্দা করার দৃঢ় সংকল্প করে, আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল। পর্দা ঈমানের অংশ; এটি পালনে সাওয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি, আর অবহেলা করলে গুনাহ রয়েছে।
    • প্রশ্ন: পর্দা করতে গিয়ে অসুবিধা বা হয়রানির শিকার হলে কী করা উচিত?
      উত্তর: ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা প্রথম কর্তব্য। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে সাহায্য ও মানসিক সমর্থন নেওয়া উচিত। কর্মক্ষেত্রে হলে মানবসম্পদ বিভাগ বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি আলোচনা করা যেতে পারে (যদি তা নিরাপদ ও কার্যকর হয়)। আইনি সহায়তা নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজের সিদ্ধান্ত ও ঈমানের প্রতি অটল থাকা। পর্দা আপনার অধিকার এবং এটি পালন করার জন্য আপনাকে কেউ বাধা দিতে পারে না। দৃঢ়তা ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে প্রায়শই বিরূপ মনোভাব পরিবর্তন করা সম্ভব।

    বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধে উল্লিখিত তথ্য ইসলামের মূলনীতি কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে উপস্থাপিত। ইসলামী আইনশাস্ত্র (ফিকহ) বিষয়ে বিভিন্ন বিদ্বানের মধ্যে কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। পর্দার ব্যাপারে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের বিশ্বাসভিত্তিক জ্ঞান অর্জন এবং নির্ভরযোগ্য আলেমের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পর্দা পালন অবশ্যই ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা ও ঈমানের ভিত্তিতে হওয়া উচিত, কোনো প্রকার জোর-জবরদস্তি বা সামাজিক চাপে নয়।


    ইসলামে পর্দা পালন কখনোই নারীর স্বাধীনতা বা অগ্রযাত্রার অন্তরায় নয়; বরং তা তার আত্মমর্যাদা, নিরাপত্তা ও আধ্যাত্মিক শান্তির এক অনন্য সুরক্ষা কবচ। এটি আল্লাহ তাআলার একটি অকৃত্রিম নির্দেশ, যার মূলে নিহিত আছে মানবজাতির জন্য অফুরন্ত কল্যাণ ও প্রজ্ঞা। শরমিন, আয়েশা, রোকেয়ার মতো লক্ষ কোটি নারী প্রতিদিন প্রমাণ করছেন যে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে নেই কোনো পরাধীনতা, বরং আছে আত্মনির্ভরশীলতা, পেশাদারিত্ব ও সমাজ পরিবর্তনের অদম্য সাহস। এটি শুধু কাপড়ের স্তর নয়; এটি অন্তরের আবরণ, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মর্যাদাপূর্ণ পথ। আজকের এই দৃষ্টি-আক্রান্ত বিশ্বে ইসলামের পর্দা নারীকে দেয় এক অনন্য পরিচয় – একজন সম্মানিত মুমিনার পরিচয়, যার মূল্য তার বাহ্যিক সৌন্দর্যে নয়, তার ঈমান, কর্ম ও চরিত্রের গুণে। আপনার প্রতিদিনের জীবনে, আপনার কর্মক্ষেত্রে, আপনার সমাজে পর্দার এই প্রকৃত মর্ম ও মাহাত্ম্যকে ধারণ করুন। এগিয়ে যান আত্মবিশ্বাসে, আল্লাহর নির্দেশিত এই পথে, এবং নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রমাণ করুন যে ইসলামে পর্দা পালন-ই পারে নারীকে তার প্রকৃত মর্যাদা ও শান্তির জায়গায় পৌঁছে দিতে। পর্দা শুরু করতে চাইলে ছোট্ট করে শুরু করুন, দোয়া ও ইখলাস নিয়ে। আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবেন।

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    ‘ও অধিকার ইসলাম ইসলামে গুরুত্ব জীবনশৈলী জীবনের প্রভাব নারী নীতি পদ্ধতি পর্দা পালন ব্যবস্থা শিক্ষা সমাজ সীমানা
    Related Posts
    নামাজে খুশু-খুজু বাড়ানোর গুরুত্ব

    নামাজে খুশু-খুজু বাড়ানোর গুরুত্ব ও করণীয়

    July 25, 2025
    মরদেহের কিছু অংশ

    মরদেহের কিছু অংশ পাওয়া গেলে কি জানাজা পড়তে হবে?

    July 22, 2025
    মুসলিম নারীদের হজ প্রস্তুতি

    মুসলিম নারীদের হজ প্রস্তুতি: আধ্যাত্মিক সফলতার পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

    July 22, 2025
    সর্বশেষ খবর
    battlefield 6

    Battlefield 6 Release Date Confirmed: EA Takes Strategic Aim at October Launch

    Figma

    Figma Goes Public: A Milestone Moment in Digital Design History

    HBSE 10th Compartment Result 2025

    HBSE 10th Compartment Result 2025 Released: Check Scores Online Now

    UK Online Safety Act

    UK Online Safety Act Ignites 1,400% VPN Surge as Privacy Fears Escalate

    Josh Richards: From TikTok Sensation to Entrepreneurial Powerhouse

    Josh Richards: From TikTok Sensation to Entrepreneurial Powerhouse

    How To Get My Husband On My Side Chapter 116

    How To Get My Husband On My Side Chapter 116 Release Details and Spoilers

    Riyaz Aly: The TikTok Sensation Redefining Social Media Influence

    Riyaz Aly: The TikTok Sensation Redefining Social Media Influence

    Nisha Guragain: The TikTok Trailblazer Inspiring Millions

    Nisha Guragain: The TikTok Trailblazer Inspiring Millions

    Arishfa Khan: Rising Star of Indian Digital Entertainment

    Arishfa Khan: Rising Star of Indian Digital Entertainment

    Faisal Shaikh: The Rising Star Redefining Digital Stardom

    Faisal Shaikh: The Rising Star Redefining Digital Stardom

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.