Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home ইসলামে মহিলাদের অধিকার: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে অমূল্য মর্যাদার স্বীকৃতি
    লাইফস্টাইল ডেস্ক
    ইসলাম ধর্ম

    ইসলামে মহিলাদের অধিকার: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে অমূল্য মর্যাদার স্বীকৃতি

    লাইফস্টাইল ডেস্কTarek HasanJuly 5, 202518 Mins Read
    Advertisement

    একটি অন্ধকার যুগের কথা ভাবুন। যেখানে নবজাতক কন্যাসন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো লজ্জা আর ভয়ের কারণে। যেখানে নারী ছিল উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি, কেনাবেচার পণ্য, অক্ষম প্রাণী। আরবের জাহিলিয়্যাতের সেই নিকষ কালো অন্ধকারে এক ঝলক আলোর জন্ম দিলেন মুহাম্মদ (সা.)। ইসলামে মহিলাদের অধিকার নিয়ে যে বিপ্লবী ঘোষণা এলো, তা শুধু সপ্তম শতাব্দীর আরবকেই না, গোটা মানবসভ্যতাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল। কুরআনের আয়াত আর রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহর মাধ্যমে নারীকে দেওয়া হলো তার সৃষ্টিগত মর্যাদা, ব্যক্তিসত্তা, আত্মিক সম্মান, আইনগত অধিকার আর সামাজিক নিরাপত্তা। অথচ আজ, চতুর্দিকে ইসলামের নামে নারীর প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন আর অধিকার হরণের যে করুণ চিত্র, তা আসলে কুরআন-সুন্নাহর সেই উজ্জ্বল শিক্ষার সাথে কতটা সাংঘর্ষিক? আসুন, ধুলোমলিন হয়ে যাওয়া সেই মূল দলিলগুলোর আলোকে ফিরে যাই। খুঁজে বের করি ইসলামে মহিলাদের অধিকার-এর প্রকৃত রূপরেখা, যা শুধু অতীতের গৌরব নয়, বর্তমানের জটিলতায়ও সমাধানের আলোকবর্তিকা।

    ইসলামে মহিলাদের অধিকার

    • ইসলামে মহিলাদের অধিকার: কুরআনিক ভিত্তি ও মৌলিক স্বীকৃতি
    • সুন্নাহর আলোকে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও সামাজিক ভূমিকা
    • ইসলামী দৃষ্টিকোণে নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক অবস্থান
    • সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা ও অপব্যাখ্যার জবাব
    • বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইসলামে নারীর অধিকার বাস্তবায়নের পথ ও চ্যালেঞ্জ

    ইসলামে মহিলাদের অধিকার: কুরআনিক ভিত্তি ও মৌলিক স্বীকৃতি

    কুরআনুল কারিম নারী-পুরুষ উভয়কেই সমানভাবে ‘ইনসান’ বা মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের মৌলিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি কোনো রূপকথা বা আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়; বরং সুস্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে ঘোষিত সত্য। সূরা নিসার ১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন: “হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি (আদম) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকেই তার জোড়া (হাওয়া) সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের দু’জন থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী…”। এই আয়াত নারী-পুরুষের উৎসগত সমতার চূড়ান্ত ঘোষণা। উভয়েই একই মানবীয় মর্যাদা ও সম্ভাবনা ধারণ করে। সূরা হুজুরাতের ১৩ নং আয়াতে এ সমতার ধারণা আরও সুস্পষ্ট: “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে এবং তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সেই সর্বাধিক মর্যাদাবান যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক তাকওয়াবান…”। এখানে মর্যাদার মানদণ্ড বর্ণ, লিঙ্গ বা জাতি নয়; বরং একমাত্র ‘তাকওয়া’ বা আল্লাহভীতি।

    কুরআন নারীকে তার ব্যক্তিসত্তা, আধ্যাত্মিকতা এবং চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিয়েছে স্বতঃসিদ্ধভাবে:

    • আধ্যাত্মিক সমতা: সূরা আলে ইমরানের ১৯৫ নং আয়াতে স্পষ্ট: “আমি কোনো পুরুষ ও নারীর আমল বিনষ্ট করি না। তোমরা একে অপরের অংশ…”। নারীর ইবাদত, দোয়া, আখিরাতের হিসাব-নিকাশ পুরুষের সমান গুরুত্বপূর্ণ। তার আত্মাও আল্লাহর দরবারে সমান মূল্যবান। রাসূল (সা.)-এর যুগে নারীরা সরাসরি বাইয়াত গ্রহণ করতেন, দ্বীন শিখতেন এবং জ্ঞান চর্চা করতেন, যা তাদের পূর্ণ ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দেয়।
    • আর্থিক অধিকার ও মালিকানা: জাহিলি যুগে নারী নিজেই ছিল উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি। ইসলাম নারীকে স্বাধীন মালিকানা ও অর্থনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দান করে। সূরা নিসায় সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিস্তারিত বণ্টন প্রণালী উল্লেখ করা হয়েছে (আয়াত ৭, ১১, ১২, ১৭৬), যা নিশ্চিত করে নারী সম্পত্তির মালিক হবেন এবং তার ইচ্ছানুযায়ী তা ভোগ-ব্যবহার ও বিনিয়োগ করতে পারবেন। স্বামীর দেওয়া মহর তার একক অধিকার (সূরা নিসা: ৪)। তার উপার্জনও একান্তই তার নিজের (সূরা নিসা: ৩২)। এই আর্থিক স্বাধীনতা নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম ভিত্তি।
    • শিক্ষার অধিকার: “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ,” – এই বিখ্যাত হাদিসটি (ইবনে মাজাহ) নারী শিক্ষার গুরুত্বকে চিরন্তন করে দিয়েছে। কুরআন বারবার ‘ইলম’ বা জ্ঞান অর্জনের তাগিদ দিয়েছে, এবং তা শুধু পুরুষের জন্য নয়। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর মতো বিশাল জ্ঞানসম্পন্ন ফকিহা, মুহাদ্দিসা ও আলিমার উত্থানই ইসলামে নারী শিক্ষার প্রমাণ। রাসূল (সা.) নারীদের জন্য আলাদা শিক্ষাদিবসও নির্ধারণ করেছিলেন।
    • সম্মানজনক জীবন ও নিরাপত্তা: ইসলাম নারীর শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সূরা নিসার ১৯ নং আয়াতে নির্দেশ: “তোমরা নারীদের সাথে সদাচরণ কর…”। তাদের উপর জুলুম-অত্যাচার, শারীরিক নির্যাতন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম” (তিরমিজি)। নারীর সম্মান ও ইজ্জত রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। তার গোপনীয়তা ও ব্যক্তিগত সীমানার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, নারী নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০২০ ইসলাম প্রদত্ত নারীর নিরাপত্তার অধিকারকেই আইনী কাঠামোয় রূপ দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

    এই কুরআনিক অধিকারগুলোর সারমর্ম হলো: ইসলাম নারীকে পুরুষের সমকক্ষ, পূর্ণাঙ্গ মানবিক সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তার আধ্যাত্মিক মূল্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা, আর্থিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার অলঙ্ঘনীয়। এই অধিকারগুলো দান করা হয়েছে ‘অনুগ্রহ’ হিসেবে নয়; বরং নারীর মানবিক মর্যাদার স্বাভাবিক ও অপরিহার্য প্রকাশ হিসেবে। এই ভিত্তির উপরেই দাঁড়িয়ে আছে ইসলামে নারীর অন্যান্য সকল অধিকার ও দায়িত্বের কাঠামো।

    সুন্নাহর আলোকে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও সামাজিক ভূমিকা

    রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনচরিত ও বাণী (সুন্নাহ) কুরআনের বিমূর্ত নীতিকে জীবন্ত, প্রাণবন্ত ও বাস্তব রূপ দান করেছে। ইসলামে মহিলাদের অধিকার শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং মদিনার সমাজে তা প্রত্যক্ষভাবে প্রতিষ্ঠিত ও অনুশীলিত হয়েছে। রাসূল (সা.) ছিলেন নারীর মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তার সর্বোত্তম রক্ষক ও প্রচারক।

    • ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে মর্যাদা: রাসূল (সা.) নিজ পরিবার ও সাহাবিয়াদের সাথে তার আচরণে নারীর অপরিসীম মর্যাদা স্থাপন করেছেন।
      • স্ত্রীদের প্রতি আচরণ: তিনি খাদিজা (রা.)-এর প্রতি তার গভীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা বারবার প্রকাশ করেছেন। আয়েশা (রা.)-এর সাথে তার হাসি-ঠাট্টা, আলোচনা, জ্ঞানচর্চা এবং তার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা (যেমন হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়) স্ত্রীর সাথে সঙ্গীর মতো সম্পর্কের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেছেন: “পুরুষদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার সে, যে স্বভাব-চরিত্রে সর্বোত্তম। আর তোমাদের মধ্যে তারাই স্বভাব-চরিত্রে সর্বোত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম” (তিরমিজি)। তিনি কখনোই কোন স্ত্রীকে শারীরিকভাবে আঘাত করেননি।
      • কন্যাদের প্রতি ভালোবাসা: ফাতিমা (রা.)-এর প্রতি তার স্নেহ, মমতা ও সম্মান ছিল প্রবাদপ্রতিম। তিনি বলতেন: “ফাতিমা আমার অংশ। যে তাকে কষ্ট দেয় সে আমাকে কষ্ট দেয়” (বুখারি, মুসলিম)। তিনি কন্যাসন্তানকে ‘রহমত’ ও ‘জান্নাতের দরজা’ বলে অভিহিত করেছেন (ইবনে মাজাহ)।
      • মায়ের মর্যাদা: ইসলামে মায়ের মর্যাদাকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে। এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, সবার সাথে সদাচরণের ক্ষেত্রে কে সর্বাধিক হকদার? তিনি তিনবার বললেন: “তোমার মা”, চতুর্থবার বললেন: “তোমার বাবা” (বুখারি, মুসলিম)। এখানে নারীর মাতৃত্বের ভূমিকাকে অসামান্য সম্মান দেওয়া হয়েছে।
    • সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে অংশগ্রহণ: রাসূল (সা.)-এর সময় নারীরা গৃহের চার দেয়ালের বাইরেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন:
      • জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানদান: রাসূল (সা.)-এর স্ত্রীগণ, বিশেষ করে আয়েশা (রা.), হাদিস বর্ণনা, ফিকাহ শাস্ত্রে ফতোয়া প্রদান এবং সাহাবাদের শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। উম্মে ওয়ারাকা (রা.)-কে তিনি তার এলাকার ইমামতি করার অনুমতি দিয়েছিলেন। মসজিদে নববীতে নারীরা নামাজ আদায় করতেন এবং রাসূল (সা.)-এর খুতবা শুনতেন। তিনি নারীদের ধর্মীয় প্রশ্নের জবাব দিতেন এবং তাদের জন্য আলাদা সময়ও বরাদ্দ রাখতেন।
      • বাইয়াত ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ: আকাবার দ্বিতীয় বাইয়াতে মদিনার নারীরাও অংশ নিয়েছিলেন। তারা ইসলাম গ্রহণ করে রাসূল (সা.)-এর হাতে বাইয়াত করেছিলেন। এটা ছিল নারীর ধর্মীয় ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতার প্রমাণ।
      • যুদ্ধক্ষেত্রে ভূমিকা: উম্মে আম্মারা (রা.), নুসাইবা বিনতে কাব (রা.) প্রমুখ সাহাবিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে মুজাহিদদের পানি পান করানো, আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করা এবং প্রয়োজনে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্ব প্রদর্শন করেছেন। এটি নারীর সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রমাণ করে।
    • বিবাহ, তালাক ও ভরণ-পোষণে অধিকার: সুন্নাহ নারীর পারিবারিক অধিকারগুলোকে সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত করেছে।
      • ইচ্ছা ও সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহ: রাসূল (সা.) বলেছেন: “বিধবা নারীর বিয়ে তার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, আর কুমারী মেয়ের বিয়ে তার অনুমতি সাপেক্ষে” (বুখারি, মুসলিম)। জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ। খায়বার যুদ্ধে বন্দী এক নারী তার ইসলাম গ্রহণ ও বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করলে রাসূল (সা.) তার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে তাকে মুক্ত করে বিবাহ দেন।
      • মহরের গুরুত্ব: মহর নারীর একক ও অবশ্যপ্রদেয় অধিকার। রাসূল (সা.)-এর যুগে উচ্চ মহর প্রদানের প্রচুর নজির আছে। তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি মহর ধার্য না করে স্ত্রীকে বিয়ে করল, তার মৃত্যু হলে স্ত্রী তার ন্যায্য মহর পাবে” (দারুকুতনি)।
      • তালাকের অধিকার (খুলা): যদি স্ত্রী স্বামীর সাথে জীবনযাপন করতে অক্ষম বা অসন্তুষ্ট হয়, ইসলাম তাকে ‘খুলা’ বা বিচ্ছেদের অধিকার দিয়েছে। সে আদালতের মাধ্যমে এই অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। আয়েশা (রা.) থাবিত ইবনে কায়েসের স্ত্রীকে খুলার প্রক্রিয়া শিখিয়েছিলেন।
      • ভরণ-পোষণের দায়িত্ব: স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষের উপর স্ত্রী/মহিলা আত্মীয়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ইসলাম সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করেছে। এটি নারীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

    সুন্নাহর শিক্ষা স্পষ্ট করে: ইসলামে নারীকে দুর্বল, পরনির্ভরশীল বা গৃহবন্দী সত্তা হিসেবে দেখা হয়নি। রাসূল (সা.)-এর অনুশীলন প্রমাণ করে নারী শিক্ষা গ্রহণে, ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে, সামাজিক দায়িত্ব পালনে এবং এমনকি জাতীয় প্রয়োজনে (যুদ্ধসেবা, চিকিৎসা ইত্যাদি) সক্রিয় ও মর্যাদাশীল ভূমিকা রাখতে পারেন। তার মতামতের মূল্য আছে, তার সম্মতির গুরুত্ব আছে এবং তার নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করা সমাজের কর্তব্য। সুন্নাহর এই দৃষ্টান্তগুলোই ইসলামে মহিলাদের অধিকার-এর বাস্তব ও প্রাণবন্ত রূপ।

    ইসলামী দৃষ্টিকোণে নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক অবস্থান

    ইসলাম নারীর অর্থনৈতিক অধিকারকে তার সামগ্রিক মর্যাদা ও স্বাধীনতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জাহিলি যুগে নারী নিজেই ছিল সম্পত্তি; ইসলাম তাকে সম্পত্তির মালিক বানিয়েছে এবং তার আর্থিক কার্যকলাপের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। এই স্বাধীনতা তাকে সামাজিকভাবে শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করে তোলে।

    • উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির অধিকার: এটি ইসলামের অন্যতম বৈপ্লবিক সংস্কার। সূরা নিসায় (আয়াত ৭, ১১, ১২, ১৭৬) আল্লাহ তায়ালা নারীদের জন্য সম্পত্তির নির্দিষ্ট অংশ সুনির্দিষ্টভাবে বণ্টন করেছেন। কন্যা, স্ত্রী, মাতা, বোন – প্রত্যেকেরই অবস্থানভেদে সুনির্দিষ্ট অংশের অধিকার রয়েছে। পুরুষ সাধারণত নারীর চেয়ে দ্বিগুণ পায়, এর পেছনে যুক্তি হলো পুরুষই পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব (মহর, ভরণপোষণ, সন্তান লালনপালন ইত্যাদি) প্রধানত বহন করে। কিন্তু নারীর প্রাপ্ত অংশ একান্তই তার নিজস্ব, যা সে নিজ ইচ্ছায় ভোগ, ব্যবহার বা বিনিয়োগ করতে পারে। তার উপর কারো ভরণপোষণের দায় নেই। বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন (১৯৬১) এই কুরআনিক উত্তরাধিকার নীতিকেই আইনি রূপ দিয়েছে, যদিও বাস্তবে প্রায়শই নারীরা তাদের আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ অপরিহার্য।
    • স্বাধীনভাবে উপার্জন ও মালিকানার অধিকার: ইসলাম নারীকে তার শ্রম, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ বা অন্য যে কোন বৈধ পন্থায় উপার্জন করার পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। সূরা নিসার ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে: “পুরুষ যা অর্জন করে তা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার অংশ…”। তার উপার্জিত সম্পদে স্বামী, পিতা বা ভাইয়ের কোন স্বতঃসিদ্ধ অধিকার নেই। রাসূল (সা.)-এর স্ত্রী খাদিজা (রা.) ছিলেন সফলতম ব্যবসায়ী। সাহাবিয়ারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। নারী তার নিজের সম্পত্তি নিজেই পরিচালনা করতে পারে, বিক্রি করতে পারে, দান করতে পারে বা ওয়াকফ করতে পারে – কারো অনুমতির প্রয়োজন নেই। তার এই আর্থিক স্বাধীনতা তাকে পারিবারিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিকতর বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম করে।
    • মহর: নারীর আর্থিক নিরাপত্তার বুনিয়াদ: বিবাহের সময় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদেয় এই নির্ধারিত পরিমাণ ধন-সম্পদ বা অর্থ নারীর একক, অবশ্যপ্রদেয় ও অলঙ্ঘনীয় অধিকার (সূরা নিসা: ৪)। এটি তার ভবিষ্যতের জন্য একটি আর্থিক নিরাপত্তা বলয়। মহর তৎক্ষণাৎ পরিশোধযোগ্য (মুয়াজ্জাল) বা পরবর্তীতে পরিশোধযোগ্য (মুয়াখখার) হতে পারে। রাসূল (সা.) মহর পরিশোধে গুরুত্ব দিতেন এবং উচ্চ মহর নির্ধারণের উদাহরণও প্রচুর আছে। মহরের অধিকার নারীর মর্যাদার প্রতীক এবং তার স্বাধীন ইচ্ছার স্বীকৃতি।
    • ভরণপোষণ (নাফাকা): স্বামীর উপর স্ত্রীর এবং পিতা/অভিভাবকের উপর অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যা ও অন্যান্য মহিলা নির্ভরশীল আত্মীয়ের (যেমন বিধবা মাতা, অবিবাহিতা বোন) ভরণপোষণের দায়িত্ব ইসলাম সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় জীবনযাত্রার খরচ অন্তর্ভুক্ত। এই দায়িত্ব পালন করা স্বামী বা অভিভাবকের উপর ফরজ। এটি নারীকে আর্থিক দুর্ভাবনা থেকে মুক্ত রেখে তার মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ দেয়।

    ইসলামের অর্থনৈতিক বিধান নারীকে দান করে:

    1. মালিকানার স্বাধীনতা: তার উপার্জন ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদে তার পূর্ণ মালিকানা।
    2. ব্যবস্থাপনার স্বাধীনতা: তার সম্পদ নিজ ইচ্ছায় ভোগ, বিনিয়োগ বা দান করার অধিকার।
    3. নিরাপত্তা বলয়: মহর ও নাফাকার মাধ্যমে তার বর্তমান ও ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
    4. সামাজিক মর্যাদা: আর্থিক স্বচ্ছলতা ও স্বাধীনতা তাকে সামাজিকভাবে সম্মানিত ও ক্ষমতাশালী করে তোলে।

    এই বিধানগুলো অনুসরণ করলে নারী কখনোই অর্থনৈতিকভাবে অসহায় বা পরনির্ভরশীল হবেন না। সমস্যা দেখা দেয় যখন সমাজে প্রচলিত কুপ্রথা, অজ্ঞতা বা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নারীকে তার এই আল্লাহপ্রদত্ত অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করে। তাই কুরআন-সুন্নাহর এই শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও বাস্তবায়ন ইসলামে মহিলাদের অধিকার রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

    সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা ও অপব্যাখ্যার জবাব

    ইসলামে মহিলাদের অধিকার নিয়ে আজও সমাজে অনেক ভুল ধারণা, কুসংস্কার ও ইচ্ছাকৃত অপব্যাখ্যা বিদ্যমান। এসবের কারণে ইসলামের প্রকৃত ন্যায়নিষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বিকৃত হয় এবং নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। আসুন কিছু প্রচলিত ভুল ধারণার জবাব কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জেনে নিই:

    • “ইসলাম নারীকে ঘরে বন্দী করে রেখেছে” / “নারীর কাজ শুধু সন্তান লালন-পালন ও রান্নাবান্না”:
      • প্রকৃত অবস্থা: ইসলাম নারীকে গৃহকর্মের মর্যাদা দিয়েছে সত্য, কিন্তু তাকে গৃহবন্দী করেনি। রাসূল (সা.)-এর যুগে নারীরা মসজিদে যেতেন, জ্ঞানার্জন করতেন, যুদ্ধক্ষেত্রে সেবা দিতেন, ব্যবসা করতেন (খাদিজা (রা.)), এমনকি ধর্মীয় জিজ্ঞাসার জবাব দিতেন (আয়েশা (রা.))। কুরআন নারী-পুরুষ উভয়কে ‘খলিফা’ বা পৃথিবীর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে (সূরা বাকারা: ৩০), যা শুধু ঘরের ভেতরের দায়িত্বে সীমাবদ্ধ নয়। নারীর জন্য ঘরের বাইরে বৈধ পেশায় নিয়োজিত হওয়া, শিক্ষা অর্জন করা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া সম্পূর্ণ জায়েজ, যদি তা শরিয়তের সীমানার মধ্যে থেকে তার মৌলিক দায়িত্ব (যেমন সন্তানের হক) ক্ষুণ্ণ না করে এবং শরিয়তসম্মত পর্দা ও শালীনতা বজায় থাকে। পর্দা মানে অবরোধ নয়, বরং সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য নির্দিষ্ট আচরণবিধি। [আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনায় নারীর সামাজিক ভূমিকা অংশটি দেখুন]
    • “পুরুষের একাধিক বিয়ে ইসলাম নারীর প্রতি অবিচার” :
      • প্রকৃত অবস্থা: ইসলাম বহুবিবাহকে ‘অনুমোদন’ দিয়েছে, ‘অবশ্য পালনীয়’ করেনি। সূরা নিসার ৩ নং আয়াতে শর্তসাপেক্ষে একসাথে সর্বোচ্চ চারটি বিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সাথে সাথেই সতর্ক করা হয়েছে: “তবে যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকেই…”। ন্যায়বিচার শুধু আর্থিক নয়, আবেগিক ও সময়ের বণ্টনেও। রাসূল (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তির দু’জন স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা করে না, কিয়ামতের দিন তার অর্ধেক দেহ পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় উঠবে” (আবু দাউদ, তিরমিজি)। বাস্তবে এই কঠিন শর্ত পূরণ করা প্রায় অসম্ভব। তাই ইসলামী স্কলারদের বিশাল অংশ মনে করেন, সাধারণ অবস্থায় এক বিবাহই উত্তম ও কাম্য। বহুবিবাহের এই অনুমতি নির্দিষ্ট সামাজিক প্রেক্ষাপটে (যেমন যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক পুরুষের মৃত্যু, নারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, তাদের ভরণপোষণ ও সম্মানের প্রয়োজন) একটি সমাধান হিসেবে দেওয়া হয়েছিল, যা ব্যতিক্রমী ও শর্তসাপেক্ষ। এটি নারীকে অবমূল্যায়ন করে না, বরং বিশেষ পরিস্থিতিতে তার নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার একটি ব্যবস্থা।
    • “ইসলামে নারীর সাক্ষ্য পুরুষের অর্ধেক” :
      • প্রকৃত অবস্থা: এটি একটি মারাত্মক অপব্যাখ্যা। ইসলামে সাক্ষ্যের মূল্য নির্ভর করে বিষয়বস্তুর উপর, লিঙ্গের উপর নয়। সূরা বাকারার ২৮২ নং আয়াতে শুধুমাত্র দেনা-পাওনা ও ঋণের লেনদেনের ক্ষেত্রে (যা সাধারণত পুরুষের সাথে জড়িত ছিল এবং এর জটিল বিবরণ মনে রাখার প্রয়োজন হতো) দু’জন পুরুষ সাক্ষী অথবা একজন পুরুষ ও দু’জন নারী সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে: “যদি তাদের একজন ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেবে…”। এটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নারীর আর্থিক লেনদেনে অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে একটি ব্যবহারিক নির্দেশনা, নারীর মৌলিক অক্ষমতা নয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেমন বিবাহ, তালাক, ওলী নিযুক্তি, অপরাধের সাক্ষ্য ইত্যাদিতে নারীর সাক্ষ্য পুরুষের সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং একজনের সাক্ষ্যই যথেষ্ট হতে পারে (যেমন হাদিসে বর্ণিত, বিবাহে নারীর সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা)। আয়েশা (রা.) সহ অসংখ্য সাহাবিয়া হাদিস বর্ণনা করেছেন যা পুরো উম্মাহ গ্রহণ করে।
    • “ইসলাম নারীকে শিক্ষা থেকে বিরত রাখে” :
      • প্রকৃত অবস্থা: এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ধারণা। রাসূল (সা.) স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন: “জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ” (ইবনে মাজাহ)। কুরআন বারবার জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দিয়েছে। উম্মুল মুমিনিনগণ, সাহাবিয়াগণ জ্ঞানচর্চায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। আয়েশা (রা.) ছিলেন হাদিস, ফিকাহ, তাফসীর ও কবিতায় পণ্ডিত। নারীদের ধর্মীয় ও পার্থিব উভয় প্রকার জ্ঞান অর্জনের পূর্ণ অধিকার ইসলাম দিয়েছে। বরং শিক্ষাই নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার। বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বে নারী শিক্ষার অগ্রগতিই এর প্রমাণ, যদিও এখনও অনেক পথ যেতে হবে।

    এই অপব্যাখ্যাগুলোর উৎস প্রায়শই: স্থানীয় সংস্কৃতি, কুপ্রথা, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, ইসলামী জ্ঞানের অভাব এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের নামে নারীর অধিকার হরণের চেষ্টা। তাই ইসলামে মহিলাদের অধিকার-এর প্রকৃত রূপ বুঝতে হলে কুরআন-সুন্নাহর মূল উৎসের দিকে ফিরে যাওয়া এবং প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা (তাফসীর ও বিশুদ্ধ হাদিস) অধ্যয়ন করা অপরিহার্য। সমাজে প্রচলিত রীতিনীতিকে ইসলামের বিধান বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা পরিহার করতে হবে।

    বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইসলামে নারীর অধিকার বাস্তবায়নের পথ ও চ্যালেঞ্জ

    কুরআন ও সুন্নাহয় বর্ণিত ইসলামে মহিলাদের অধিকার-এর উজ্জ্বল দিকনির্দেশনা সত্ত্বেও, বাস্তবতা প্রায়শই ভিন্ন ও বেদনাদায়ক। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সমাজে নারীদের উপর নির্যাতন, বৈষম্য, অধিকার হরণ ও মর্যাদাহানীর ঘটনা লেগেই আছে। এই বিস্তর ফারাকের কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং ইসলামের আলোকে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা জরুরি।

    • প্রধান বাধাসমূহ:
      • অজ্ঞতা ও ভুল ব্যাখ্যা: সমাজের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে নারীরা নিজেরাই ইসলাম প্রদত্ত তাদের অধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিফহাল নয়। স্থানীয় প্রথা, কুসংস্কার ও অর্ধসত্যকে ইসলামী বিধান বলে ধরে নেওয়া হয়। পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যাই প্রাধান্য পায়।
      • সাংস্কৃতিক প্রভাব ও কুপ্রথা: ইসলামের আগে থেকে চলে আসা নারীকে হেয়জ্ঞানকারী প্রথা ও সংস্কৃতি (যেমন পণপ্রথা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারীর উত্তরাধিকার হরণ, ‘সম্মান রক্ষার্থে’ হত্যা ইত্যাদি) ইসলামী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও সমাজে গেঁড়ে বসে আছে। অনেক সময় ধর্মের নামে এসবের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হয়।
      • অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা: শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাবে অনেক নারী অর্থনৈতিকভাবে পুরুষের উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা তাদেরকে নিজের অধিকার দাবি করতে ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহসহীন করে তোলে।
      • আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও সচেতনতার অভাব: বাংলাদেশে নারী অধিকার রক্ষার বেশ কিছু আইন থাকলেও (যেমন: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, যৌতুক নিরোধ আইন, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ), এসব আইনের সঠিক প্রয়োগ, ভুক্তভোগীর কাছে সহজগম্যতা এবং সামাজিক সচেতনতার অভাব রয়েছে। মামলা দীর্ঘসূত্রিতা, সামাজিক চাপ, ভয়ভীতি নারীকে আইনের আশ্রয় নিতে নিরুৎসাহিত করে। বাংলাদেশের জাতীয় মহিলা সংস্থা নারী অধিকার বিষয়ে তথ্য ও সহায়তা প্রদান করে থাকে।
      • ধর্মীয় নেতৃত্বে নারীর স্বল্প প্রতিনিধিত্ব: ধর্মীয় ব্যাখ্যা প্রদান, ফতোয়া দেওয়া, মাদ্রাসা ও মসজিদ পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব এখনও নগণ্য। এর ফলে নারীর দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা ধর্মীয় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় না।
    • সমাধানের পথ:
      • জ্ঞানার্জন ও সচেতনতা বৃদ্ধি: নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ইসলামের সঠিক শিক্ষা, বিশেষ করে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সংক্রান্ত কুরআনিক আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদিসের জ্ঞান অপরিহার্য। মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। নারীদের নিজেদেরই তাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে এবং সোচ্চার হতে হবে।
      • ধর্মীয় শিক্ষায় সংস্কার: ধর্মীয় শিক্ষাক্রমে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও ভূমিকা সম্পর্কিত ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। স্থানীয় সংস্কৃতি ও কুপ্রথাকে ইসলাম থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে হবে। নারী আলিমা ও ধর্মীয় বক্তাদের সংখ্যা ও ভূমিকা বাড়াতে হবে। [ইসলামে নারীর শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের পূর্বের আলোচনা দেখুন]
      • আইনের শক্তিশালী প্রয়োগ ও সহায়তা: নারী অধিকার সংক্রান্ত আইনগুলোর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সহজে ও দ্রুত বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা, আইনি সহায়তা প্রদান, থানা-আদালতে নারী ফ্রেন্ডলি পরিবেশ সৃষ্টি এবং ভুক্তভোগীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
      • নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: নারী শিক্ষা ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন নিশ্চিত করতে হবে। আর্থিক স্বাধীনতা নারীর আত্মবিশ্বাস ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায়।
      • পুরুষদের সম্পৃক্ততা: নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা শুধু নারীর বিষয় নয়, পুরুষেরও দায়িত্ব। সমাজের পুরুষদের, বিশেষ করে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ইসলামে নারীর অধিকার সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলা এবং নারীর প্রতি সম্মান, সদাচরণ ও তার অধিকার আদায়ে সহায়তা করার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম”।

    ইসলামে মহিলাদের অধিকার-এর আলোকিত রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সরকার, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক, সুশীল সমাজ, পরিবার এবং সর্বোপরি প্রতিটি নারী ও পুরুষের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নারীর প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠাই হবে একটি সুন্দর, ন্যায়পরায়ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি।

    জেনে রাখুন

    • ইসলামে নারীর সম্পত্তির অধিকার কী?
      ইসলাম নারীকে সম্পত্তির মালিকানা, ভোগদখল ও ব্যবস্থাপনার পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। কুরআনের সূরা নিসায় (আয়াত ৭, ১১, ১২, ১৭৬) মা, কন্যা, স্ত্রী, বোন প্রমুখ আত্মীয়ার জন্য নির্দিষ্ট অংশ উত্তরাধিকার সূত্রে বণ্টন করা হয়েছে। নারীর উপার্জনও একান্তই তার নিজস্ব (সূরা নিসা: ৩২)। স্বামী, পিতা বা ভাইয়ের তার সম্পত্তিতে অনুমতি ছাড়া হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইনও এই অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।
    • কোন আয়াতে ইসলাম নারী-পুরুষের আধ্যাত্মিক সমতা ঘোষণা করে?
      সূরা আলে ইমরানের ১৯৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ঘোষণা করেন: “আমি কোনো পুরুষ ও নারীর আমল বিনষ্ট করি না। তোমরা একে অপরের অংশ…”। সূরা নাহলের ৯৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, নারী-পুরুষ উভয়েই সৎকর্মশীল হলে তাদেরকে পবিত্র জীবন দান করা হবে এবং তাদেরকে তাদের কর্মের উত্তম প্রতিদান দেওয়া হবে। এতে তাদের আমলের মূল্যায়নে কোনো পার্থক্য করা হয়নি।
    • ইসলামে নারীর শিক্ষা গ্রহণ কি ফরজ?
      হ্যাঁ, ইসলাম নারী শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। একটি বিশুদ্ধ হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ” (ইবনে মাজাহ)। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) ছিলেন প্রসিদ্ধ আলিমা ও মুহাদ্দিসা। রাসূল (সা.) নারীদের জন্য আলাদা জ্ঞানার্জনের দিনও নির্ধারণ করেছিলেন। ধর্মীয় ও পার্থিব উভয় প্রকার জ্ঞান অর্জন নারীর অধিকার।
    • মহরের গুরুত্ব ইসলামে কতটুকু?
      মহর ইসলামে নারীর একক, অবশ্যপ্রদেয় ও অলঙ্ঘনীয় অধিকার (সূরা নিসা: ৪)। এটি বিবাহের একটি আবশ্যিক শর্ত ও স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্বের প্রথম নিদর্শন। মহর স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রতীক। রাসূল (সা.) মহর পরিশোধে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এটি তৎক্ষণাৎ (মুয়াজ্জাল) বা ভবিষ্যতে (মুয়াখখার) পরিশোধযোগ্য হতে পারে, তবে পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক।
    • ইসলাম কি নারীকে তালাকের অধিকার দেয়?
      হ্যাঁ, ইসলাম নারীকে তালাকের অধিকার দিয়েছে, যদিও তা পুরুষের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। যদি স্ত্রী স্বামীর সাথে জীবনযাপন করতে অসমর্থ হয় বা অসন্তুষ্ট থাকে, তবে সে আদালতের মাধ্যমে ‘খুলা’ বা বিচ্ছেদ চাইতে পারে। খুলার জন্য সাধারণত স্ত্রীকে মহরের অংশ বা অন্য কিছু ফেরত দিতে হতে পারে। তবে ন্যায়সঙ্গত কারণ থাকলে আদালত তার পক্ষে রায় দিতে পারে। ইসলামে খুলাকে বৈধ করা হয়েছে যাতে অসহনীয় সম্পর্কে নারীও মুক্তি পেতে পারে।
    • সুন্নাহতে নারীর সামাজিক ভূমিকার উদাহরণ কী?
      সুন্নাহয় নারীর সক্রিয় সামাজিক ভূমিকার অসংখ্য উদাহরণ আছে: উম্মুল মুমিনিন খাদিজা (রা.) সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। আয়েশা (রা.) জ্ঞান চর্চা করে ফকিহা ও মুহাদ্দিসা হয়েছিলেন এবং সাহাবাদের শিক্ষা দিতেন। উম্মে ওয়ারাকা (রা.) তার এলাকার ইমামতি করার অনুমতি পেয়েছিলেন। উম্মে সালামা (রা.) রাজনৈতিক পরামর্শ দিয়েছেন। উম্মে আম্মারা (রা.), নুসাইবা বিনতে কাব (রা.) প্রমুখ সাহাবিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে সেবা দিয়েছেন এবং যুদ্ধও করেছেন। এগুলো প্রমাণ করে ইসলাম নারীকে গৃহের বাইরেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করে।

    ইসলামে মহিলাদের অধিকার নিয়ে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এই গভীর অনুসন্ধান এক অমূল্য সত্যকে আমাদের সামনে উদ্ভাসিত করে: ইসলাম নারীকে শুধু অধিকারই দেয়নি, দিয়েছে অপরিসীম মর্যাদা, পূর্ণাঙ্গ মানবিক স্বীকৃতি এবং সমাজে তার অবদান রাখার সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট। মরুভূমির বর্বরতাকে ভেদ করে যে আলোকরশ্মি এসেছিল, তা নারীকে জীবন্ত কবর থেকে তুলে এনে দিয়েছিল সৃষ্টির সেরা জীবের আসন। উত্তরাধিকারে তার নির্দিষ্ট অংশ, তার নিজস্ব সম্পত্তি ও উপার্জনে পূর্ণ মালিকানা, স্বামীর পক্ষ থেকে মহর ও ভরণপোষণের নিশ্চয়তা, জ্ঞানার্জনের ফরজ বিধান, বিবাহে তার সম্মতির গুরুত্ব, আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে পুরুষের সমান মর্যাদা – এগুলো কোনো সাময়িক ছাড় নয়; এগুলো তার সৃষ্টিগত হকের স্বীকৃতি। রাসূল (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি অঙ্গীকার, প্রতিটি আচরণ ছিল নারী মর্যাদার জ্বলন্ত প্রমাণ। অথচ আজ, যখন আমরা চারিদিকে ইসলামের নামে নারীর প্রতি অবিচার, নির্যাতন আর অধিকার হরণের করুণ দৃশ্য দেখি, তা মূলত ইসলামের সেই উজ্জ্বল শিক্ষার সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা। এই ফারাক পূরণের দায়িত্ব আমাদের সবার। কুরআন-সুন্নাহর এই মহান শিক্ষাকে নিজে জানতে হবে, পরিবারে-সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, মেয়েদের শিক্ষিত ও সচেতন করে তুলতে হবে এবং নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আসুন, আমরা ইসলামের সেই আসল রূপরেখায় ফিরে যাই, যেখানে নারী-পুরুষ পরস্পরের পোশাক, পরস্পরের রক্ষক, একে অপরের পরিপূরক – যার ভিত্তি সম্মান, ন্যায়বিচার ও আল্লাহভীতি। ইসলামে মহিলাদের অধিকার কুরআন-সুন্নাহর আলোকে অনুসন্ধান করে জানুন, বুঝুন এবং প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলুন – একটি ন্যায়ভিত্তিক ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে।

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    islamic feminism quran and women sunnah and women women rights in islam in bangla অধিকার অবস্থা অমূল্য আইন আলোকে ইসলাম ইসলামিক উইমেন রাইটস ইসলামী পারিবারিক আইন ইসলামে ইসলামে জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি ইসলামে নারীর অধিকার ইসলামে নারীর ভূমিকা ইসলামে নারীর মর্যাদা ইসলামে মহিলাদের অধিকার ও নারীবাদ কুরআন-সুন্নাহর কুরআনে নারী অধিকার ক্ষমতায়ন খুলা দৃষ্টিভঙ্গি ধর্ম ধর্মগ্রন্থ নাফাকা নারী উত্তরাধিকার ইসলাম নারী ক্ষমতায়ন ইসলাম নারী ভরণপোষণ নারী শিক্ষা ইসলাম নৈতিকতা বাঙালি মুসলিম নারী বাংলাদেশে নারী অধিকার মর্যাদার মহর ইসলাম মহিলাদের মহিলার অধিকার শিক্ষা সভ্যতা, সমতা সামাজিক স্থান স্বীকৃতি হাদিসে নারী অধিকার
    Related Posts
    গুনাহ মাফ

    শুক্রবার যে আমল করলে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়

    August 1, 2025
    নামাজে খুশু-খুজু বাড়ানোর গুরুত্ব

    নামাজে খুশু-খুজু বাড়ানোর গুরুত্ব ও করণীয়

    July 25, 2025
    মরদেহের কিছু অংশ

    মরদেহের কিছু অংশ পাওয়া গেলে কি জানাজা পড়তে হবে?

    July 22, 2025
    সর্বশেষ খবর
    Indian-Garments

    বাংলাদেশের শুল্ক কমানোর দিনই ভারতের পোশাক বাজারে শেয়ার ধস

    F-35 fighter jet

    যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে অস্বীকৃতি ভারতের

    Rani

    জাতীয় পুরস্কার পেয়ে বিশ্বের সব মা’কে উৎসর্গ করলেন রানি

    Tollywood

    ‘বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহে’ কী বলছেন ছোট পর্দার নতুন মায়েরা?

    Pangash

    ২৫ কেজির পদ্মার পাঙাশ বিক্রি হলো সাড়ে ৫৭ হাজারে

    Malaysia

    শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশিদের জন্য আবারও উন্মুক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

    sarah jessica parker

    Sarah Jessica Parker Bids Emotional Farewell to Carrie Bradshaw as ‘Sex and the City’ Era Ends After 27 Years

    Pinaki

    বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে পিনাকীর স্ট্যাটাস ভাইরাল

    AirPods touchscreen case

    Apple’s Revolutionary AirPods Touchscreen Case Patent Unveils Turntable Connectivity

    Brazil's Risky Venezuela-Trump Strategy: Precedent Concerns

    US Brazil Tariffs: Lula’s Defiance Risks Venezuela-Style Economic Collapse

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.