জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের ই-কমার্স কোম্পানিগুলোতে লগ্নি করার আগে তা কতটা নিরাপদ হবে, তা সবাইকে ভেবে দেখারও পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
একের পর এক ই কমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহক ঠকানো ও প্রতারণার অভিযোগ আসতে থাকায় রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইভ্যালির মতো আরও কয়েকটা কোম্পানি মানুষের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। কীভাবে তারা তাদের কমিটমেন্ট পূরণ করবে এটা আমার এখন জানা নেই। আমরা মনে করি, তারা যে কমিটমেন্ট জনগণকে দিয়েছে, তা যদি পূরণ না করে, তবে আইন অনুযায়ী আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং করতেই হবে।’
গ্রাহকদেরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা এ ব্যাপারে লগ্নি করেন, ইনভেস্ট করেন, তার আগে বুঝে-শুনে করবেন…. আপনারা প্রতারিত যাতে না হন। আপনারা নিজে চিন্তা করবেন, এই যে প্রলোভন আপনাদের দেখাচ্ছে এটা বাস্তবসম্মত কি-না, প্রতারিত হওয়ায় সম্ভাবনা কি রকম সেটাও যেন যাচাই করে ইনভেস্ট করেন।’
গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল জানেন না, তিনি কবে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারবেন।
খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানিয়েছেন ইভ্যালির দেনা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ লাখ বলে দাবি তার।
সাইক্লোন অফার’, ‘আর্থকোয়াক অফার’, ‘ক্যাশব্যাক অফার’, ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’, ‘প্রায়োরিটি স্টোর অফার’ এর মাধ্যমে ইভ্যালি স্বল্পতম সময়ে গ্রাহক সংগ্রহ করেছে ইভ্যালি।
‘ঈদ অফার’, ‘বৈশাখী অফার’ এর পাশাপাশি ‘টি-টেন’, ‘টি-ফাইভ’, ‘ট্রি-থ্রি’সহ বিভিন্ন প্যাকেজও ঘোষণা করেছিল ইভ্যালি।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এসব লোভনীয় অফার সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করেছিল। বিশাল অফার, বিশাল ছাড়, ক্যাশব্যাক অফার দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষদের প্রলুব্ধ করতেন। যার ফলে দ্রুততম সময়ে তার বিশাল কাস্টমার হয়ে যায়। তার (রাসেলের) ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি ছিল, তৈরিকারক বা গ্রাহকদের চেইন নেটওয়ার্কের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।’
ইভ্যালি প্রসঙ্গে নানা আলোচনায় একপর্যায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের ই-কমার্স কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসার প্রচার কৌশলে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জড়িয়ে ফেলে তাদেরও বিপদে ফেলে দিয়েছে।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘ই-বিজনেস বলুন আর যেটাই বলুন, কতগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে- ইভ্যালি, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ… এর মধ্যে কীভাবে যেন আমাদের বেশ কয়েকজনের নামও জড়িত করে ফেলেছে। একজনের নাম তো বলতেই হয়- প্রখ্যাত নিউরো সার্জন এম আলী। তিনি তো আমার কাছে এসে কেঁদে কেঁদে বলেছেন, তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি (এম আলী) একজন প্রখ্যাত ডাক্তার। টেলিমেডিসিন কীভাবে প্রসার করা যায় সে বিষয়ে ধামাকার সঙ্গে তার আলাপ হয়েছিল। এখন তার নামটি ধামাকায় দিয়ে… সেই বেচারা বিপদেই পড়েছেন আমরা দেখছি।’
ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের মালিকরা ইতোমধ্যে গ্রাহকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সরকারের তদন্তে তাদের শত শত কোটি টাকার দেনায় থাকার তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি এই বার্তাটা দিতে চাই, যারা প্রতারণা করবেন তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে বের করবে, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা আমরা করব। কেউ যদি প্রতারণার উদ্দেশ্যে করেন। আমাদের কাছে খবর আসছে, এগুলো তদন্তে কমিটি কাজ করছে।” ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে এক মামলায় আসামি হওয়ার পর সোহেল রানা নামের একজন পুলিশ পরিদর্শক সম্প্রতি পালিয়ে গিয়ে ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তাকে দেশে ফেরানোর অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেগুলো সিস্টেম অনুযায়ী চলে আসবেই। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, যারা লোভনীয় মুনাফার কথা বলছেন, যে গাড়ির দাম ১০০ টাকা, বলছে ৫০ টাকায় দেবে, এগুলো বাস্তবসম্মত কি না, সেগুলো দেখে-শুনে আমরা ইনভেস্ট করার জন্য অনুরোধ করছি, যেন কেউ প্রতারিত না হয়।’
ই-কমার্সের অনুমোদন যারা দিচ্ছেন, তাদের দিক থেকে কোনো দুর্বলতা আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এটা জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমার কথা হল, যদি কেউ প্রতারণা করেন, আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যারা প্রতারিত হচ্ছেন, প্রতারণার শিকার হওয়ার আগেই বারবার চিন্তা করে ইনভেস্ট করবেন, এটা হল আমাদের রিকোয়েস্ট।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।