পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানি সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি ত্যাগের মাধ্যমে প্রকাশিত এক অনাবিল আনন্দের ভেলা। তারপরেও খুশির আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে আল্লাহর কাছে ত্যাগের মহিমা প্রদর্শন করে মুসলিম জাতি তাদের পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। কবি নজরুলের ভাষায় ‘তোরা ভোগের পাত্র ফেলরে ছুঁড়ে, ত্যাগের তরে হৃদয় বাঁধ’।
কোরবানি শব্দের উৎপত্তি গত অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, নিজেকে বিসর্জন, নৈকট্য লাভের চেষ্টা, অতিশয় নিকটবর্তী হওয়া প্রভৃতি। ধারাবাহিক ভাবে কারো কেনা বা কারো নিজের অত্যন্ত আদরের পোষা গরু, ছাগল উট দুম্বা আল্লাহর অশেষ রহমতের আশায় কুরবানি করবেন পূর্ণবান মুসলমানেরা।
কোরবানি করার মাধ্যমে আজ আল্লাহর কাছে নিজের সম্পদ সমর্পণ করে সকল বিপদ আপদ থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য প্রার্থনা করার দিন। গরিব অসহায় মানুষের মাঝে হাঁসি ফোটানোর দিন।
শুরু থেকেই বাড়ির কর্তারা এ হাট ও হাট ঘুরে পছন্দ করে মানানসই কোরবানির গরু কিনে ফেলেন। অনেকে আবার ঈদের আগের রাতেও গরু কেনেন। গরু কেনা হলেও তাদের বিশ্রাম নেই তেমন একটা। কোরবানির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কোরবানির পশুকে খাওয়ানো, ঈদের দিন গোসল করানো, কোরবানির পর মাংস কাটার জন্য অন্যান্য জিনিসের ব্যবস্থা করা।
অন্যদিকে কোরবানিকে ঘিরে পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির মহিলাদেরও যেন দম ফেলানোর সুযোগ নেই গৃহকামে। কাপড় ধোঁয়া, ঘর ধোঁয়া, ফ্রিজ পুরস্কার করা। কোরবানির মাংসের পাশাপাশি অন্যান্য সুস্বাদু খাবার দ্রুত রান্না করে পরিবারের মাঝে যা যা লাগে সব প্রস্তুত করে রেখে অনেক রাত লেগে গেলেও খুব সকাল বেলা ঈদের দিনে উঠে পড়েন তারা। ঈদের দিন তাদের কাছেও যেন ত্যাগ স্বীকার করে নিজেকে উজার করে দেওয়ার দিন।
বড়দের কাজে সাহায্য করতে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই কোরবানির জন্য রাখা গরুর গোসল করানো এবং নামাজের পর কোরবানির মাংস কাটায় অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে বাড়ির বেকার ছেলেটিও আজ খুশি।
এরই ফাঁকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর কমতি নেই মানুষের। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ঘরবন্দি এই সময়ে এসব প্ল্যাটফর্মইতো হয়ে উঠেছে উৎসবে আনন্দ ভাগাভাগির জায়গা।
বাড়ির ছোট সোনা মনিরাও মেতেছে ঈদ আনন্দে। তাদের কাছে ঈদ মানেই পরম তৃপ্তির আনন্দ। ঈদ মানেই নতুন জামাকাপড়, নতুন জুতা, আতর, সুরমা আর টুপির বাহারি ডিসপ্লে। ঈদ মানে দুই হাতে শখের মেহেদি লাগানো, সকাল বেলা নামাজ পড়ে এসে গরু জবাই করে সবাই মিলে আনন্দ করে মাংস কাটা, আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুদের মিলনমেলা, হৈ-হুল্লোড়, ঘুরে বেড়ানো, খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা।
করোনার প্রভাব ঈদ পালনের অনুষঙ্গ গুলোর ছন্দপতন ঘটাচ্ছে। কোরবানির ঈদে এবার সবাইকে গত বারের মত ঘুম থেকে উঠে পাঞ্জাবি পরে আতর সুরমা লাগিয়ে, মুখে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে যাবে। মসজিদে প্রবেশের আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ পড়তে হবে। নামাজ শেষেই শুরু হবে কোরবানির পালা। ছোট বড় সবাই মিলে এক সাথে বসে মাংস কাটার মজাই আলাদা।
সবশেষে মাংস ভাগ করে বাসায় নিয়ে গিয়েই শুরু হয়ে যাবে রান্না করার পালা। হরেক রকম মজাদার রান্না হবে আজ। বাদ যায় না কেউ এই অনাবিল আনন্দ থেকে। উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, ভবঘুরে কেন্দ্র ও এতিমখানায়।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন চালু রয়েছে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করেছেন অনেক মানুষ। যারা স্বাস্থ্যবিধি মান্য করে আশু বিপদের কথা ভেবে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তারা নতুন পোশাক কিনতে বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাত পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে জমিয়েছেন ভিড়।
ঈদের সময় যারা শহরে অবস্থান করে তাদের আনন্দের জন্য প্রতি বছরই নতুন করে সাজে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কের মতো বিনোদন কেন্দ্রগুলো। যেখানে ঈদের দিন থেকে টানা এক সপ্তাহ ভিড় জমান লাখো মানুষ। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এবারও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন ছেলে মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এসব বিনোদন কেন্দ্রে গিয়ে আনন্দ করতে। তার পরেও স্বাস্থ্যবিধি ডেঙিয়ে অনেকে প্রিয় জন কিংবা ফ্যামেলি নিয়ে ঠিকই যাবেন হাতিরঝিল কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। অনেক চাকরিজীবী কিংবা পড়ুয়া ছেলেরা যারা ঈদে বাড়িতে যেতে পারেন নি তারাও বন্ধু কিংবা বান্ধবী নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কিংবা লালবাগ কেল্লায় যাবেন আইসক্রিমের মুখে চুমুক দিতে। অনেকে আবার কয়েকজন বন্ধু মিলে ফাঁকা রাস্তায় বাইক নিয়ে নিজের বাহাদুরি দেখাতে মহরা দিবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।