সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোরবানির পশু কেনা ও তা নিয়ে ভিডিও বানানোর প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ভিডিওগুলো লক্ষ লক্ষ ভিউ পায় এবং অনেকেই এ নিয়ে আনন্দ ভাগ করে নেন। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখন ক্রমাগত উচ্চারিত হচ্ছে—ঈদুল আজহা ভিডিও বিতর্ক আসলেই কি ধর্মীয় শালীনতার পরিপন্থী?
Table of Contents
ঈদুল আজহা ভিডিও বিতর্ক: ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ
ইসলামে কোরবানি একটি অত্যন্ত পবিত্র ইবাদত, যার মূল শিক্ষা ত্যাগ, আত্মনিয়োগ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এই ইবাদতের সঙ্গে বিনোদন বা আত্মপ্রচারের কোনও সম্পর্ক নেই। তাই কেউ যদি কোরবানির পশুর ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করেন একান্ত পারিবারিক স্মৃতি হিসেবে, তবে তা অনেকটাই নির্ভর করে তার নিয়ত বা উদ্দেশ্যের ওপর।
তবে যদি সেই ভিডিওর মাধ্যমে কারও আত্মপ্রদর্শন, সম্পদের জৌলুস দেখানো কিংবা অন্যদের মধ্যে হীনমন্যতা সৃষ্টি হয়, তবে তা ইসলামি শালীনতার পরিপন্থী বলে বিবেচিত হতে পারে। অনেক আলেম বলেন, কোরবানি যেমন একটি গোপন সাদকার মতো ইবাদত, তেমনি তার প্রকাশ বা প্রচারেও সংযম থাকা উচিত।
ধর্মীয়ভাবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—’নিয়ত’। পবিত্র হাদিসে আছে, “কোনো কাজের মূল্যায়ন হয় নিয়ত অনুসারে।” কাজেই ভিডিও বানানো বা শেয়ার করা তখনই সমস্যার জন্ম দেয়, যখন তা আত্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে করা হয়।
তবে অনেকে যুক্তি দেন, সোশ্যাল মিডিয়া একটি যুগের বাস্তবতা এবং সেখানে কোরবানির শিক্ষা, পরিচ্ছন্নতা বা ধর্মীয় দিক তুলে ধরলে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার প্রক্রিয়া বা শিশুদের শেখানোর ভিডিও সমাজে সচেতনতা বাড়াতে পারে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি: ভারসাম্যের প্রয়োজন
বাংলাদেশের মতো সমাজে, যেখানে সামাজিক শ্রেণিবৈষম্য এখনও বিদ্যমান, সেখানে বড় গরু, উচ্চমূল্য পশু, বা বিলাসবহুল কোরবানির ভিডিও জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এটি একদিকে ঈদের আনন্দ কেড়ে নিতে পারে সমাজের দরিদ্র অংশের কাছ থেকে, অন্যদিকে ঈদের মূল শিক্ষা ‘সমতা ও সহমর্মিতা’ ক্ষুণ্ণ করে।
তরুণদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রবণতা বাড়ছে, যা একটি প্রজন্ম গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ভিডিও নির্মাণের সময় কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত:
- পশুর ওপর নিষ্ঠুরতা না দেখানো
- ধর্মীয় আবহ বজায় রাখা
- অন্যদের মধ্যে হীনমন্যতা বা বিভেদ তৈরি না হওয়া
- শিক্ষামূলক ও সচেতনতামূলক দিক তুলে ধরা
এই ভারসাম্য বজায় রেখে কোরবানির ইবাদত ও সামাজিক দায়িত্ব একত্রে পালন করা সম্ভব। খাবার বাঁচানোর উদ্যোগ বা পরিচ্ছন্নতা অভিযান প্রচারের মতোই সচেতনতা বাড়াতে কোরবানির ভিডিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
FAQs
কোরবানির পশুর ভিডিও বানানো কি হারাম?
না, হারাম নয়, তবে উদ্দেশ্য যদি আত্মপ্রচার, অহংকার বা হীনমন্যতা সৃষ্টি হয়, তবে তা ইসলামি শালীনতার পরিপন্থী।
শিক্ষামূলক ভিডিও কি অনুমোদিত?
হ্যাঁ, পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, ধর্মীয় শিক্ষা বা সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ভিডিও বানানো ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও শেয়ারে কী সমস্যা?
অতিরিক্ত প্রদর্শন, জৌলুস, অন্যদের মধ্যে ঈর্ষা বা হীনমন্যতা তৈরি হলে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ভিডিও বানানোর সময় কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
নিয়ত বিশুদ্ধ রাখা, শিক্ষামূলক দিক বজায় রাখা এবং পশুর প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ প্রদর্শন করা উচিত।
এই বিতর্ক কেন বেড়েছে?
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব, ভিডিওর মাধ্যমে অহংকার দেখানোর প্রবণতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সংঘাতের কারণে বিতর্ক বাড়ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।