জুমবাংলা ডেস্ক: ঈদে সালামি পাওয়া শিশুদের মূল আকর্ষণের একটি। ঈদের সকালে বড়দের কাছ থেকে সালামি পাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে তারা। নতুন চকচকে টাকায় ঈদি বা ঈদ সালামি তাদের আনন্দকে বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ। শুধু শিশুদেরই নয়, বড়দেরও নতুন নোটে সালামি দেওয়ার রীতি বহুদিনের। এ কারণে ঈদের আগে অনেকেই সংগ্রহ করে থাকেন নতুন টাকা। কেউবা সংগ্রহ করেন ব্যাংক থেকে, কেউবা সংগ্রহ করেন পথের পাশে বসে থাকা নতুন টাকা বিক্রেতার কাছ থেকে। বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক আসাদ আবেদীন জয়-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
রাজধানীর গুলিস্তানে মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের উল্টো পাশে, আন্ডার পাসের পাস ঘেঁসে রাস্তার ওপর বিক্রি হচ্ছে নতুন নোট। বুধবার (১২ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা দেখা যায়, জমে উঠেছে নতুন টাকা কেনাবেচার বাজার। নানা বয়সী ক্রেতারা ঈদের আমেজকে গায়ে জড়িয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নতুন টাকা। তবে বিক্রেতারা জানান, ঈদ কাছাকাছি চলে আসলেও তাদের আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না।
ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে নতুন টাকা কিনতে আসা মো. কবির হোসেন বলেন, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য নতুন নোট কিনতে এসেছি। অন্য সময় বাচ্চাদের ৫০০ টাকা দিলেও যা, ঈদের সময় নতুন ২০ টাকার নোট দিলেই সেই আনন্দ। সেজন্যই কষ্ট করে এটা নেওয়া। প্রতি বছরই আমি নতুন নোট নেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। এবারও নিয়েছি। কিন্তু কিছু বাড়তি টাকা লাগতো। তাই গুলিস্তান থেকে কিনে নিলাম। কারণ একবারের বেশি ফিঙ্গার দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া যায় না।
ঈদে বকশিস দেওয়া ও নেওয়া দুটিই বেশ আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য। বাবার সঙ্গে ঈদ উপলক্ষে নতুন নোট কিনতে আসা ১২ বছরের শিশু মো. শাকিল হোসেনও জানালো এমনটাই। তার ভাষায়, প্রতি বছরই বাবার সঙ্গে নতুন নোট কিনতে আসি, খুবই ভালো লাগে। নতুন টাকা দিয়ে কী হবে জানতে চাইলে শাকিল বলে, ঈদের দিন সালামি হিসেবে এই নতুন নতুন টাকাগুলো সবাইকে দেওয়া হবে। বড় ভাইয়া আপু সবাইকে। আমিও পাবো। আবার আমি আমার ছোট চাচাতো-মামাতো ভাইবোনকে ঈদের বকশিস দেবো।
কদমতলী জিয়া নগর থেকে আসা জুনায়েদ খান বলেন, ১৪ হাজার ৫০০ টাকার নতুন নোট কিনেছি আমি। এর মধ্যে একশো, বিশ, দশ ও পাঁচ টাকার নোটের বান্ডিল কেনা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সবাইকে সালামি দেওয়া হবে। তাই এই নতুন নোট কেনা হলো। প্রতি বছরই আমাদের কেনা হয়। এই গুলিস্তান থেকেই কিনি।
ব্যাংক থেকে কেন সংগ্রহ করেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে তো আসলে আমাকে এভাবে ভেঙে ভেঙে নোট নিতে দেবে না। আবার আমি চাইলেই একটা একশো বা বিশ এভাবে কিনতে পারবো না। এখান থেকে খুচরা কিনতে পারি। তাই এখান থেকেই কিনি।
নতুন টাকার বিক্রেতা মো. নাজিমউদ্দীন বলেন, আমি নতুন টাকা বিক্রি করি, আবার পুরাতন টাকাও কিনি। ছেঁড়ার ওপর নির্ভর করে পনের থেকে বিশ শতাংশ কমে আমরা পুরাতন বা ছেড়া নোট কিনি। আর নতুন নোট বিক্রি করি একেকটা একেক দামে। যেমন একশো টাকার এক বান্ডিল আমি বিক্রি দেড়শো টাকা বেশিতে। বড় নোটের থেকে ছোট নোটের দাম বেশি। আমি যে দাম দিয়ে কিনি তার থেকে বিশ টাকা বেশি দিয়ে বিক্রি করি। আমার লাভ সীমিত। ঈদের আগে যে বিক্রিটা হয় সেটা এখনও শুরু হয় নাই। তবে সাধারণ সময়ের থেকে বিক্রি বেড়েছে এটা সত্য।
এই নতুন টাকা কোথা থেকে আনেন জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, তারা এসব নোট ব্যাংক থেকেই কিনে আনেন। তবে সরাসরি ব্যাংক থেকে তারা পান না। কয়েকজনের হাত ঘুরে তাদের হাতে আসে।
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন জাহেরুল ইসলাম জাহিদ। ঈদে ছোট বাচ্চাদের সালামি দেওয়ার জন্যই মূলত এই নতুন নোট কেনা বলে জানান তিনি। জাহিদ বলেন, আমি প্রতি বছরই নতুন নোট কিনি। ব্যাংক থেকে কিনলে আসলে ভালো। কারণ ব্যাংকে অতিরিক্ত টাকাটা দিতে হয় না। এখানে তো আমার অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। কিন্তু ওখানে (ব্যাংকে) গেলে বড় লাইন ধরতে হয়। অনেক সময় চলে যায়। এটাও একটা কারণ ওখানে না যাওয়ার।
বিক্রেতারা জানান, এখন নতুন নোটের দাম কিছুটা বেশি। কারণ ব্যাংক থেকে নতুন নোট এখন বেশি দিচ্ছে না। আবার প্রতিদিনই ওঠানামা করছে নতুন এসব টাকার দাম। একেকজনের কেনার ওপর বিক্রির মূল্যেও রয়েছে ভিন্নতা। যদিও বিক্রেতারা জানান, সবার কাছে একই মূল্যে নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে। তবে সরেজমিনে নতুন টাকার এসব দোকান ঘুরে দেখা যায় তাদের মধ্যে রয়েছে মূল্যের ভিন্নতা।
মো. আমিনুল ইসলাম নতুন টাকার বিক্রেতা। দুই বছর ধরে তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে তিনি এই ব্যবসা করছেন। বড় ভাই অনেক আগে থেকেই এই ব্যবসায় জড়িত। ঈদের বাজারে নতুন টাকার দাম জানিয়ে আমিনুল বলেন, দশ টাকার এক বান্ডিল (১০০টি নোট) আমরা বিক্রি করছি এক হাজার দুইশো টাকায়। পঞ্চাশ টাকার বান্ডিল (১০০টি নোট) বিক্রি করছি পাঁচ হাজার দুইশো পঞ্চাশ টাকায়। আর একশো টাকার বান্ডিলে তিনশো টাকা বেশি নিচ্ছি। আর পুরাতন টাকার কন্ডিশন বুঝে ৫ থেকে ২০ শতাংশ কমিয়ে আমরা সেগুলো রাখি।
ঈদ কাছাকাছি চলে আসলেও বেচাকিনি তেমন হচ্ছে না বলে জানান আমিনুল। তবে অন্য সময়ের থেকে সামান্য বিক্রি বেড়েছে। অন্যসময় প্রতিদিন গড়ে আয় হয় সাত থেকে আটশো টাকা। ঈদ উপলক্ষে তা হাজার টাকা ছুঁয়েছে।
উল্লেখ্য, ঈদের আনন্দ-উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়তি চাহিদার কারণে এবারও বাজারে নতুন নোট ছেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঈদ উপলক্ষে বাজারে ছাড়া হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট। তবে এটা অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম। রবিবার (৯ এপ্রিল) থেকে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের ৩২ ব্যাংকের ৪০ শাখার মাধ্যমে নতুন নোট বিনিময় শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শাখাগুলো থেকে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ সাড়ে আট হাজার টাকা সংগ্রহ করতে পারছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, এবারের ঈদে মোট ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একজন সর্বোচ্চ সাড়ে আট হাজার টাকার নতুন নোট নিতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।