সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য টানা ৯ দিন ঈদের ছুটি
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে অতিরিক্ত এক দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে এবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টানা ৯ দিন ছুটি উপভোগ করতে পারবেন। আজ রবিবার (২৩ মার্চ) এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারির ফলে জাতীয় জীবনে বড় একটি অবকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা: ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত আজ রবিবার জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। এর ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে টানা ৯ দিন ছুটিতে থাকবেন।
Table of Contents
ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার আগে ২৮ মার্চ শুক্রবার থেকে ২ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত মোট ৬ দিনের ছুটি নির্ধারিত ছিল। নতুন ঘোষণায় ৩ এপ্রিল যুক্ত হওয়ায় এবং ৪ ও ৫ এপ্রিল যথাক্রমে শুক্রবার ও শনিবার হওয়ায়, কর্মীরা এবার মোট ৯ দিন ছুটিতে থাকছেন। এই অতিরিক্ত ছুটি সরকারি কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো ও দূরদূরান্তে ঈদ উদযাপন করার সুযোগ করে দিয়েছে।
কোন কোন সেবা ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে
যদিও ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তবে জরুরি পরিষেবা ও প্রয়োজনীয় কাজের সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এই ছুটির আওতায় পড়বে না। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবা ইত্যাদি চালু থাকবে।
এছাড়া হাসপাতাল, চিকিৎসা সেবা, ওষুধ পরিবহনকারী যানবাহন ও সংশ্লিষ্ট কর্মীরাও দায়িত্ব পালন করবেন। সরকার বলেছে, যারা জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, তারা যথারীতি কর্মস্থলে থাকবেন যাতে নাগরিক জীবন স্বাভাবিক থাকে।
ব্যাংক ও আদালতের কার্যক্রম কীভাবে চলবে?
ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করায় স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকিং কার্যক্রম এবং আদালতের কার্যক্রমে পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে যাতে অর্থনৈতিক লেনদেন ও ব্যাংকিং সেবা ব্যাহত না হয়।
সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকেও আদালতের কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। তবে সাধারণ ধারণা অনুযায়ী, ব্যাংক ও আদালতের কার্যক্রমও ছুটির সময়কালীন বন্ধ থাকবে, তবে জরুরি ভিত্তিতে কিছু সেবা সীমিত পরিসরে চালু রাখা হতে পারে।
আগেই নেওয়া হয়েছিল ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত
এই প্রজ্ঞাপনের পেছনে রয়েছে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠক। বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়তি সুবিধা বিবেচনায় এনে ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা জানান, রমজানের শেষাংশে যাতায়াত ও কেনাকাটার ভিড় এড়াতে ও জনস্বার্থে ছুটি বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। সেই বাস্তবতা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চাঁদ দেখা ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ বিবেচনায় ছুটির সময় নির্ধারণ
চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ৩১ মার্চ (সোমবার) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে এমনটা ধরে নিয়েই ছুটির তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগের দুই দিন ২৯ ও ৩০ মার্চ (শনিবার ও রবিবার) এবং ঈদের পরের দুই দিন ১ ও ২ এপ্রিল (মঙ্গলবার ও বুধবার) নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এই ছুটি সরকারী ছুটির তালিকায় পূর্বে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারির ফলে এখন ছুটির সময়সীমা আগের তুলনায় আরও প্রসারিত হলো।
সরকারি চাকরিজীবীদের আনন্দের ছোঁয়া
টানা ৯ দিনের ছুটি অনেক সরকারি চাকরিজীবীর জন্য বিরল সুযোগ। বিশেষত যারা রাজধানী কিংবা বড় শহরে কর্মরত, তারা এই ছুটিতে গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন। ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় যাত্রা সহজ হয়েছে, কারণ অনেকে আগেই টিকিট কেটেছিলেন ২৮ বা ২৯ মার্চের জন্য।
এছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এই দীর্ঘ ছুটির কারণে দেশজুড়ে ঘোরাঘুরি ও অবকাশ যাপনের পরিকল্পনা করছেন অনেকেই।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক খাতের প্রতিক্রিয়া
যদিও এই প্রজ্ঞাপন মূলত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য, তবে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানও এই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে পারে। অনেক মালিকপক্ষ ইতোমধ্যেই কর্মীদের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
ব্যবসায়ী মহল অবশ্য একটু উদ্বিগ্ন, কারণ টানা ছুটিতে সরবরাহ চেইন বা পরিষেবা বিঘ্নিত হতে পারে। তবে তারা বলছেন, সামাজিক ও ধর্মীয় আবেগের জায়গা থেকে এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছেন।
অতিরিক্ত ছুটি কেমন প্রভাব ফেলবে দৈনন্দিন জীবনে?
ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার ফলে যেমন পরিবারে মিলনের আবহ তৈরি হয়েছে, তেমনি দৈনন্দিন জীবনে কিছুটা প্রভাব পড়বে। শহরগুলোতে অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় যানজট কমবে, তবে বাস, ট্রেন, লঞ্চে যাত্রী চাপ বাড়বে।
অপরদিকে, যেসব মানুষ দৈনিক আয় নির্ভর করে, যেমন রিকশাচালক, দোকান কর্মচারী ইত্যাদি—তাদের আয় কমে যেতে পারে। ফলে এই দীর্ঘ ছুটির সময়টাতে সমাজের কিছু অংশের জন্য এটি চ্যালেঞ্জও হতে পারে।
ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারির সুফল
সবমিলিয়ে, ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার মাধ্যমে সরকার জনগণের ধর্মীয় অনুভূতি ও পারিবারিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সরকারের প্রতি জনসাধারণের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ ছুটির এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষ পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।