করোনার এই ভয়াল সময়টাতে শর্তসাপেক্ষে আগামী ১ জুন থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের পরিধি আরো বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পর্যটন খাত এখনই উন্মুক্ত করা হবে না। সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আলোকে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করার দিকে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকবে।
করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধেকল্পে এবং শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নির্দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) বন্ধের সময়সীমা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ঈদের পরেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। এর আওতায় রয়েছে- শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারখানা, প্রধান ও আঞ্চলিক অফিস, ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটর চ্যানেল, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠান, সব ধরনের বন্দরের কার্যক্রম, পণ্য খালাস ও পরিবহন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সব ধরনের কর্মকাণ্ড।
একই সঙ্গে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এবং কর্মীদের স্বাস্থ্য সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
সূত্র জানায়, যেহেতু এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে, সে কারণে কর্মীদের যাতায়াতের জন্য সীমিত আকারে গণপরিবহন চালুর বিষয়টিও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে এ খাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা হবে।
নিম্নঝুঁকি এলাকায় সতর্কতার সঙ্গে সব কার্যক্রম চালানো হবে। মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি কার্যক্রম সীমিত করা হবে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লকডাউন বা আংশিক কার্যক্রম চালানো হবে। বাকি এলাকা খুলে দেয়া হবে। এ নীতিতে আগামী ১ জুন থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করার উদ্যোগ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আগামী ১ জুন থেকে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজ শুরু করবে আরও সক্রিয়ভাবে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) নির্দেশনা জারি করেছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের কাজই চালু করার নির্দেশনা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রায় সব ধরনের শিল্পকারখানা খোলা হয়েছে। যেগুলো এখনও খোলা হয়নি, সেগুলো ১ জুন থেকে খুলে দেয়া হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে একটি দিকনির্দেশনা পাঠিয়েছে। এতে বাসা, অফিস, মার্কেট, হাটবাজার, দোকানপাট, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন, পর্যটন স্পট, ব্যাংক, বীমা, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় এসব খাতের কোথায় কী করণীয় তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে খাতওয়ারি ৭ থেকে ১৭ দফা নির্দেশনা রয়েছে। এগুলো পালন করে কর্মকাণ্ড চালাতে হবে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- প্রতিষ্ঠান খোলার আগে মহামারী প্রতিরোধী সামগ্রী যেমন- মাস্ক, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী সংগ্রহ করতে হবে, তৈরি করতে হবে আপৎকালীন পরিকল্পনা। সবকিছু বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ করে দিতে হবে, সব ইউনিটের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মীদের প্রশিক্ষণকে জোরদার করতে বলা হয়েছে।
গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছে ২৬ মার্চ থেকে। সাধারণ ছুটি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিও বাড়ানো হচ্ছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্তে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়।
করোনায় ছুটির কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এসএসসির ফলও পিছিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সূচিতে শুরু করাও যায়নি।
২০২০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জিতে সরকারি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পবিত্র রমজান, মে দিবস, বুদ্ধ পূর্ণিমা, বৈশাখি পূর্ণিমা, শব-ই-কদর, জুমাতুল বিদা ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ২৫ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি রয়েছে।
আর এসব দিবস ও উৎসব উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্যালেন্ডারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি রয়েছে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৮ মে পর্যন্ত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।