উত্তরাঞ্চলে শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

জুমবাংলা ডেস্ক : ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ। বিশেষ করে তিস্তা নদী বেষ্টিত এলাকা ও চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। এই অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে গরম কাপড়ের বড় সংকট দেখা দিয়েছে। মানুষজন খড়কুটো জ্বালানি শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে গাড়ি চালানো অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচল করলেও বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে তীব্র শীতের কারণে বেড়েছে বিভিন্ন শীতজনিত রোগব্যাধি। রংপুর বিভাগের জেলা সদর হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগীর ভিড়।

শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা শীতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

এত ঘন কুয়াশা আগে দেখেনি ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ

ঠাকুরগাঁওয়ে অক্টোবর মাসে শীতের আমেজ শুরু হলেও নভেম্বরের দিকে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ঠান্ডা অনুভূত হতো। তবে ডিসেম্বরের শুরুতে হালকা কুয়াশা ও হিমেল বাতাস অব্যাহত থাকলেও হঠাৎ করে ৯ ডিসেম্বর রাত ৯টা থেকে ঘনকুয়াশার দাপট অতিরিক্ত বেড়ে যায়।

এতে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক থেকে শুরু করে পথচারী ও জনসাধারণ পড়েন চরম বিপাকে। শীত আর ঘনকুয়াশার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষগুলো। রাস্তার ধারেই যে যা পারছেন খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতার জন্য আগুন পোহাচ্ছেন। অন্যদিকে ঠান্ডার প্রকোপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে বিশেষ করে ঠান্ডার কারণে নবজাতক ও কমবয়সী শিশুরা বেশি ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

গতকাল সোমবার রাত নয়টার দিকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় উত্তরের এই জেলা। কুয়াশার এতই ঘনত্ব যে যানবাহনের হেডলাইটও হার মেনেছে। লাইটের আলো ১০-১৫ গজ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারছে না। সড়কে গাড়ি চালানো প্রায় অনোপুযোগী হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কায় ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে চালকদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এর আগে কখনো এত ঘন কুয়াশা ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ দেখেনি। আগামী দিনগুলোতে আরো কুয়াশা ও শীত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও প্রতিনিয়ত প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনের ওপর রোগী ভর্তি থাকেন। সচরাচর শীতের সময় রোগীর বেশি চাপ থাকে। তবে এবার আগের মতোই রোগীর চাপ থাকলেও বর্তমানে বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালটিতে ৪০ শয্যার শিশু ওয়ার্ড হলেও সোমবার রাত ১১ টার দিকে ১৩০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি ছিলেন। যা ধারণ শয্যার থেকে তিন গুণ বেশি বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিশু ওয়ার্ডে ভতিকৃত বেশিরভাগ শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা।

শীতের দাপটে বিপর্যস্ত পঞ্চগড়
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় শীতের দাপটে বিপর্যস্ত। উত্তরের হিম বাতাসে এ জেলায় তাপমাত্রার পারদ প্রতিনিয়ত ওঠানামা করছে। মধ্যরাত থেকে এখন পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে রয়েছে পুরো জেলা। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ১১ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ওঠানামা করছে। সে কারণেই এই অঞ্চলে বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। তীব্র শীত অনুভূত না হলেও ঘন কুয়াশার কারণে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

সোমবার সকালে তেঁতুলিয়ায় ১১ ডিগ্রির নিতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে তীব্র শীতের কারণে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগীর ভিড়। শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা শীতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

ঘন কুয়াশায় ঢাকা দিনাজপুর
ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে দিনাজপুর। সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবার দিনাজপুরে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ। জেলায় চলতি শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

ঘনকুয়াশায় তাপমাত্রা কম ও হিমেল বাতাসের প্রভাবে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। খেটে খাওয়া মানুষের বাড়ছে দুর্ভোগ। তারা ঠিকমতো কাজে যেতে পারছেন না। ফলে উপার্জনে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় দিনাজপুরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১ কিলোমিটার।

তীব্র ঠাণ্ডায় কাবু রংপুর
ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠাণ্ডায় রংপুরের জনজীবন বিপর্যস্ত। শীতের কারণে ছিন্নমূল ও দিনমজুররা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত ও হিমশীতল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। সন্ধা নামার পর থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় সড়ক-মহাসড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। বেড়ে চলছে দুর্ঘটনার শঙ্কাও। চালক যাত্রী সবাই সতর্ক থাকছেন।

এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কম্বল চেয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। বিপরীতে পাওয়া গেছে মাত্র ১ হাজার ৬০০ কম্বল, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরাঞ্চলের অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ কাজকর্ম ছেড়ে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তার পাশে বসে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

গংগাচড়ার তিস্তার চরের রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্যের জমিতে কাজ করি, এত শীত যে পানিতে নেমে কাজ করার সাহস হচ্ছে না। বাড়ি ফিরে আসছি, কীভাবে দিন পার করব বুঝতে পারছি না। তার ওপর বাড়িতে বউ-বচ্চাকে যে গরম মোটা কাপড় দেব, সেই ট্কা তো নাই। চেয়ারম্যান মেম্বার যতক্ষণে দিবে ততক্ষণে আমরা পাবো।’

একই এলাকার রিকশা চালক মোহাম্মদ আমিনুল আমিন বলেন, ‘কয়েক দিনের শীতে রাস্তায় যেমন যাত্রী কম তেমনি আয়-রোজগারও কম। তাই গাড়ি চালাতে পারছি না। এখন নিজেরও চলতে কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থা আরো কিছুদিন চললে আমাদের মতো মানুষের না খেয়ে মরতে হবে।’

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান জানান, আজ সোমবার সকাল ৬টায় রংপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনে দিনে আরো তাপমাত্রা কমতে পারে।

রংপুর জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, ১ লাখ ৪ হাজার কম্বল চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬০০ কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি। সেগুলো বিতরণ চলছে। কমপক্ষে ৭০ হাজার কম্বল প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

৩ ঘণ্টা পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরি চলাচল শুরু