নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরায় দিনদুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ৯ ঘণ্টার মধ্যে এর একটি বড় অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যার আনুমানিক পরিমান ৯ কোটি। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাকী টাকা উদ্ধারে রাজধানীর ক্ষিলখেত এলাকায় অভিযান চলানো হচ্ছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ ঘটনায় মানি প্ল্যান লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের দুই জন পরিচালকসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার হোটেল লা মেরিডিয়ানের সামনে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, এটি পরিকল্পিত ঘটনা। ছিনতাইকারীরা অনেক আগে থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা টাকার চারটি বাক্স ছিনতাই করে পালিয়েছিল। খবর পেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দ্রুত শাড়াসি অভিযানে নামে। অত্যাধুনিক গোয়েন্দা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে ৯ ঘণ্টার মধ্যেই গাড়িচালককে আটক করে। তার কাছ থেকে তিনটি টাকার বাক্স উদ্ধার করা হয়েছে। একটি বাক্স নিয়ে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, উদ্ধার করা টাকা এখনো গণনা শেষ হয়নি। তবে ধারনা করা হচ্ছে এর পরিমান ৯ কোটি হতে পারে। বাকী টাকা উদ্ধারে ও আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকার গাড়ি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা গাড়িটি ঘিরে ধরে গাড়িতে থাকা লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। গাড়িটি ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে সাভারের ইপিজেডের বিভিন্ন বুথে টাকা রাখার জন্য যাচ্ছিল।
এ ঘটনার পর উত্তরা, তুরাগ ও সাভারসহ আশপাশের এলাকার তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়। ছিনতাইকারীরা এই বিশাল অংকের টাকা লুটে নিয়ে যে পথে পালায়, ওই পথের কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস কিংবা বাসা-বাড়ির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা আছে কিনা গোয়েন্দারা তা খুঁজতে শুরু করে। একই সঙ্গে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থল উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ব্রিজের পাশে যেসব মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হয়েছে লোকেশন ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে গোয়েন্দারা তা শনাক্ত করার চেষ্টা চালায়।
তবে কীভাবে তারা এতো স্বল্প সময়ের মধ্যে ছিনতাইকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করে গাড়ি ও টাকার বড় অংশ উদ্ধার এবং গাড়িচালককে আটক করেছে তা সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুদ হাওলাদার জানান, সিকিউরিটি কোম্পানির একটি গাড়িতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি পঁচিশ লাখ টাকা ওই ব্যাংকের সাভার ইপিজেড বুথে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ছিনতাইকারীরা যে কোনো মাধ্যমে এ খবর পেয়ে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ব্রিজের পাশে ওৎ পেতে ছিল। টাকা বহনকারী গাড়িটি সেখানে পৌঁছলে ছিনতাইকারীরা একটি মাইক্রোবাস রাস্তার মধ্যে আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে এর গতিরোধ করে। তারা টাকা বহনকারীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
ছিনতাইকারীরা সংখ্যায় ১০/১২ জন ছিল। তাদের বেশ কয়েকজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় টাকা বহনকারী লোকজন তাদের বাধা দিতে সাহস পাননি।
ডিএমপি’র উপকমিশনার (উত্তরা জোন) মোর্শেদ আলম জানান, উত্তরা ১৬ নম্বরের সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে ওই এলাকায় কোনো সিসিটিভি ক্যামরা না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সংস্থা টাকা উদ্ধার এবং দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে। এই ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি ছিনতাই মামলা দায়ের হচ্ছে।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, ছিনতাই হওয়া টাকাভর্তি ৪টি ট্রাঙ্কের মধ্যে ৩টি উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে, অভিযান শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেন, খিলক্ষেতসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ছিনতাইকৃত টাকার একটি বড় অংশ এরইমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। আশা করছি, ছিনতাইকৃত বাকি টাকা উদ্ধার এবং দুবর্ৃৃত্তদের শিগগিরিই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায় র্যাব-পুলিশের একাধিক টিম। তারা আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালচনা করছেন। একই সাথে ওই টাকা পরিবহনে যুক্ত গাড়ির চালক ও অন্য আরোহিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়। তাদের মুখ থেকে ঘটনার বর্ননা শুনে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে এতে আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ টাকা বহন ও এটিএম বুথে জমার দায়িত্ব টাকা বহনকারী সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের। আবার এই টাকা বিমার আওতায় রয়েছে। ফলে এ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।