
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিকসহ অন্তত ২৭ জন আহত হয়েছেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন আমবটতলা বাজার এলাকায় সংঘর্ষের সূচনা হয়। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চৌগাছা–ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে দ্রুত বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে তাদের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সূত্রপাত সোমবার (২৪ নভেম্বর)। সেদিন এক নারী শিক্ষার্থী আমবটতলা বাজারের একটি দোকানে গেলে দোকানদার তাকে উত্ত্যক্ত করেন। বিষয়টি সহপাঠীদের জানালে তারা পরদিন দোকানদারের কাছে বিষয়টি জানতে যান। একপর্যায়ে বাকবিতণ্ডা ও মারধর হয় দোকানদারের সঙ্গে।
এ ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে স্থানীয়রা মাইকে ঘোষণা দিয়ে আরও লোক সমাবেশ করে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তীব্র ধাওয়া–পাল্টাধাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিকসহ বহু শিক্ষার্থী আহত হন।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের ধাওয়া–পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ক্যাম্পাস এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় এক সাংবাদিকের সাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং কয়েকজন সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টা পরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে না পৌঁছানোয় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ বাড়ে। পরে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টোরিয়াল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
রাত ৯টার পর সেনা সদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শন করেন উপাচার্য, ট্রেজারারসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
কেমিকৌশল বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, উত্ত্যক্তের বিষয়টি জানতে পেরে তারা দোকানদারের কাছে প্রশ্ন করতে গেলে স্থানীয়দের বড় একটি দল তাদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পিছন থেকে ইট নিক্ষেপ করা হয়।
এদিকে দেরিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসাইন আল মামুনের পদত্যাগ দাবি করে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, একটি ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ ঘটে। আমাদের প্রক্টরিয়াল বডিসহ অনেকে শিক্ষক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসতে দেরি করায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। সংঘর্ষে আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
টানা চার ঘন্টা যবিপ্রবির উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে সমঝোতা করে। সমঝোতা স্বরুপ বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ স্থান ত্যাগ করলে রাত ১টার পর উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নিজ নিজ বাস ভবনে ফিরে যান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



