জুমবাংলা ডেস্ক : করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ ও নিজস্ব অর্থে গঠিত ‘রিভলভিং তহবিল’ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন। একজন উদ্যোক্তা সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে। এতে সুদ হবে মাত্র ৬ শতাংশ।
বুধবার (১২ জুন) এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (১১ জুন) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে ১৯টি ব্যাংক ও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমান খান।
এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে চুক্তি করা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।
এসএমই জানায়, অংশীদার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে জামানতবিহীন ঋণ বিতরণের বিষয়ে উৎসাহিত করা হবে। তবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো জামানত গ্রহণ করা হবেনা। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হবে সর্বোচ্চ ৪ বছর। গ্রাহক-ব্যাংক সম্পর্কের ভিত্তিতে ৬ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪৮টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে।
মোট ঋণের ৩০ শতাংশ নারী এবং ১০ শতাংশ এসএমই ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে মোট ঋণের ৫০ ভাগ উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং বাকি ৫০ ভাগ ভ্যালুচেইন ও অন্যান্য খাতে বিতরণ করা হবে। আর পুরুষ উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে মোট ঋণের ৫০ ভাগ উৎপাদন, ২৫ ভাগ সেবা এবং ২৫ ভাগ ভ্যালুচেইন ও অন্যান্য খাতে বিতরণ করা হবে।
ঋণ বিতরণের পর এসএমই ফাউন্ডেশনের নিজস্ব পদ্ধতি ও লোকবলের মাধ্যমে সরেজমিন পরিদর্শন করে চুক্তি অনুযায়ী সঠিক উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা হবে। তবে অনুৎপাদনশীল খাত যেমন: মুদি দোকান, ঔষধ ও হার্ডওয়্যার বিক্রেতা এবং পরিবেশ দূষণ ঘটায় এমন ব্যবসার উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া হবে না।
ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা: অগ্রাধিকারভুক্ত এসএমই সাব-সেক্টর, ক্লাস্টার ও ভ্যালু চেইনের আওতাভুক্ত উদ্যোক্তা; রপ্তানি উপযোগী পণ্য এবং আমদানি বিকল্প পণ্য প্রস্ততকারী উদ্যোক্তা; আইসিটি ও প্রযুক্তিনির্ভর সৃজনশীল ব্যবসায়ে যুক্ত তরুণ বা নতুন উদ্যোক্তা যারা এখনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাননি; পশ্চাদপদ ও উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তা; দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ট্রেডবডি, এসএমই অ্যাসোসিয়েশন, নারী উদ্যোক্তা সংগঠন, নাসিব, উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সুপারিশ করা উদ্যোক্তা।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২ হাজার ১৮৬ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার মাঝে প্রায় ১২২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। যাদের ২৫ শতাংশ নারী এবং ৭৫ শতাংশ পুরুষ উদ্যোক্তা।
করোনা ভাইরাস মহামারির বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে ৩০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। যেখানে ৩ হাজার ১০৮ জন উদ্যোক্তা ঋণ পান। এরপর ৩০০ কোটি টাকা থেকে প্রত্যাবর্তন অর্থ ও ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অর্থে গঠিত ‘রিভলভিং তহবিল’থেকে আরও ২৯৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিন দফায় ৮ হাজার ২৮৬ জন উদ্যোক্তার মধ্যে প্রায় ৭১৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।