জুমবাংলা ডেস্ক : ফটোসাংবাদিক মমিনুল ইসলাম রিপন। ৪৫ বছরের রিপনের ফটোসাংবাদিকতার বয়স ২৫ বছর। দু’যুগের অধিক সময়ে তুলেছেন নানান ঘটনার হাজারো ছবি। এবার তার ছবি তোলা তো দূরের কথা ঈদের নামাজেই অংশ নিতে পারেননি। ক্যামেরার ট্রিগারে রাখতে পারেননি হাত, ক্যানভাসে রাখতে পারেননি চোখ। একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন অপরটি হারানোর পথে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে রিপনের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন ও উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারলে যেকোনো মুহূর্তে অন্য চোখেরও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলবে। চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা ভালো হবে। সেখানে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনসহ চিকিৎসা করাতে গেলে ২০ লাখেরও বেশি টাকা প্রয়োজন। যা কোনোভাবেই যোগান দেওয়া সম্ভব নয় সাংবাদিক রিপনের।
এই অবস্থায় রিপনের পরিবার উন্নত চিকিৎসা সহায়তায় সরকার ও বিত্তবানদের কাছে আহবান জানিয়েছেন। তাকে সহযোগিতা করা যাবে ০১৭১৬-৮২৪৭৬০ (বিকাশ ও নগদ) ছাড়াও চলতি হিসাব নম্বর-০১০০২২১৫১৮৩১৯ জনতা ব্যাংক, আলমনগর শাখা, রংপুর অ্যাকাউন্টে।
রিপনের স্ত্রী কোহিনুর ইসলাম বলেন, বাম চোখে রেটিনা সমস্যা দেখা দিলে তাকে গত ৯ মে রংপুরের গ্লোবাল আই অ্যান্ড হেলথ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসক ডা. আব্দুল হান্নান তার বাম চোখ অপারেশন করান। পরদিন থেকে চোখে ইনফেকশন শুরু হয়। চিকিৎসক হান্নানের পরামর্শে তাকে নেওয়া হয় ঢাকার ইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইন্সটিটিউটে। সেখানকার চিকিৎসক ফারহানা ইয়াসমিন তার ইনফেকশন হওয়া চোখে অপারেশন করেন। কিন্তু ততক্ষণে নিভে যায় চোখের দৃষ্টিশক্তি। এই ইনফেকশন ডান চোখকেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এখন ডান চোখটিও অন্ধ হওয়ার পথে।
ঈদ-উল-আজহার দিন ফটোসাংবাদিক রিপনের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি শুয়ে আছেন খাটে, চোখে কালো চশমা। চোখ দিয়ে দেখতে না পারায় কথা বলেই পরিচয় হতে হলো। পরিচয়ের মধ্যে তার চোখ দিয়ে গড়াতে থাকলো পানি, সে পানি চুয়ে চুয়ে ভিজতে থাকলো বালিশ-বিছানা।
চোখের পানি মুছতে মুছতে সাংবাদিক রিপন বলেন, আমি চোখ দিয়ে দেখতে চাই। আমি আবারও ক্যামেরার ক্যানভাসে চোখ রেখে ছবি তুলতে চাই। আমি হাসতে চাই, আগের মতো মাঠে যেতে চাই। সবার সঙ্গে খুনসুটি কাটতে চাই। এসব বলতে বলতে তার কণ্ঠ ভারি হয়ে উঠতে থাকে। এক সমুদ্র হতাশা নিয়ে রিপন বলতে থাকে, আমি কি আবারও আগের মতো হতো পারবো, চোখ দিয়ে দেখতে পারবো, এই আশা কি পূরণ হবে না আমার। এই প্রশ্ন রেখে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠেন।
ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের সার্জন ডা. ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ইনফেকশনের কারণে রিপনের বাম চোখটি সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। যাতে কর্নিয়া সংযোজন ছাড়া আর দেখার কোনো উপায় নেই। বাম চোখটিরও ৭৫ ভাগ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা করানো না গেলে বাম চোখটিও দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে যাবে।
রিপনের তোলা ছবি স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছে। তিনি শুধু একজন ফটোসাংবাদিকই নন। একজন দক্ষ সংগঠক। বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, রংপুরের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।