সালেহ নোমান, চট্টগ্রাম ব্যুরো: পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবো’র তথ্য মতে দেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় সর্বত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থাকলেও ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ফনী’র আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
পাউবো’র তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার বাঁধ আছে। এরমধ্যে কিছু বাঁধ সম্প্রতি নির্মাণ করা হয়েছে। আর উল্লেখযোগ্য অংশ কয়েক দশক পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিল। সময়ে সময়ে এসব বাঁধ মেরামত ও পুনঃনির্মাণ করা হচ্ছে।
পাউবো’র বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাষ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জুমবাংলাকে বলেন, প্রতিবছরই নতুন বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করা হলেও দেশের উপকূলীয় অনেক এলাকায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বাঁধ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরমধ্যে সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় ১৪টি জেলার প্রায় সবগুলোতে বাধেঁর দুর্বলতার কারণে জোয়ার এবং জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘুর্ণিঝড় ফনী’র আঘাতে দুর্বল বাঁধের এলাকায় জলোচ্ছাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকাও আছে বলে জানান তিনি।
বঙ্গোপসাগরের ঘুর্ণিঝড় ফনী বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ উপকূল থেকে ৭ শত কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে ধাবিত হচ্ছে, যদি এভাবে অগ্রসর হতে থাকে তাহলে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত করার প্যাটার্ন দুর্বল হয়ে যাবে। এটি ঘণ্টায় ২৭ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড়ের ভিতরের বাতাসের গতিবেগ ১৮০ কিলোমিটার।
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুয়ায়ী, এটি বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আঘাত হানবে।
ফনীর আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় পাঁচ থেকে দশ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসের পূর্বাভাষ জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় জোয়ার থাকলে জলোচ্ছাসের পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ ফুট ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আরিফুর রহমান বলেন, বিদ্যমান উচ্চতার বাঁধে এই পরিমাণ জলোচ্ছাস আটকানো সম্ভব হবে, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ও দূর্বল এলাকা দিয়ে আরও কম উচ্চতার জলোচ্চাসের ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে।
পাউবো’র বাঁধের উচ্ছতা এলাকা ভেদে ভিন্নতা আছে। এরমধ্যে নোয়াখালি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে উপকূলীয় বাঁধের উচ্চতা পাঁচ মিটারের মত। আর পটুয়াখালি, বরিশাল অঞ্চলে বাঁধের উচ্চতা ছয় মিটারের মতো।
নোয়াখালি অঞ্চলের মধ্যে অনেক এলাকা আছে যেখারে ভাঙনে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার কোনও এলাকায় একবারেই বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া ভাঙন কবলিত হওয়ায় পাউবো সেখানে বাঁধ ও নির্মাণ করছে না।
চর ডেভেলাপমেন্ট ও স্যাটেলমেন্ট প্রজেক্ট (সিডিএসপি)’র ডেপুটি টিম লিডার মিহির কুমার চক্রবর্তি জানিয়েছেন, নোয়াখালির চরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে, ওই এলাকা ক্রমাগত ভাঙনের কারণে নতুন বাঁধের প্রকল্পও হাতে নেয়া যাচ্ছে না।
‘এছাড়া হাতিয়া ও আশপাশের কয়েকটি চরে বাঁধ পুরানো হয়ে গেছে। বড় ধরনের জোয়ার ও জলোচ্ছাসে এসব বাঁধ বেসে যেতে পারে যেকোনও সময়,’ উল্লেখ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম ও নোয়াখালি জেলার সীমান্তবর্তী উড়ির চরের চারপাশে কোনও বাঁধ নেই। এই চরের দুই ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস হলেও দিনের পর দিন রাখা হয়েছে বাঁধবিহীন অবস্থায়।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চরটির কয়েকটি এলাকায় ভাঙনের কারণে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।