নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই নেতা। একজন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং অন্যজন বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন। এরা হলেন- উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সিকদার, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম আজাদ ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মুরাদ কবির। মুরাদ কবির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের স্বজন। তাই তিনি দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে গত ৩ মে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। নির্বাচন থেকে সরে গেলেও ব্যালটে তার প্রতীক থেকেই যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
মুরাদ কবির নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পর কার্যত নির্বাচন এখন কামাল উদ্দিন সিকদার ও সেলিম আজাদের মধ্যে। তবে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচন, পৌরসভার নির্বাচনে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে ছিল বিভক্তি। তবে এই নির্বাচনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কামাল সিকদারের হয়ে আনারসের পক্ষে মাঠে সরব। অপর প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ আক্ষরিক অর্থেই নেতাবঞ্চিত। কিছু দলীয় কর্মী আর সাধারণ ভোটার তার ভরসা। ফলে, ঐক্যবদ্ধ নেতা বনাম আমজনতার জমজমাট লড়াইয়ের আভাস মিলছে নির্বাচন ঘিরে।
কামাল উদ্দিন সিকদারের পক্ষে নির্বাচনের মাঝে কাজ করছেন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মুরাদ কবীর, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল, জেলার যুগ্ম সম্পাদক সিকদার মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর আলী, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন জয়, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জয়, যুবলীগ সভাপতি হীরু মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আশিক দেওয়ান, কালিয়াকৈর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের সবগুলোর চেয়ারম্যান। অপরদিকে, সেলিম আজাদের সঙ্গে নেতা বলতে শুধু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তুষার, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওহাব মিয়া ও তৃণমূলের কিছু নেতা।
সাধারণ মানুষ বলছেন কালিয়াকৈরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররা। যদিও বিএনপি থেকে ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করেছে। তবে, নেতৃত্বস্থানীয় বিএনপির লোক ভোটে না আসলেও ভোট দিতে পারে তৃণমূল বিএনপির কর্মীরা। তারা ভোটকেন্দ্রে আসলে পাল্টে যেতে পারে হিসাবনিকাশ। বিএনপি-সমর্থকদের ভোট যে প্রার্থীর দিকে বেশি পড়বে, তার বিজয় সহজ হবে। এক্ষেত্রে তারা, তুলনামূলক নিরীহ-নির্বিবাদী প্রার্থী বেছে নেবে।
এদিকে, গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড খিলপাড়া বাজারে জনসভায় বক্তব্য রাখেন গাজীপুর জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম এবং গাজীপুর জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মোখলেছ মাস্টার। তারা দুইজনই যুবলীগ নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সেলিম আজাদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সিকদারের পক্ষে ভোট চাইতে দেখা গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে ভোটের যে চিত্র পাওয়া যায়, তাতে কামাল সিকদারের সমর্থকরা সরব। তাদের প্রার্থী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে, সেলিম আজাদের কর্মীরা সবাই নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের অভিমত, তাদের সুখ-দুঃখে যাকে ডাকলে পাওয়া যায় তাকেই ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে কামাল উদ্দিন সিকদার থেকে অনেকটা এগিয়ে সেলিম আজাদ। কারণ তিনি সারাবছর সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলাচল করে আসছেন।
এদিকে, চেয়ারম্যানপ্রার্থী সেলিম আজাদ তার সমর্থকদের হুমকি, মারধর ও পোস্টার লাগানোর বাধা প্রদানের অভিযোগ তুলেছেন। এসব ঘটনায় তিনি উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কালিয়াকৈর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়াও এসব বিষয় নিয়ে করেছেন সংবাদ সম্মেলন। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কামাল সিকদার।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তুষার বলেন, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এটা দলীয় নির্বাচন নয়, তবু আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও সমর্থকরা দলীয় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে আনারসের ব্যানার টাঙিয়ে মিটিং করেছেন। তারা ভোটের মাধ্যমে না গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে জয়ের পথ খুঁজছেন।
চেয়ারম্যানপ্রার্থী সেলিম আজাদ বলেন, আমার জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তৃণমূলের জনতা আমাকে চায়। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল উদ্দিন সিকদার সাধারণ মানুষ থেকে বঞ্চিত। তারা ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছেন। গত বুধবার একজনকে পিটিয়ে আহত করেছেন। নানারকম বাধাবিঘ্ন ঘটিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তারা ভোটের মাধ্যমে নয়, জোরজবরদস্তি করার চেষ্টায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল উদ্দিন সিকদার বলেন, তাদের অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই। আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ, পরিবেশ ঠিক আছে। এই নির্বাচন সম্পূর্ণ নির্দলীয়, দলীয় প্রভাব খাটানোর কোনও প্রশ্নই আসে না।
কালিয়াকৈর উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা। মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৫ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ১৫৮ এবং ১ জন হিজড়া ভোটার। নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১২৮টি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।