জুমবাংলা ডেস্ক : পঞ্চগড়ে আনিসুর রহমান নামে একজনের চারটি গরু চোরে নিয়ে গেছে। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের ঘটবর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, আনিসুর রহমানের মেয়েদের উপবৃত্তির জমানো টাকায় গরুগুলো কেনা হয়। এ ঘটনার পর নিঃস্ব হয়ে গেছে ওই পরিবার।
তার পরিবার জানায়, ১০ শতকের ভিটে আর এই ৪টি গরুই ছিল দিনমজুর আনিসুর রহমানের সম্পদ। মেয়েরা তাদের বৃত্তির টাকা থেকে জমিয়ে জমিয়ে বাবাকে গরুগুলো কিনে দিয়েছিলেন। সেই গরুগুলো রাতে চুরি হয়ে যায়।
প্রতিবেশীরা জানায়, প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যমানের ৪টি গরু চুরি হওয়ায় নিঃস্ব হয়েছেন দিনমজুর আনিসুর ও তার মেয়েরা। তাদের ধারণা সংঘবদ্ধ চক্র একটি চোর গরু নিয়ে পিকআপে করে পালিয়েছে।
ওই পরিবার জানায়, রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ে পরিবারের সবাই। ভোরে নামাজ পড়তে উঠে আনিসুরের স্ত্রী আয়েশা বেগম দেখতে পান গরু ঘরে কোন গরু নেই। তিনি চিৎকার করতেই চারপাশের সবাই এসে জড়ো হয়। আশপাশে অনেক স্থানে খোঁজ করলেও গরুর সন্ধান পাননি।
দিনমজুর আনিসুরের চার মেয়ে। চারজনই অত্যন্ত মেধাবী। বড় মেয়ে আফসানা খাতুন এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ইংরেজি বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করেন। মাস্টার্স পড়া অবস্থায় সম্প্রতি তার বিয়ে দিয়েছেন আনিসুর রহমান। মেজ মেয়ে রোমানা আক্তার এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ উত্তীর্ণ হয়। সে এখন রংপুর মেডিকেল কলেজে ডেন্টাল বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। সেজ মেয়ে লাবনী আক্তার এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। সে এখন রংপুর আইএইচটিতে রেডিওলোজি নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। এছাড়া ছোট রিপা আক্তার পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে।
বড় মেয়ে আফসানা জানায়, ইসলামী ব্যাংক থেকে মাসে ৩ হাজার ও মেজ মেয়ে রোমানা ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে মাসে ২ হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি পায়। সেই টাকার সঙ্গে টিউশনির টাকা এবং বাড়ির কিছু টাকা যোগ করে কয়েক বছর আগে বাবাকে ৪টি গরু কিনে দেন তারা। স্বপ্ন ছিল গরুগুলো বিক্রি করে বাকি মেয়েদের পড়াশুনা ও বিয়ের খরচ জোগাড় করবেন। কিন্তু চোর তাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে দিয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা।
রংপুর মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের ছাত্রী রোমানা আক্তার বলেন, গরুগুলো আমরা কিনেছিলাম যেন বিপদের সময় বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারি। এখন আমাদের আর কিছু রইলো না। সামনে আমার পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে ১২ হাজার টাকা লাগবে। সেই টাকা কোথায় পাবো ভেবে পাচ্ছি না। করোনার মধ্যে এমনিতে টানাপোড়নে দিন যাচ্ছিল। এখন সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আনিসুর রহমান বলেন, আমার মেয়েরা বৃত্তি আর টিউশনি টাকা দিয়ে এই গরুগুলো কিনে দিয়েছিল। সেগুলো পালন করে এখন বড় করেছি। ১টি বিদেশি গরুসহ মোট ৪ গরু বাজার মূল্য হবে প্রায় দুই লাখ টাকা। আশা ছিল গরুগুলো বিক্রি করে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও বিয়ের খরচ জোগাড় করবো। কিন্তু আমার সব স্বপ্ন শেষ করে দিল চোর। মেয়েরা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আমি পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ওই পরিবারের ৪টি গরু চুরির ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। চোর চক্রটিকে ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।