আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রায় এক দশক আগে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলো চীনের কাছ থেকে ঋণ নিতে শুরু করে। চলতি বছর দেশগুলোর রেকর্ড পরিমাণ বকেয়া ঋণ পরিশোধের কথা। সিডনিভিত্তিক থিংকট্যাংক লোয়ি ইনস্টিটিউট এক রিপোর্টে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আলজাজিরা
২০১৩ সালে বেইজিং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্প হাতে নেয় চীন।
এর আওতায় অবকাঠামো গড়ে তুলতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ঋণ দেয় চীন সরকার। বন্দর, মহাসড়ক, রেল সংযোগ তৈরির মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকাকে যুক্ত করে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোই ছিল বিআরআই প্রকল্প গ্রহণের মূল লক্ষ্য। তবে বর্তমানে এই প্রকল্প ঘিরে নতুন করে ঋণ দেওয়ার হার কমেছে। চলতি বছর স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে মোট তিন হাজার ৫০০ কোটি ডলার দেনা পরিশোধ করতে হবে।
এর মধ্যে দুই হাজার ২০০ কোটি ঋণ পরিশোধ করতে হবে ৭৫টি দেশকে। এই দেশগুলো বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে। বিপুল দেনা পরিশোধ করতে গিয়ে দেশগুলোর স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয়ের হার কমতে পারে। রিপোর্টটির লেখক রাইলি ডিউক বলেন, ‘এই দশকের শেষ পর্যন্ত চীন যে পরিমাণ ঋণ দেবে তার চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করবে।’
এককভাবে কোনো দেশের উদ্যোগে নেওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প হলো বিআরআই। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ পেতে ব্যর্থ হওয়া দেশগুলোকে পাওয়ার প্লান্ট, রাস্তা, বন্দর নির্মাণের জন্য প্রকল্পটির আওতায় ঋণ দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে চীনের দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার কোটি ডলার, যা ছিল পশ্চিমা দাতা সংস্থাগুলোর প্রদান করা মোট ঋণের চেয়ে বেশি।
দেনা পরিশোধের চাপ থাকার কারণে দেশগুলোর সাধারণ জনগণের ব্যয় বাড়ছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবেলা করার এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা কমছে।
লোয়ির রিপোর্ট অনুযায়ী, অনেক উন্নয়নশীল দেশ আর্থিক চাপের মধ্যে আছে। কারণ তাদের বিশাল অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তারা যে শুধুই চীনের কাছে থেকে ঋণ নিয়েছে তা নয়। বিশ্বের আরো অনেক ব্যাংক বা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও তারা অর্থ নিয়েছে। ২০২৩ সালে ৪৬টি স্বল্পোন্নত দেশ (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিস বা এলসিডি) আহরণকৃত করের প্রায় ২০ শতাংশ ব্যয় করেছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে। এটি তাদের বাজেটের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। এর বিপরীতে ২০২৩ সালে উন্নত দেশ জার্মানি ঋণ পরিশোধে ব্যয় করেছিল বাজেটের ৮.৪ শতাংশ অর্থ।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ব্যয় চলতি বছর আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রিপোর্টে আরো বলা হয়, চীন এই ঋণের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে পারে। চীন ঋণ দেওয়ার গতি কমিয়ে এনেছে। তবে নির্দিষ্ট দুটি ক্ষেত্রে তারা এখনো ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। একটি হলো, তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক শিথিল করলে এবং দ্বিতীয়টি হলো, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উত্তোলনে চুক্তি করলে। হন্ডুরাস, বুরকিনা ফাসো এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জ তাইওয়ানের বদলে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করায় নতুন করে ঋণ পাচ্ছে দেশগুলো। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ধাতু উত্তোলনের জন্য ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলের সঙ্গে চুক্তি করেছে চীন। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতে এই খনিজ ও ধাতুগুলো ব্যবহৃত হয়।
ট্রাম্পের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি না মানলে ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি: ইরানকে সৌদি
লোয়ির রিপোর্টের ব্যাপারে চীন সরকারের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধ নিয়ে তৈরি হওয়া সমস্যার জন্য কিছু দেশ অনৈতিকভাবে চীনকে দায়ী করছে। এসব অভিযোগ সত্য নয়। তবে বাস্তব চিত্র কিছুটা ভিন্ন। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলীয় হাম্বানটোটায় ১১০ কোটি ডলারের বিনিময়ে গভীর সমুদ্রবন্দরের নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়নের জন্য চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি করে দেশটির তৎকালীন সরকার। বকেয়া থাকা ১৪০ কোটি ডলার পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বন্দরটি ৯৯ বছরের জন্য চীনকে ইজারা দেয় শ্রীলঙ্কা। ফলে ঋণের অর্থে পরিশোধে ব্যর্থ দেশগুলোর ওপর চীন যে প্রভাব খাটাচ্ছে সে তথ্য রিপোটর্টিতে তুলে ধরা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।