ভারতে ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষ ইস্যুটি বেশ পুরোনো। আর এ আধুনিক যুগে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর সবচেয়ে বড় ও কার্যকরী প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এক্ষেত্রে এবার যোগ হয়েছে নতুন এক মাত্রা। স্বার্থান্বেষী মহল ভারতজুড়ে মুসলিমবিদ্বেষ আরও কার্যকরভাবে ছড়াতে এখন ব্যবহার করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট (সিএসওএইচ)–এর নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এআই এখন সংখ্যালঘুবিরোধী প্রচারণার এক শক্তিশালী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক এই অরাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি গত ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের ওয়েবসাইটে ‘এআই জেনারেটেড ইমেজারি অ্যান্ড দ্য নিউ ফ্রন্টিয়ার অব ইসলামোফোবিয়া ইন ইন্ডিয়া বা ভারতে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের নতুন সীমানা ও এআই-নির্মিত চিত্র’—শীর্ষক ৬০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে মুসলিমদের লক্ষ্য করে তৈরি করা ১ হাজার ৩২৬টি এআই-নির্ভর ঘৃণামূলক পোস্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এক্স, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে সক্রিয় ২৯৭টি পাবলিক অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হয়েছে এ পোস্টগুলো।
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রাকিব হামিদ বলেন, সীমিত পরিসরের গবেষণালব্ধ এই পরিসংখ্যান কেবল সমুদ্রে ভাসমান বরফের চূড়ার মতোই দৃশ্যমান ক্ষুদ্র এক অংশ। প্রকৃতপক্ষে ভারতের ডিজিটাল জগতে এর পরিধি অনেক বিশাল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এ ধরনের কার্যক্রম ছিল তুলনামূলক কম; কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎই বেড়ে যায় এ কার্যক্রম। এর সঙ্গে স্ট্যাবল ডিফিউশন, মিডজার্নি ও ডল–ই—এর মতো এআই টুল সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সহজলভ্য হয়ে ওঠার ঘনিষ্ঠ এক সম্পর্ক রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এআই-নির্মিত ছবিগুলো এখন মুসলিমদের মানবিকতাবোধহীনভাবে উপস্থাপন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো, সহিংসতাকে নান্দনিকভাবে সাজানো এবং নারীবিদ্বেষ ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এরই মধ্যে সিএসওএইচ—এর এই প্রতিবেদন ভারতে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কারণ, এতে উঠে এসেছে কীভাবে এআই সাম্প্রদায়িক প্রোপাগান্ডার বিস্তারকে আরও দ্রুততর করছে। এতে আরও সতর্ক করা হয়, মুসলিম নারীদের যৌন অবমাননাকর এআই-নির্মিত ছবি ও কনটেন্ট তৈরির প্রবণতা ক্রমবর্ধমান।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময়টাতে ভারতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ আন্দোলন তুঙ্গে ছিল। সেপ্টেম্বরে উত্তর ভারতের কানপুর শহর থেকে শুরু হয়ে এই আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। একটি ডানপন্থী হিন্দু সংগঠন ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানারে আপত্তি জানালে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। পরে বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশ হাজার হাজার মুসলিমের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সমাবেশের’ অভিযোগ আনে, যদিও আয়োজকদের দাবি—এগুলো ছিল শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সমাবেশ।
সিএসওএইচ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘যেকোনো সাধারণ প্রতিবাদ বা স্থানীয় সংঘাতকেও এখন সহজেই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘৃণা ছড়াতে চায়, তাদের হাতে। এআই-নির্মিত ছবি ও ভিডিও এসব প্রেক্ষাপটে সহজেই ব্যবহার করা সম্ভব।
প্রতিবেদনটির শেষে নয়টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু সুপারিশ নীতিনির্ধারকদের জন্য, আর কিছু এআই মডেল নির্মাতাদের উদ্দেশ্যে। সেখানে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানকে ‘অবিলম্বে ও ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী শনাক্তকরণ, রিপোর্টিং ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে অপব্যবহার তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত ও রোধ করা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।