বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ‘ল্যাবিরিন্থিয়ান মেজ’- এই শব্দ দু’টি পড়েই আমি কেন জানি না এক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলাম। লেখাটি পড়তে পড়তে আমার মনের মধ্যে সতর্ক ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছিল। আমি ১৪-১৬ বছর বয়সীদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ে একটি রচনা প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করছিলাম। কিন্তু ওই বিশেষ রচনাটিতে ভাষা এতটাই পরিশীলিত ছিল যে তা একজন কিশোর লেখকের জন্য অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল।
এরপর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সনাক্তকারী সফটওয়্যার ব্যবহার করে আমি রচনাটিকে পরীক্ষা করে দেখি।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ‘কপিলিকস’ নামের ওই সফটওয়্যারটি আমার কম্পিউটারের স্ক্রিনে যে ফলাফল তুলে ধরে, তা ছিল গভীরভাবে হতাশাব্যঞ্জক। রচনাটির ৯৫.৯ ভাগ ছিল এআই টুল ব্যবহার করে তৈরি।
আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি ভিন্ন একটি টুলের মাধ্যমে রচনাটি যাচাই করলাম। ফলাফলে ‘স্যাপলিং’ আমাকে জানিয়েছে রচনার ৯৬.১ ভাগ কোনো মানুষের লেখা নয়।
তৃতীয় আরেকটি টুল প্রথম ফলাফল দু’টিই নিশ্চিত করেছে, তবে এক্ষেত্রে স্কোর ছিল কিছুটা কম- ৮৯% এআই।
তাই আমি ‘উইনস্টন এআই’ নামে আরেকটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে রচনাটি যাচাই করলাম। কোনো সন্দেহ নেই, রচনাটির মাত্র এক ভাগ মানুষের হাতে তৈরি।
চারটি আলাদা এআই সনাক্তকারী সফটওয়্যারের বার্তাটি পরিষ্কার যে রচনাটির লেখক একজন এআই নকলবাজ।
এআই ব্যবহার করে নকল করছে যে শিক্ষার্থীরা
আমি বেশ কিছুদিন ধরেই জানতাম যে এআই ব্যবহার করে লেখা আমার নিজের পেশা সাংবাদিকতাসহ অনেক খাতের জন্য গুরুতর সব চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
তবুও আমি এক্ষেত্রে অবাক হয়েছিলাম এই কারণে যে স্কুলের একজন ছাত্র ধরে নিয়েছিল রচনা প্রতিযোগিতার জন্য এআইয়ের তৈরি লেখা জমা দেয়াতে বিশেষ দোষের কিছু নেই।
তবে এটা ঠিকই যে শিক্ষার্থীদের নকল করার ব্যাপারটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু যে বিষয়টাতে আমি হতবাক হয়েছিলাম তা হলো এআইয়ের এমন ব্যাপক ব্যবহার আমার ধারণার অতীত ছিল।
নকল করা রচনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার বেশ দুশ্চিন্তাই হচ্ছিল। আট বছর বয়সী এক মেয়ের মা হিসেবে নকল করার কাজে একটি স্কুলের বাচ্চাকে এআই ব্যবহার করতে দেখে আমার মনে হচ্ছিল ভবিষ্যতে শিশুটির অনেক কিছু শেখার রয়েছে। শিক্ষা প্রক্রিয়ায় মূল্যবোধ এবং শিক্ষার দীর্ঘ পদযাত্রার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।
এই নকলবাজদের ধরা যাবে কিভাবে?
তাহলে, কিভাবে আমরা এ ধরনের এআই নকলবাজকে চিহ্নিত করব? এটার কি কোনো সূত্র বা চিহ্ন থাকে?
স্বস্তির বিষয় হলো, এই কাজে এখন নতুন নতুন টুলস তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এরপরও আমরা খুব শিগগিরই দেখতে পাব যে এআই ব্যবহার করে নকল করার সমস্যাটা শিক্ষার জগতের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। এবং তা ঘটলে শুধুমাত্র প্রযুক্তি দিয়ে তা মোকাবেলা করা যথেষ্ট হবে না।
আশ্বস্ত হওয়ার মতো ঘটনা হলো, শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরনের জালিয়াতি রোধে শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদরা ইতোমধ্যেই লেখা পরীক্ষার নানা ধরনের টুলস এবং কৌশল ব্যবহার করছেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টার্নিটিন নামের একটি নকল প্রতিরোধক সফটওয়্যারের কথা। ওই সফটওয়্যারটি ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
গত এপ্রিল মাসে কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের সফটওয়্যার এখন এআই দিয়ে তৈরি লেখা সনাক্ত করতে পারবে।
এর প্রধান নির্বাহী ক্রিস ক্যারেন আমাকে জানিয়েছেন, তাদের সফটওয়্যারটির ‘ফলস পজিটিভ রেট’ (অর্থাৎ ভুল করে এটি যখন মানুষের রচনাকে এআইয়ের লেখা বলে চিহ্নিত করে) তার হার মাত্র এক ভাগ।
এছাড়া আরো অনেক ওয়েব টুল রয়েছে, যার মধ্যে কিছু আমি ওই শিক্ষার্থীর রচনা পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করেছি। যেমন, কপিলিকস, স্যাপলিং ও ইউনস্টন এআই, কিংবা ধরুন জিপিটিজিরো এবং চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক ওপেনএআইয়ের তৈরি ‘এআই ক্লাসিফায়ার’।
এগুলোর বেশিরভাগই আপনি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কোনো লেখা পেস্ট করে দিলেই সাথে সাথে তার ফলাফল জানা যাবে।
এআইয়ের লেখা যেভাবে সনাক্ত করা হয়
কিন্তু একটি এআই টুল কিভাবে অন্য আরেকটি এআইকে সনাক্ত করতে পারে? এর ছোট জবাব হলো লেখার প্যাটার্ন চিহ্নিত করার মাধ্যমে।
প্রশ্নটির দীর্ঘ উত্তর হলো সফ্টওয়্যারের চেকারগুলো এক ধরনের ‘ইউনিক আইডেন্টিফায়ার’ ব্যবহার করে, যা দিয়ে কম্পিউটারের তৈরি টেক্সট থেকে মানুষের লেখা টেক্সট আলাদা করা যায়।
এআইয়ের তৈরি লেখা ধরে ফেলতে দু’টি মেট্রিক ব্যবহার করা হয়। একটি হলো ‘পারপ্লেক্সিটি’ এবং অন্যটি ‘বার্স্টিনেস’।
পারপ্লেক্সিটি পরিমাপ করে একটি ভাষা মডেলের ভেতরে কোন লেখা কতটা ভালো, ব্যাকরণগতভাবে কতটা সঠিক, বাক্য তৈরির ক্ষেত্রে সেটা কতটা ভালো পারফর্ম করছে।
অপ্রত্যাশিত শব্দ ব্যবহার এবং বৈচিত্র্যময় বাক্য তৈরির কারণে মানুষের লেখা রচনার পারপ্লেক্সিটি এইআইয়ের তৈরি রচনার পারপ্লেক্সিটি থেকে ভিন্ন হয়।
বার্স্টিনেস বলতে বুঝায় বাক্যের বৈচিত্র্য।
লিখিত টেক্সটের ক্ষেত্রে এআইয়ের ভাষা অভিন্ন হয়ে থাকে। এর বাক্যের গঠন এবং দৈর্ঘ্য সাধারণত নিয়মিত হয় এবং শব্দ চয়ন ও বাক্যাংশের ব্যবহারে সৃজনশীলতা থাকে খুবই কম।
শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি এবং সংমিশ্রণ, বাক্যাংশের বার বার ব্যবহার এবং বাক্যের কাঠামো এমন সব ক্লাস্টার তৈরি করে যে তা মানুষের লেখা রচনার শব্দভাণ্ডার এবং এর শৈলীর মতো সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় হয় না।
কতটা বুদ্ধিমান এসব স্পটিং টুল?
কিন্তু এআই ক্রমশই মানুষের মতোই উন্নত হয়ে উঠছে এবং ইতোমধ্যে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এসব স্পটিং টুলস এখনো ততটা বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে দেখা যাচ্ছে, জিপিটি ডিটেক্টরগুলো ইংরেজিভাষী নয় এমন লেখকদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছে।
গবেষকরা একটি চীনা ফোরাম থেকে ৯১টি টোয়েফেল (বিদেশী ভাষা হিসেবে ইংরেজির পরীক্ষা) প্রবন্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের হিউলেট ফাউন্ডেশনের অ্যাসাপ (অটোমেটেড স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রাইজ) ডেটাসেট থেকে ক্লাস এইটের ৮৮টি প্রবন্ধের ওপর সাতটি বহুল ব্যবহৃত জিপিটি ডিটেক্টর প্রয়োগ করে এগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করেছেন।
এই ডিটেক্টরগুলো মার্কিন শিক্ষার্থীদের প্রবন্ধগুলোকে সঠিকভাবেই পরিমাপ করতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু চীনা টোয়েফেল প্রবন্ধগুলোর অর্ধেকেরও বেশিকে এসব ডিটেক্টর ‘এআইয়ের তৈরি’ বলে ভুলভাবে চিহ্নিত করে (গড় ফলস পজিটিভ ৬১.৩ ভাগ)।
জিপিটিজিরো কোম্পানির প্রধান নির্বাহী এডওয়ার্ড টিয়ানের মতে, শুধু ডিটেকশন দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে সামান্যই।
তিনি বিশ্বাস করেন, এআইয়ের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহারের ওষুধ ডিটেকশনে নয়, সমাধান লুকিয়ে রয়েছে লেখার ভিন্নতা যাচাই করার জন্য নতুন সব টুলস তৈরি করার মধ্যে।
লেখার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।
এক্ষেত্রে তার যুক্তি হলো, শিক্ষার্থীরা তাদের রচনা তৈরির সময় স্বচ্ছভাবে এবং দায়িত্বের সাথে লেখায় এআইয়ের সাহায্য নেয়ার কথাটা স্বীকার করে নেবে।
টিয়ান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে ভালো লেখক তা প্রমাণ করার জন্য আমরা এই প্রথম মানুষের পরিচালিত ভেরিফিকেশন টুলস তৈরির কাজ শুরু করেছি।’
এআই প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণে মানুষের বুদ্ধিমত্তা
এআইয়ের তৈরি লেখা ছড়িয়ে পড়ায় মানুষের সামনে আসল চ্যালেঞ্জ এখানে। এটা সনাক্ত করতে আমরা সম্ভবত আর শুধু প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে পারব না।
সুতরাং, এখানে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো তথ্যের প্রতি সন্দেহ-প্রবণ, অনুসন্ধিৎসু এক মনোভাব, যা নিয়মিতভাবে সত্যকে যাচাই করে নয়।
সত্যি কথা বলতে কি, এআই-চেকার দিয়ে ওই শিক্ষার্থীর রচনাটি আমি পরীক্ষা করার কথা চিন্তা করেছিলাম। কারণ প্রথম থেকেই আমার মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল।
ফেক নিউজসহ অন্য বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে এখন যে লড়াই শুরু হয়েছে তা ইতোমধ্যেই আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে এই যুদ্ধে স্বয়ংক্রিয় টুলসগুলো যথেষ্ট নয় এবং এই লড়াইয়ের মধ্যে আমাদের প্রয়োজন মানুষের মস্তিষ্ক।
এ বিষয়টি যারা হাতে হাতে ঘটতে দেখেছে তাদের একজন হলেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতর ফরেন, কমনওয়েলথ এবং ডেভেলপমেন্ট অফিসের আইন বিভাগের পরিচালক ক্যাথরিন হোমস।
গত কয়েক দশক ধরে তিনি ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগে কাজ করছেন। তিনি বলছেন, কোনো তথ্য যে ভুয়া তা প্রমাণ করার জন্য মানুষের নেয়া সিদ্ধান্তটি একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘আপনি বুঝার চেষ্টা করছেন তথ্যের এই ছোট অংশটি আসলেই সঠিক কি-না। কিন্তু এটা প্রমাণ করতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে মানুষের অন্তর্দৃষ্টি।’
জালিয়াতির জগতের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।
আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং ফার্ম প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারসে ফরেনসিক সার্ভিসের পরিচালক পদে কাজ করছেন রেচেল জয়েস।
জালিয়াতি ও আর্থিক অনিয়ম তদন্তে তিনি তার ক্লায়েন্টদের সহায়তা করে থাকেন।
তিনি বলেন, মানুষের নজরদারি এবং প্রজ্ঞা এখানে খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, ‘মানুষের সতর্কতা এবং প্রেক্ষাপটের দক্ষতা তদন্তের ক্ষেত্রে একটি নতুন স্তর যোগ করে। এআই এতে খুব একটা দক্ষ না।’
এআইয়ের তথ্য কিভাবে যাচাই করবেন
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কি নিজে এআই-চেকিং করতে পারবেন?
গত কয়েক বছর ধরে আমি ‘দ্য ট্রুথ ডিটেকটিভ’ নামে একটি বই লিখছি, যার মূল বিষয়বস্তু আপনার বিশ্লেষনী চিন্তাশক্তিকে কিভাবে আরো বাড়ানো যায় তা সম্পর্কে।
এখানে কিছু প্রাথমিক শিক্ষা আমি খুঁজে পেয়েছি যেগুলো এআই গোয়েন্দাগিরির কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
আপনার প্রথম কাজ যাচাই করা। আপনি কি তথ্য-পরীক্ষা করতে পারবেন এবং তথ্যের উৎস যাচাই করতে পারবেন? আপনি কি লিখিত কিংবা চাক্ষুষ সাক্ষ্য প্রমাণ- দু’টিই পরীক্ষা করতে পারবেন? সেটা আপনি কিভাবে করবেন?
জবাব হলো ক্রস-চেক করা। আপনি যদি ক্রস-চেক করতে না পারেন কিংবা অন্য নির্ভরশীল উৎস থেকে তথ্যটি যাচাই করতে না পারেন তাহলে ওই তথ্য সম্পর্কে আপনার মনে সন্দেহ বেড়ে যাওয়া উচিত।
টার্নিটিন কোম্পানির ক্রিস ক্যারেন বলেন, ‘জেনারেটিভ এআইয়ের ‘হ্যালুসিনেশন’ বা দৃষ্টিভ্রমের সমস্যা রয়েছে। কোনো কোনো সময় সে নিজেই নিজের মতো করে জবাব তৈরি করে নেয়। যারা কন্টেন্ট ব্যবহার করেন কিংবা যারা এআই ব্যবহার করে আরো বেশি উৎপাদনশীল হতে চাইছেন, তাদের জন্য ফ্যাক্টচেকিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ভাষা, ব্যাকরণ, বানান, বিরামচিহ্ন- এগুলো পরীক্ষা করুন
এর পরের ধাপটি হবে রচনাটি ঘনিষ্ঠভাবে দেখা।
বানান, ব্যাকরণ ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহারের মধ্যে কিছু সূত্র খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে এআইয়ের ডিফল্ট ভাষা হচ্ছে আমেরিকান ইংরেজি। যদি বানান এবং ব্যাকরণ কোনো প্রকাশনা বা লেখকের জন্য উপযুক্ত বলে মনে না হয়, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন- কেন? লেখার মধ্যে কি কোনো কোটেশন বা উদ্ধৃতি রয়েছে? যদি থাকে তাহলে সেগুলো কার? যাদের উদ্ধৃত করা হয়েছে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কি আসলেই কোনো অস্তিত্ব রয়েছে?
রচনায় ব্যবহৃত যেকোনো রেফারেন্সের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন করুন এবং সেগুলোতে কোন তারিখ ব্যবহার করা হয়েছে তা যাচাই করুন।
এআইয়ের লেখার একটি দুর্বলতা হলো এর ডেটা সূত্রের উৎস সীমিত এবং অনেক ক্ষেত্রেই সাম্প্রতিক খবর বা তথ্য তার অজানা।
সবশেষে রচনার সুর এবং লেখার ধরনটি পরীক্ষা করে দেখুন।
এমন কিছু ভাষাগত ছক রয়েছে যা এআই এখনো ঠিক রপ্ত করে উঠতে পারেনি। বিশেষ করে এর লক্ষণ হলো রচনায় সুর এবং ভাষায় আকস্মিক পরিবর্তন।
‘কাল্পনিক উদ্ধৃতি’
এআই সহজেই এমন কিছু জিনিস বানিয়ে লিখতে পারে যা দেখলে মনে হবে খুব বিশ্বাসযোগ্য এবং খুব বাস্তব। নিচের এই উদাহরণটি ক্রস-চেকিং প্রয়োজনীয়তাকেই বিশেষভাবে তুলে ধরছে।
গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত এক ‘অভূতপূর্ব’ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল।
নিউইয়র্কের আইনজীবী স্টিভেন শোয়ার্টজ আদালতে কিছু আবেদনপত্র পেশ করার চেষ্টা করেন। আবেদনপত্রে তিনি যেসব উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন এবং প্রিসিডেন্স হিসেবে যেসব বিচারিক মতামত জমা দিয়েছিলেন তার আসলে কোনো অস্তিত্ব ছিল না।
ওই কাজে তিনি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছিলেন, যেটি তাকে নিশ্চিত করেছিল যে মামলাগুলো ছিল বাস্তব এবং ওয়েস্টল কিংবা লেক্সিসনেক্সিসের মতো আইনি গবেষণা সাইটগুলিতে ওই মতামতগুলোর অস্তিত্ব রয়েছে।
চ্যাটজিপিটিতে তিনি মামলার প্রমাণ দেখানোর নির্দেশ দিলে চ্যাটজিপিটির জবাব ছিল, ‘অবশ্যই! এখানে রয়েছে একটি সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতি…।’
এরপর প্রমাণ হিসেবে চ্যাটজিপিটি একের পর এক কাল্পনিক সব উদ্ধৃতি এবং মামলার বিবরণ তুলে ধরতে থাকে।
শোয়ার্টজ বলেন, ওই ঘটনায় তিনি খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন। চ্যাটজিপিটিকে তিনি গুগলের মতোই বিশ্বাসযোগ্য সার্চ ইঞ্জিন বলে মনে করতেন।
কিন্তু সব ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনা ঘটবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।
আমরা সবাই যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি এক খসড়া ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন এটা স্পষ্ট যে এখন দরকার অনুসন্ধানী মনের।
আমাদের অনুসন্ধান কৌশলের দক্ষতা এবং বিশ্লেষণী চিন্তাশক্তির প্রয়োজন এখন দেখা দেবে আগের চেয়ে অনেক বেশি।
সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।