মারিনা অ্যাব্রামোবিচ ও উলে—দুজন পারফর্মিং আর্টিস্ট। চীনের মহাপ্রাচীরের দুই প্রান্ত থেকে হেঁটে এসে ঠিক মধ্যস্থলে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এখানে এসে যা করলেন তাঁরা, সেটি কেউ ভাবতেও পারেনি। হাজার বছর পুরোনো চীনের মহাপ্রাচীর বা দ্য গ্রেট ওয়াল অব চায়না অসংখ্য শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও অদ্ভুত ঘটনা হলো ‘দ্য গ্রেট ওয়াল ওয়াক’। আলোচিত এই শিল্পী প্রেমিকযুগলের নাটকীয় একটি ‘আর্ট প্রজেক্ট’ হিসেবে এটি সকলের নজর কাড়ে।
মারিনা অ্যাব্রামোবিচ ও ফাঙ্ক উবে লাইসিম (যিনি পরিচিত উলে নামে) দুজনই সত্তরের দশকে পারফর্মিং আর্টে হয়ে উঠেছিলেন সুপরিচিত। ‘এক শরীরে দুই মাথা’ হিসেবে পরিচিত করে তুলছিলেন নিজেদের। তাঁরা যাযাবর জীবন যাপন করতেন। ঘুরে বেড়াতেন ইউরোপের বিভিন্ন গ্রামে-শহরে। পাশাপাশি পারফরম্যান্স তো ছিলই। দুজনের আর্টিস্টিক কোলাবোরেশন তাঁদের ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও মিলে যেত।
পারফরম্যান্সের মাধ্যমে দর্শকদের অবাক করতে কিছু বিপজ্জনক ও অদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিজেদের রাখতেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ‘রিলেশন ইন টাইম’ শোয়ের কথা। যেখানে ১৭ ঘণ্টা দুজনের চুল একসঙ্গে বেঁধে রেখেছিলেন তাঁরা। অসহনীয় পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত একে অপরের মুখে চড় মারার মতো পারফরম্যান্সও করেছেন এ জুটি।
‘রেস্ট এনার্জি’ শিরোনামে তাঁদের একটি পারফরম্যান্স এখনো বেশ আলোচিত। তীর ও ধনুকের ওপর নিজেদের শরীরের ভার ও ভারসাম্য রক্ষা করার বিপজ্জনক এই পজিশনে তাঁরা ৪ মিনিট ১০ সেকেন্ড ছিলেন। তীর তাক করা ছিল অ্যাব্রামোবিচের দিকে। উলের ছোট একটু অসাবধানতায় ঘটে যেতে পারত মারাত্মক দুর্ঘটনা। একে অন্যের প্রতি গভীর বিশ্বাস তাঁদের প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় করে তুলছিল।
দুজনের দারুণ এই বোঝাপড়াকে আরও গভীর করতে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার। কিন্তু স্বাভাবিক কিংবা গতানুগতিক বিয়ে এই খ্যাপাটে দুই শিল্পী করবেন কেন! তাঁরা পরিকল্পনা করেন পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ও দীর্ঘতম প্রাচীরের দুই প্রান্ত থেকে হেঁটে এসে এর মধ্যস্থলে জীবনের নতুন যাত্রা শুরু করার। ১৩ হাজার মাইল লম্বা এই প্রাচীর দেখতে অনেকটা ড্রাগনের মতো। আর এই হাঁটা নিয়ে তাই বেশ আগ্রহ তৈরি হয়ে গিয়েছিল এই শিল্পীযুগলের ঘোষণার পর।
চীনের কর্তৃপক্ষ এই শিল্পীদের অনুমতি দিতে সময় নেয় ৫ বছর। ১৯৮৮ সালের ৩০ মার্চ ড্রাগনের মাথা ও লেজ থেকে যাত্রা করেন মারিনা অ্যাব্রামোবিচ ও উলে। দুই প্রান্ত থেকে হেঁটে এসে মুখোমুখি হন দুজন। তবে এবার শুরু হয় একসঙ্গে থাকা নয় বরং বিচ্ছেদের যাত্রা। ৯০ দিনের হাঁটা শেষে মহাপ্রাচীরের মধ্যস্থলে দাঁড়িয়ে সম্পর্কের ইতি টানেন এই শিল্পীযুগল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।