জুমবাংলা ডেস্ক: একই জমিতে একসাথে তিনটা লাভজনক ফসল চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ হাটখোলার কৃষক মো. দলিল উদ্দিন মোল্লা। প্রগতিশীল কৃষক হিসেবে এবং বৈচিত্র্যময় আধুনিক ফসল চাষে অগ্রণী কৃষক হিসেবে আগে থেকেই এলাকায় তার পরিচিতি রয়েছে।
প্রতিবছর তিনি প্রায় ৫০ শতক জমিতে সবরি কলার আবাদ করলেও এই বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি কলার সাথে মরিচ ও একাঙ্গী সমন্বিতভাবে চাষ করেছেন ২৫ শতক জমিতে। নতুন এই ফসল বিন্যাস ইতোমধ্যেই সফলতার মুখ দেখেছে।
কৃষক মোঃ দলিল উদ্দিন বলেন, ইউটিউওবে কৃষি বায়োস্কোপের ভিডিওতে দুই বছর আগে একাঙ্গীর চাষ দেখি পেয়ারা বাগানে দুই সারির মাঝখানে। আমি প্রতিবছরই সবরি কলা চাষ করি, আমার মনে হলো তাহলে কলা বাগানেও একাঙ্গীর চাষ সম্ভব। এরপর কৃষি অফিসের পরামর্শে ও নিজে রিস্ক নিয়ে কলা মরিচ ও একাঙ্গী চাষ শুরু করি। প্রথমে মনে হচ্ছিলো তিনটা ফসল একসাথে হবে না, এখন দেখছি সবগুলোই ভাল হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করা হয়ে গেছে। আরও বিক্রি হবে। একানী ( স্থানীয় ভাষায় একাঙ্গী কে একানী বলে) খুব ভাল অবস্থায় আছে ৫০-৬০ মণ একানী থেকে এক লাখ টাকার বেশি হবে। কলা বিক্রি করে প্রায় এক লাখ বিশ হাজার টাকার বেশি পাবো আশা করছি। কলার সাকার বেচেও পাওয়া যাবে হাজার বিশেক টাকা। আমার এই ক্ষেত অনেকেই দেখতে আসে, আশে পাশের অনেক কৃষকই বলেছে সামনের বৈশাখে এমন করে তারাও চাষ করবে। পার্শ্ববর্তী জমির কলা চাষি মোঃ স্বপন আলী বলেন:একই কলার চাষ আমিও করেছি কিন্তু দলিলউদ্দিন আমার থেকে লাখ দেড়েক টাকা বেশি পাবে মরিচ ও একানী থেকে। সামনের বছর ইনশাল্লাহ আমিও করবো।
উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুর জানান, এটা একধরনের মাল্টি লেয়ার ক্রপিং টেকনিক। যেখানে একাধিক ফসল একই জমিতে, একই সময়ে চাষ করা হয়। এর ফলে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হয় তেমনি কম খরচে একাধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটা জমি থেকে অধিক আয় করা সম্ভব। আমাদের আবাদি কৃষি জমি দিন দিন কমছে কিন্তু খাদ্য চাহিদা বাড়ছে। এই প্রেক্ষিতে একই জমি থেকে অধিক ফসল উৎপাদন করার কৌশল উদ্ভাবন করাটা সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে কলা চাষ করা যায় এমন জমিকে নতুন এই কৃষি বায়োস্কোপ মাল্টি লেয়ার মিক্সড ক্রপিং মডেল-০১ এর মাধ্যমে একসাথে তিনটা লাভজনক ফসল আবাদের আওতায় নিয়ে এসে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিসহ কৃষকের আয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
একাঙ্গী ( বারি একাঙ্গি-০১) আদা ও হলুদের মত মশলা জাতীয় বাণিজ্যিক ফসল যা হালকা ছায়া পছন্দ করে ফলে কলা গাছের দুই সারির মাঝে অনায়াসে লাগানো যায়, কার্পেটের মত মাটিতে হয় বিধায় আগাছা বাড়তে পারে না, মাটির আদ্রতা ধরে রাখে এবং এর গন্ধে পোকার আক্রমণ কম হয়। আর প্রতি দুইটা কলা গাছের মাঝের ফাকা লাইনে মরিচ গাছ লাগানো যায় যা ৪ ফুট মত উচ্চতায় থাকে বলে পর্যাপ্ত সুর্যের আলো পায়। এই তিনটা ফসলের রুট জোন ও মাইক্রো ক্লাইমেটিক চাহিদা ভিন্ন হওয়ায় একে অপরের সাথে পানি ও পুষ্টি গ্রহণে কোন প্রতিযোগিতা করে না। ফলে সবগুলো ফসল থেকেই ভাল ফলন পাওয়া যায়। কলার ক্ষেত্রেও উন্নত মানের সবরি কলার জাত ব্যবহার করা হয়েছে এবং কলা বিটল পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা করতে ও দাগহীন করতে বিশেষ ব্যাগ দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে যা কলার বাজারমূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি বায়োস্কোপের উপদেষ্টা মো. হামিদুর রহমান বলেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে: এক ইঞ্চি আবাদি জমিও যেন পতিত না থাকে, সেই নির্দেশনার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে এই মিশ্র ফসল চাষের মডেলে। বিগত কয়েকবছর ধরে আমরা কৃষকপর্যায়ে লাভজনক ফসল আবাদের কৌশলগত বিষয় নিয়ে কাজ করছি। মরিচ, সবরি কলা ও একাঙ্গী তিনটাই লাভজনক ফসল এবং এই তিনটা ফসলকে একত্রে চাষ করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার যেমন নিশ্চিত করা যায় তেমনি কম খরচে অধিক ফসল ফলানোর কাজটাও লাভজনক উপায়ে করা সম্ভব। কৃষক দলিল উদ্দিন একজন প্রগতিশীল প্রতিভাবান কৃষক। কৃষি বায়োস্কোপের পক্ষ থেকে তাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হলে তিনি অত্যন্ত সফলভাবে নতুন এই লাভজনক ফসল বিন্যাস মাঠে বাস্তবায়ন করেছেন। তার এই সফলতা দেখে আশেপাশে অনেক কৃষক এই ধরনের চাষাবাদে অনুপ্রাণিত হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।