আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বিশ্ব ব্যবস্থায় জেগে ওঠা ক্ষমতার নতুন কেন্দ্র এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছে এবং পুরনো ব্যবস্থা আর কখনো ফিরে আসবে না। খবর পার্সটুডে’র।
গতকাল (শুক্রবার) রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে দেয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট পুতিন একথা বলেছেন। ক্রেমলিন তার এই বক্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে।
পুতিন বলেন, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা এরইমধ্যে বুমেরাং হয়েছে এবং পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট চরমভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, কথিত ‘গোল্ডেন বিলিয়ন’ দেশগুলো এখনো মনে করে তারা উচ্চ মর্যাদার অধিকারি এবং অন্য দেশগুলোকে তারা তাদের উপনিবেশ মনে করেন। এর মাধ্যমে তারা পুরো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করে।
বার্ষিক অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে দেয়া বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্র আমেরিকার কর্তৃত্ব মানতে না চায় তাহলে আমেরিকা সেই ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রের সম্পদ লুট করে নিতে পারে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তাকে পাগলামি এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করেন পুতিন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে তার রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে এবং অন্যের বাঁশির সুরে তাদের আমলারা নাচছে। উপর থেকে তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে তারা তাই মেনে নিচ্ছেন এবং তারা তাদের দেশের জনগণের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের মূল্য দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের কারণে তাদের ক্ষতির পরিমাণ এ বছরে ৪০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
জ্বালানির দাম এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার জন্য যারা রাশিয়াকে দায়ী করেন তাদের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, রাশিয়াকে দোষারোপ করা বোকামি এবং এই দোষারোপ করা হচ্ছে মূলত যারা লেখাপড়া জানে না তাদেরকে বোকা বানানোর জন্য। তিনি বলেন, “আমাদেরকে দোষারোপ করবেন না; নিজেদেরকে দোষারোপ করুন।”
পুতিন সুস্পষ্ট করে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোর গ্যাস আমদানির ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ছিল তা বাদ দেয়ার কারণে জ্বালানির দাম বেড়েছে।
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য তিনি রাশিয়ার সার এবং খাদ্যশস্য রপ্তানির ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় তাহলে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে মার্কিন প্রশাসন এবং ইউরোপীয় আমলাতন্ত্র দায়ী থাকবে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। এজন্য তারা সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে রাশিয়ার শিল্প, অর্থনীতি, জীবনমান বিপর্যস্ত করতে চেয়েছিল কিন্তু তাদের সেই লক্ষ্য অর্জন করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের যে সমস্ত দেশে দুর্ভিক্ষ অনেকটা অত্যাসন্ন, সেসব দেশে রাশিয়া খাদ্য পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে কিন্তু এ ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক, পরিবহন এবং লজিস্টিক সংকট চাপিয়ে দিয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, পশ্চিমারা তাদের দায়িত্ব মেনে না চলার কারণে মস্কো এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল তবে এটি প্রয়োজনীয় ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পুতিন বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে রাশিয়া তাদের স্বার্থ এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অধিকার রাখে। একই সাথে পশ্চিমাদের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ইউক্রেনের নাজিবাদী সরকার দোনবাসের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা চালিয়েছিল তা থেকে ওই অঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কর্তব্যও রাশিয়ার রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।