জুমবাংলা ডেস্ক: “মামা, একটা নিলে ১৫ টাকা, ১০ টাকার কোনো কলা নাই,” হাসতে হাসতে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর নিউ ইস্কাটন এলাকার পাম্পের গালির রাস্তার ধারের কলা বিক্রেতা আবুল বাশার। টিবিএস-এর প্রতিবেদক জয়নাল আবেদীন শিশির-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
মাত্র ১০-১৫ দিন আগেও একটি কলার দাম যেখানে ১০ টাকা ছিল, সেখানে এখন এত দাম বেড়েছে কেন জিজ্ঞেস করতে তিনি বলেন, “সব জিনিসের দাম বেশি এখন। এসব কলা কিনতেই হালিতে আমার ৪৪ টাকা পড়েছে। তাই এই দামের নিচে বিক্রি করলে আমাদের পোষাচ্ছে না।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট কলা উৎপাদন হয়েছে ২০ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ২২ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন ।
তাহলে কি কলার উৎপাদন কমেছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এবং কলার প্রকৃত দাম জানতে সরেজমিনে দেখতে যাওয়া হয় রাজধানীর কারওয়ানবাজার, ওয়াইজঘাট, বাদামতলী পাইকারি বাজারে।
কারওয়ানবাজারে সাধারণত ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, নেত্রকোনা ইত্যাদি এলাকা থেকে বড় ট্রাকে করে ব্যবসায়ীরা কলা এনে থাকেন। আর ওয়াইজঘাট এবং বাদামতলীতে বরিশাল, পিরোজপুর,বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর এ সমস্ত দক্ষিণাঅঞ্চল থেকে কলা আসে।
কারওয়ানবাজারের পাইকারি কলা ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “কলার উৎপাদন কমেনি। কিন্তু তেল-সার-যাতায়াত- লেবার ইত্যাদি খরচ সম্প্রতি বেড়ে যাওয়ায় কলার উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তাই বর্তমানে সব পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে কলার দামও বেড়ে গেছে।”
কলা ক্ষেত থেকেই এক ছড়ি কলার দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, “আগে আমি যশোরের সাদ্দামপুর থেকে যে সাগর কলার পোন (৮০ পিস) ৫০০ টাকা দিয়ে আনতাম, তা এখন ৬০০ টাকা হয়ে গেছে। তেলের দাম বাড়ায় আমাদের যাতায়াত খরচও বাড়ছে। সবমিলিয়ে আমাদেরও বাঁচতে হবে।”
রাজধানীর বেশ কয়েকটি চা দোকান ঘুরে কোথাও ১০ টাকার নিচে কলা পাওয়া যায়নি। কিছু দোকানে এতদিন বড় সাইজের যে কলা ১০ টাকায় বিক্রি হতো, মূল্যস্ফীতির প্রভাবে তা এখন বেড়ে ১৫ টাকা হয়ে গেছে।
রাজধানীর ওয়াইজঘাট এলাকার কলার পাইকারি আড়ৎদার নাসির শেখ বলেন, “সবরি, চম্পা, সাগর, কাঠালী ও নেপালী কলা আমরা বিক্রি করে থাকি। পিরোজপুরের সবরি কলা এখন সবচেয়ে বেশি আছে বাজারে। এই কলার পোন ৬০০-৭০০ টাকা, এছাড়াও চম্পা কলা ২০০-২৫০ টাকা করে পোন কিনতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, এখন সব জিনিসের দাম বেশি। লঞ্চ ভাড়া বাড়ছে।
আগে প্রতি ছড়ি কলার জন্য সদরঘাটে টোল দিতে হতো ৪ টাকা, করোনার পর থেকে সেই জায়গায় দিতে হয় ১২ টাকা। মূলত, যাতায়াত খরচ বাড়ার কারণেই কলার দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।
মগবাজার এলাকার রিকশাচালক আব্দুল কাউয়ুম বলেন, “আগে ৭ টাকায় কলা, আর ১০ টাকায় বনরুটি খেতাম। এখন ১০ টাকার নিচে তো কোনো কলাই নেই, রুটিও হয়ে গেছে ১৫ টাকা। তাই কলা ছাড়াই অনেক সময় রুটি খাই।”
তিনি আরো বলেন, ৩ মাস আগে ৩ টাকায় বিস্কুট পাওয়া যেত; আর এখন ৫ টাকার নিচে কোনো বিস্কুট নেই।
তার কথার সত্যতা মিললো ইস্কাটন এলাকা ঘুরে। এই এলাকার চা দোকানি নুরুল ইসলাম বলেন, “এখন ৫ টাকার নিচে কোনো বিস্কুট নেই। যেগুলো আগে ৩ টাকা- ২ টাকা ছিল সেগুলো এখন সবই ৫ টাকা বিক্রি করতে হয়। ৫ টাকার রং চা এখন ৭ টাকায় বিক্রি করি।”
দেশের ৬৪ জেলায় ২ হাজার ৬৭৫ জন নিম্ন আয়ের মানুষ নিয়ে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চালানো এক জরিপে দেখা যায়, চরম দারিদ্র্যের হার আগের তুলনায় বেড়ে গেছে ৬০ শতাংশ।
১৪ শতাংশ মানুষের ঘরে কোনো খাবার নেই। তাদের মধ্যে দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালকেরও একটি বড় অংশ রয়েছে।
করোনাকালীন ২০২১ সালের ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিলের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়।
এছাড়া, সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২০ সালের মার্চ থেকে অক্টোবর পযন্ত পাঁচ মাসের একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে দেখা যায়, করোনাকালীন সময়ে দেশে মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ।
যাদের আয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে ছিল ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা, তাদের আয় আগস্ট মাসে এসে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৪৯২ টাকায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, “বিবিএসের তথ্যে যা উঠে এসেছে তার থেকেও মানুষ বেশি বিপদের মধ্যে আছে। বর্তমানে দেশের বাজারে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক।”
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.