বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: গ্রহাণুটির নাম ২০২৩ বিইউ। আকারে মিনিবাসের সমান। বলতে গেলে পৃথিবীর কানের কাছ দিয়ে অতিক্রম করল। গত ২৬ জানুয়ারি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ ভাগের ওপর দিকে অতিক্রম করে যায় স্থানীয় সময় রাত সাড়ে বারোটার দিকে।
পৃথিবী থেকে গ্রহাণুটির সর্বনিম্ন দূরত্ব ছিল মাত্র ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। এ দূরত্ব মহাকাশে স্থাপন করা অনেক কৃত্রিম উপগ্রহ থেকেও কম।
গত সপ্তাহে ক্রিমিয়ার জ্যোতির্বিদ গিন্নাদি বোরিসভ প্রথম শনাক্ত করেন গ্রহাণুটিকে। তখনই বিজ্ঞানী মহলে এর কক্ষপথ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়। খুব দ্রুত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, গ্রহাণুটি পৃথিবীতে আঘাত হানবে না। এমনকি কোনো স্যাটেলাইটে আঘাত করার সম্ভাবনাও ছিল ক্ষীণ।
এটি প্রস্থে ৩ দশমিক ৫ মিটার ও দৈর্ঘ্যে ৮ দশমিক ৫ মিটার। ফলে যদি গ্রহাণুটি পৃথিবীকে আঘাতও হানত, তেমন উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হত না। বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে সাধারণত পরিভ্রমণ পথেই গ্রহাণু খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। তৈরি হয় ছোট আগুনের গোলা। সে হিসেবে ২০২৩ বিইউর পতন খুব বেশি প্রভাবিত করত না।
আরও স্পষ্ট করে বললে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার আকাশে প্রবেশ করা উল্কার নাম নেয়া যেতে পারে। বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছিল চেলিয়াবিনস্ক নামের উল্কাটি। বিস্তৃতি প্রায় বিশ মিটার। বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়েছিল তীব্র শব্দতরঙ্গ। তাতে করে ভেঙে গিয়েছে কিছু বাড়িঘরের জানালার কাঁচ।
তবে নাসা প্রকাশ করেছে অবাক করা এক তথ্য। ২০২৩ বিইউ গ্রহাণুটি পৃথিবীর কাছে চলে আসার কারণে এর কক্ষপথ পরিবর্তিত হয়েছে। পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। পৃথিবীর মুখোমুখি হওয়ার আগে সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহাণুটি পরিভ্রমণকাল ছিল ৩৫৯ দিন। এবার তা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে গেছে। এখন প্রতিটি পরিভ্রমণ শেষ করতে তার সময় লাগবে ৪২৫ দিন।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর আশপাশের গ্রহাণুগুলো শনাক্ত করতে বেশ তৎপর। বিশেষ করে যে গ্রহাণুগুলো আঘাত হানলে পৃথিবীর ক্ষতি হতে পারে। ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত শিলার আঘাতেই পৃথিবী থেকে ডাইনোসর নিশ্চিহ্ন হয়েছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। অবশ্য বড় গ্রহাণুগুলো এর মধ্যে আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, সম্ভবত ৪০ শতাংশ গ্রহাণু শনাক্ত করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়েছে। ছোট গ্রহাণুগুলো যদি কোন বসতিপূর্ণ শহরে আঘাত হানে, ক্ষতি নেহায়েত কম হবে না।
উল্লেখযোগ্য আরেকটি বিষয় হলো, গত বছর মহাকাশে একটি গ্রহাণুতে আঘাত হেনে এর কক্ষপথ পাল্টে দিতে সক্ষম হয় নাসা। যদিও গ্রহাণুটি ক্ষতিকর ছিল না। এর কক্ষপথে ছিল না পৃথিবী। কিন্তু এই সফল আক্রমণ থেকে জানা গেছে, পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে এমন মহাজাগতিক বস্তুকেও আমরা সরিয়ে দিতে পারি।
তবে আশঙ্কা যে একদমই থাকে না, এমন নয়। ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডন পোলাকো বিবিসিকে বলেছেন, পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা এমন অনেক গ্রহাণুই রয়েছে, যাদের আবিষ্কার করা হয়নি। ২০২৩ বিইউ তেমনই আবিষ্কার। অনাবিষ্কৃত গ্রহাণুগুলো যেকোনো সময় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারে। পৃথিবীতে আঘাত হেনে স্থাপন করতে পারে ক্ষয়ক্ষতির নজির।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।