জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবনাবসান হয়েছে। তার মৃত্যুর পর নতুন করে আলোচনায় সূত্রপাত হয়েছে, তার রেখে যাওয়া সম্পদই বা কারা কারা পাবেন। দলের নীতি-নির্ধারণী কমিটিতে কোনো যোগ-বিয়োগ হচ্ছে কিনা।
১৪ জুলাই, রবিবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কারা পাচ্ছেন এরশাদের সম্পদ?
আলোচনায় এসেছে এরশাদের সম্পদও। তার বিপুল সম্পতির মালিকানা কে বা কারা পাচ্ছেন। তার পুত্র এরিক এরশাদ, না তার প্রথম স্ত্রী রওশান এরশাদ? নাকি অন্য কেউ? তবে এরশাদ তার সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি একটি ট্রাস্টের নামে দান করেছেন।
গত ৭ এপ্রিল রাজধানীর বারিধারায় তার নিজের বাসভবনে পাঁচ সদস্যের এই ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে লিখিতভাবে বোর্ডকে সম্পত্তি দান করেন এরশাদ। এই ট্রাস্টের নাম কি দেওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি। এরশাদ ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন, এরশাদের ছেলে এরিক এরশাদ, একান্ত সচিব মেজর (অব.) খালেদ আক্তার, চাচাতো ভাই মুকুল ও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
এই ট্রাস্টের সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসা, গুলশানের দুটি ফ্ল্যাট, বাংলামোটরের টাইলসের দোকান, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় স্থাপিত পদাগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজ, রংপুর শহরের মডার্নের নিজ বাসা পল্লী নিবাস, পিতার নামের মকবুল হোসেন হাসপাতাল, রংপুরে জাতীয় পার্টির সুবিশাল কার্যালয়, ১০ কোটি টাকার ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট। এরশাদকে এই ট্রাস্ট গঠনের যাবতীয় কাজ তদারকি করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের সময় রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী হিসেবে এইচ এম এরশাদ ইসিতে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন তাতে তিনি বার্ষিক এক কোটি আট লাখ টাকা আয়ের কথা জানিয়েছেন।
সম্পদের বিবরণীতে তিনি আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার, অনির্ধারিত ব্যবসা, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বেতন, সম্মানীর কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়াও রাজধানীর গুলশান ও বনানীতে সর্বশেষ তিনি দুটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন যার মূল্য যথাক্রমে ৬ কোটি ২০ লাখ ও ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকে এরশাদের ঋণ রয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। তিনি নিজেও এ ব্যাংকের একজন পরিচালক। ব্যাংকটি থেকে তিনি বার্ষিক ৭৪ লাখ টাকা বেতন হিসেবে পান জানান হলফনামায়।
পার্টির কয়েকজন নেতা বলেন, গত জানুয়ারিতেও একবার এরশাদ তার সমস্ত সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছেন বলে তারা শুনেছিলেন। তখন তার সম্পত্তির একটি বিবরণ ও কাকে কী সম্পত্তি দেওয়া হলো, এমন কথাও জেনেছিলেন।
জাতীয় পার্টির নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এরশাদ তার বড় ছেলে আল মাহিগীর শাদ এরশাদ (রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকেন), ছোট ছেলে শাহতা জারাব এরিক (বিদিশা এরশাদের ঘরের), পালিত কন্যা জেবিন (লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন) ও ভাই-ভাতিজার মধ্যে বড় সম্পদের বড় অংশ ভাগ করে দেন। কিছু সম্পদ এরশাদের কয়েকজন পালিত কন্যা এবং কিছু সম্পত্তি পার্টির অফিস ও এতিমদের জন্য ট্রাস্টে দেওয়া হয়েছে বলেও তখন প্রচার পায়।
এরশাদের কী পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে? জানতে চাইলে পার্টির কয়েকজন নেতা জানান, রংপুরে বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তি এবং রংপুর সদরের পদাগঞ্জে কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। গুলশান-২-এর বাড়িটি রওশন এরশাদকে দিয়েছেন এরশাদ বহু আগেই। বারিধারার ১০ নম্বর দূতাবাস রোডের ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ যেখানে তিনি নিজে বসবাস করেন সেটি তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের একমাত্র ছেলে এরিক এরশাদের নামে দেওয়া হয়েছে।
তারা দাবি করেন, পালিত পুত্র আরমানকে দেওয়া হয়েছে গুলশানের অপর একটি ফ্ল্যাট। রংপুরের সম্পত্তি পেয়েছেন তার ভাই জি এম কাদের ও এক ভাতিজা। রংপুরের জাতীয় পার্টি অফিস দলকে দান করেছেন।
নেতারা আরও জানান, কয়েক বছর আগে চলচ্চিত্র পরিচালক শফি বিক্রমপুরির কাছ থেকে কেনা ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয়টি এরশাদের ব্যক্তিগত নামে ছিল। এটি তিনি পার্টিকে দান করেছেন। এরশাদের গুলশান বনানী এলাকায় বিভিন্ন মার্কেটে দোকান রয়েছে। এরশাদের নগদ টাকাসহ সম্পত্তি কী কী আছে তা পরিষ্কারভাবে দলীয় নেতাকর্মীরা জানেন না।
‘তবে কী পরিমাণ সম্পত্তি এরশাদের রয়েছে, তা কেউ জানে না’, বলেন পার্টির এক প্রেসিডিয়াম মেম্বার। তিনি বলেন, ‘আমরা মুখে মুখে যেটুকু শুনি, সেটুকুই। স্যার নিজেও কোনো দিন এসব নিয়ে গল্প করেন না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।