জুমবাংলা ডেস্ক : আফরোজা বেগম ও তার গৃহকর্মী দিতিকে একাই হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে নতুন সেই গৃহকর্মী সুরভী আক্তার নাহিদা।
২৩ বছর বয়সী এই তরুণী জানিয়েছে, বাসা থেকে বের হতে না দেয়ায় সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
যদিও তার এমন বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। যে কারণে সবদিক বিবেচনায় রেখেই হত্যা মামলার তদন্তের কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহেল কাফি।
সোমবার তিনি বলেন, জোড়া হত্যার এই মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে৷ সবকিছু বিবেচনায় রেখে তারা এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করবেন।
এর আগে রোববার রাতে রাজধানীর আগারগাঁও বস্তি থেকে গৃহকর্মী সুরভীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে সুরভী জানায়, এলাকার স্থানীয় এক পান বিক্রেতার সাথে তার আগে থেকে পরিচয় ছিল। নিহত আফরোজার জামাতা মনির উদ্দিনের বডিগার্ড আতিকুল হক বাচ্চু ওই পান বিক্রেতার দোকান থেকে নিয়মিত পান কিনতেন। বাচ্চু ওই পান বিক্রেতাকে বলেছিলেন নতুন একজন গৃহকর্মীর খোঁজ নিতে। পরে ওই পান বিক্রেতার মাধ্যমেই বাচ্চুর সাথে শুক্রবার আফরোজাদের বাড়িতে যায় সুরভী।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, বাচ্চু ওই বাসায় কাজে নিয়ে গেলেও, তার আচরণ ভালো লাগেনি সুরভীর। শুক্রবার বাচ্চু তাকে ওই বাসায় নিয়ে যায়। এরপর আফরোজা বেগম প্রথম দিনেরমতো সুরভীকে দিয়ে কিছু কাজ করান। কাজ শেষে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে চায় সুরভী। কিন্তু তাকে বাধা দেয় আফরোজাদের পুরনো গৃহকর্মী দিতি। এক পর্যায়ে দিতি ও সুরভীর মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন সুরভী রান্নাঘর নেয়া ছুরি দিয়ে দিতির গলা, পিঠ আর বুকে আঘাত করে।
এরপর আফরোজার কক্ষে গিয়ে সুরভী বলে- সে বাইরে যেতে চায়। তখন আফরোজা জানতে চায়, অন্য ঘরে দিতি চিৎকার করল কেন। সুরভী তখন বলে, তাকে বাইরে যেতে দেয়নি বলে ঝগড়া করেছে। তখন আফরোজা বলে, যে তোকে এনে দিয়ে গেছে সে না বলা পর্যন্ত তোকে যেতে দেব না। এ সময় সুরভী অফরোজাকে গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে গেট খুলে পালিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে সুরভী আরো জানায়, সে ভয় পাচ্ছিল, বাচ্চু তাকে পাচার করে দিতে পারে অথবা অন্য কোনো অনৈতিক কাজ করাতে পারে।
হত্যাকাণ্ডের পর বাসা থেকে তিনটি মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, সঞ্চয়পত্র ও সোনাসহ অনেক কিছু খোয়া গেছে বলে অভিযোগ করেছিল আফরোজার পরিবার। তবে সুরভী পুলিশকে জানিয়েছে, সে একটি আইফোন নিয়ে গিয়েছিল। সেটি চার হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বডিগার্ড বাচ্চু, সিকিউরিটি গার্ড নুরুজ্জামান, কেয়ারটেকার বেলাল, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি প্রিন্স ও সেই পান বিক্রেতা। গৃহকর্মী সুরভীর সাথে তারাও এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারেন এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তাদের মামলার সন্দেহভাজন আসামি করেছেন আফরোজার মেয়ে দিলরুবা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুরভী একাই হত্যাকাণ্ড ঘটনার কথা জানালেও বাকিদের এখনই সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে না। বাচ্চু জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন যে তিনি সুরভীকে তেমন ভালোভাবে চেনেন না। অথচ তদন্তে দেখা গেছে হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে কমপক্ষে অর্ধশতবার সুরভীর সাথে মোবাইলে তার যোগাযোগ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির ২৮নং রোডের ২১নং বাড়ি থেকে গৃহকত্রী আফরোজা বেগম ও গৃহপরিচারিকা দিতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত আফরোজা বিজিএমইএ পরিচালক ও শিল্পপতি কাজী মনির উদ্দিনের শাশুড়ি।
ওই ঘটনায় রোববার সকালে নিহত আফরোজা বেগমের মেয়ে দিলরুবা বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।