ঢাকার কোলাহলি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকেন মৌসুমী। চারপাশে মানুষের ভিড়, অফিসের ব্যস্ততা, সোশ্যাল মিডিয়ায় শত শত ‘ফ্রেন্ড’। তবুও গভীর রাতে একটা শূন্যতা বুকের ভেতর পাথরের মতো চেপে বসে। নিজেকে মনে হয় দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন। মৌসুমীর মতো কোটি কোটি মানুষ, বিশেষ করে আমাদের এই নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতায়, প্রতিদিন একাকীত্ব নামক নিঃশব্দ মহামারীর মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু আশার কথা হলো, এই ঘন কুয়াশা ভেদ করেও আলোর রেখা আছে – আর সেই আলোর উৎস আত্মবিশ্বাস। জীবনে ফিরুন আত্মবিশ্বাসে, এই স্লোগানটি শুধু উৎসাহবাক্য নয়, একাকীত্ব কাটানোর এক শক্তিশালী, বিজ্ঞানসম্মত হাতিয়ার। এই লেখায় আমরা খুঁজে বের করব, কিভাবে আত্মবিশ্বাসের সিঁড়ি বেয়ে একাকীত্বের গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসা যায়, নিজের জীবনের নাটোরিয়ায় ফেরার পথ।
একাকীত্ব কেন? আত্মবিশ্বাসের অভাবই কি মূল কারণ?
(H2: একাকীত্বের শেকড়ে: আত্মবিশ্বাসহীনতার গভীর প্রভাব)
একাকীত্ব শুধু শারীরিকভাবে একা থাকা নয়। এটি একটি জটিল, বেদনাদায়ক মানসিক অবস্থা – যেখানে ব্যক্তি সামাজিক সংযোগ বা ঘনিষ্ঠতার অভাব বোধ করেন, এমনকি লোকজনের ভিড়ের মধ্যেও। বাংলাদেশে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ও বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে এই সমস্যা প্রকট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে (২০২৩) উল্লেখ করা হয়েছে, নগরায়ন, পরিবার কাঠামোর পরিবর্তন এবং ডিজিটাল নির্ভরতা একাকীত্বকে উসকে দিচ্ছে।
এখানেই আত্মবিশ্বাস চাবিকাঠির ভূমিকা পালন করে। আত্মবিশ্বাসহীনতা কিভাবে একাকীত্বের জন্ম দেয়?
- সামাজিক সংযোগে বাধা: নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা (“আমি যথেষ্ট ভালো নই”, “আমার কথা কেউ শুনতে চাইবে না”) সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় ভয় ও দ্বিধা সৃষ্টি করে। ফলে নতুন সম্পর্ক গড়া বা বিদ্যমান সম্পর্ক গভীর করা কঠিন হয়ে পড়ে।
- অতিসংবেদনশীলতা প্রত্যাখ্যানের প্রতি: আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে সামান্য উদাসীনতা বা প্রত্যাখ্যানকেও ব্যক্তিগতভাবে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এতে সামাজিক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার প্রবণতা তৈরি হয়।
- অভ্যন্তরীণ শূন্যতা: প্রকৃত সংযোগের অভাব শুধু বাইরের নয়, নিজের সঙ্গেও সংযোগহীনতার অনুভূতি তৈরি করে। আত্মবিশ্বাসই আমাদের নিজের ভালোলাগা, মন্দলাগা, চাহিদাকে বুঝতে ও মূল্য দিতে শেখায়, যা একাকীত্ব দূর করে।
- নেতিবাচক চিন্তার চক্র: একাকীত্ব প্রায়ই হতাশা ও উদ্বেগকে ডেকে আনে, যা আবার আত্মবিশ্বাসকে আরও ক্ষুণ্ণ করে। এই দুষ্টচক্র ভাঙতে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো জরুরি।
মনোবিজ্ঞানী ডঃ ফারহানা আহমেদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক) বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিজের সক্ষমতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন, তারা সামাজিক পরিস্থিতিতে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, প্রত্যাখ্যানকে সহজভাবে নিতে পারেন এবং অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হন। আত্মবিশ্বাস একাকীত্বের বিরুদ্ধে এক ধরনের আবেগগত প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। [Internal Link: মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা]
আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার বিজ্ঞানসম্মত ৫ উপায়: একাকীত্ব দূর করার প্রথম ধাপ
(H2: একাকীত্ব দূর করার উপায়: আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার কার্যকরী কৌশল)
জীবনে ফিরুন আত্মবিশ্বাসে – এই পথযাত্রা সহজ নয়, কিন্তু অসম্ভবও নয়। গবেষণা-ভিত্তিক কিছু কৌশল যা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করে আপনি ধীরে ধীরে নিজের ভিত মজবুত করতে পারেন:
ক্ষুদ্র লক্ষ্য নির্ধারণ ও সাফল্য উদযাপন (The Power of Small Wins):
- কী করবেন: প্রতিদিনের জন্য খুব ছোট, অর্জনযোগ্য লক্ষ্য ঠিক করুন। যেমন: একজন অপরিচিতের সাথে হেসে কথা বলা, পছন্দের একটি কবিতা পড়া শেষ করা, ১৫ মিনিট হাঁটা।
- কেন কাজ করে: ছোট ছোট সাফল্য মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ ঘটায়, যা আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি দেয়। এগুলো জমতে জমতে ধীরে ধীরে “আমি পারি” এই বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের মতে, ছোট জয়ের ধারাবাহিকতাই দীর্ঘমেয়াদি আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করে।
নেতিবাচক আত্ম-কথোপকথনকে চ্যালেঞ্জ করুন (Cognitive Restructuring):
- কী করবেন: যখন মনে হবে “আমি কিছু পারব না” বা “লোকে আমাকে পছন্দ করে না”, তখন থামুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন: “এর প্রমাণ কী?”, “এটা কি সত্যিই যুক্তিযুক্ত?”, “আমি কি বন্ধুকে এ কথা বলতাম?”। তারপর একটি বাস্তবসম্মত ও ইতিবাচক বক্তব্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন (“এটা চেষ্টা করে দেখা যাক”, “সবাই সবসময় সবার পছন্দ হয় না, সেটা স্বাভাবিক”)।
- কেন কাজ করে: এটি Cognitive Behavioral Therapy (CBT)-এর মূলনীতি। আমাদের চিন্তাভাবনা অনুভূতি ও আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। নেতিবাচক চিন্তার প্যাটার্ন ভেঙে ইতিবাচক ও বাস্তবসম্মত চিন্তা স্থাপন করাই এর উদ্দেশ্য।
দেহভঙ্গিমার শক্তি (Power Posing):
- কী করবেন: দিনে মাত্র ২ মিনিট নিজেকে শক্তিশালী ভঙ্গিমায় দাঁড় করান (হাত কোমরে, বুক ফুলিয়ে, মাথা উঁচু করে – যেমন সুপারহিরোদের ভঙ্গি!)। স্ট্রেসফুল পরিস্থিতির (ইন্টারভিউ, সোশ্যাল ইভেন্ট) আগে এটি করুন।
- কেন কাজ করে: হার্ভার্ডের অধ্যাপক অ্যামি কাডির গবেষণা (যদিও কিছু বিতর্ক আছে, তবে মূলনীতি কার্যকর) দেখায়, শক্তিশালী ভঙ্গিমা শরীরে টেস্টোস্টেরন (আত্মবিশ্বাসের হরমোন) বৃদ্ধি ও কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমাতে সাহায্য করে, যা আচরণে আত্মবিশ্বাস আনে।
নতুন কিছু শেখা ও দক্ষতা অর্জন (Mastery Experiences):
- কী করবেন: এমন একটি নতুন কাজ বা দক্ষতা শেখা শুরু করুন যা সামান্য চ্যালেঞ্জিং কিন্তু আপনার আগ্রহের। হতে পারে গান শেখা, রান্নার নতুন রেসিপি, ছবি আঁকা, কোনো সফটওয়্যার শেখা, বা স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত হওয়া।
- কেন কাজ করে: নতুন কিছু শেখা এবং তাতে দক্ষতা অর্জন সরাসরি আমাদের যোগ্যতা ও সক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস বাড়ায় (“যদি এটা শিখতে পারি, তবে আরও অনেক কিছু পারব”)। এটি আত্ম-কার্যকারিতার (Self-Efficacy) অনুভূতি জাগ্রত করে, যা আত্মবিশ্বাসের মূল স্তম্ভ।
- আত্ম-দয়া অনুশীলন (Self-Compassion):
- কী করবেন: নিজের প্রতি এমনই দয়ালু ও বোঝাপড়ার মনোভাব রাখুন, যেমন রাখতেন একজন কাছের বন্ধুর প্রতি যখন সে ভুল করে বা কষ্ট পায়। নিজেকে বলুন, “এটা ঠিক আছে, আমি মানুষ। ভুল হতেই পারে। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।”
- কেন কাজ করে: ডঃ ক্রিস্টিন নেফের গবেষণা দেখায়, আত্ম-দয়া হতাশা ও উদ্বেগ কমায় এবং আত্মবিশ্বাস ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। যখন আমরা নিজের ভুলত্রুটিকে কঠোরভাবে বিচার না করে বরং বুঝতে ও গ্রহণ করতে শিখি, তখন ব্যর্থতাও আমাদের দুর্বল করে না, বরং শেখার সুযোগ হয়ে ওঠে। [External Link: Self-Compassion.org – Dr. Kristin Neff’s Research]
ঢাকার গল্প: রিফাতের যাত্রা – একাকীত্ব থেকে আত্মবিশ্বাসে ফেরা
(H2: বাস্তব জীবনে একাকীত্ব দূর করার উপায়: এক তরুণের আত্মবিশ্বাসে ফেরার গল্প)
রিফাত, মিরপুরে বসবাসকারী একজন ২৮ বছর বয়সী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি আছে, বেতনও ভালো, কিন্তু অফিসের পর নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে এক গভীর শূন্যতা তাকে গ্রাস করত। বন্ধুদের আড্ডায় নিজেকে অপ্রাসঙ্গিক মনে হত, ডেটিং অ্যাপগুলোও ব্যর্থতার অনুভূতি বাড়াত। একাকীত্ব তার আত্মবিশ্বাসকে তলানিতে ঠেলে দিয়েছিল। তারপর সে সিদ্ধান্ত নেয় জীবনে ফিরতে হবে আত্মবিশ্বাসে। তার পদক্ষেপগুলো:
- ক্ষুদ্র লক্ষ্য: প্রতিদিন অফিসে অন্তত একজন সহকর্মীর সাথে লাঞ্চে সাধারণ কথা বলা শুরু করল। প্রথমে কষ্ট হলেও, ধীরে ধীরে সহজ হতে লাগল।
- দেহভঙ্গিমা: মিটিংয়ের আগে লিফটে বা টয়লেটে গিয়ে ২ মিনিট ‘পাওয়ার পোজ’ করত। নিজেই অনুভব করল ভেতরে একটু সাহস আসছে।
- নতুন দক্ষতা: ছোটবেলা থেকে ফটোগ্রাফির শখ ছিল। একটি অনলাইন কোর্স নিল এবং সপ্তাহান্তে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ছবি তোলা শুরু করল। ছবিগুলো ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করতে থাকল। প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক আসতে শুরু করল।
- আত্ম-দয়া: যখন সোশ্যাল ইভেন্টে অস্বস্তি বোধ করত বা কথা বলতে গিয়ে থেমে যেত, নিজেকে বলত, “ঠিক আছে রিফাত, আজ একটু অস্বস্তি হচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। পরেরবার আরও ভালো হবে।”
- স্বেচ্ছাসেবা: সপ্তাহে একদিন একটি এনজিওতে গিয়ে গরিব শিশুদের কম্পিউটার বেসিক শেখানো শুরু করল। তাদের কাছ থেকে পাওয়া কৃতজ্ঞতা এবং নিজের অবদানের অনুভূতি তাকে অভাবনীয় আত্মতৃপ্তি দিল।
ছয় মাস পর রিফাতের পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। সে এখন অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলে, নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভয় পায় না, এবং ফটোগ্রাফি তার পেশার পাশাপাশি একটি শক্তিশালী আত্ম-প্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তার একাকীত্ব অনেকটাই কেটে গেছে। তার ভাষায়, “আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলে একাকীত্ব আপনাআপনি সরে যেতে থাকে। মানুষ নিজের সঙ্গেই একা থাকে না।”
একাকীত্ব দূর করতে আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি: সামাজিক সংযোগের ভূমিকা
(H2: আত্মবিশ্বাসের পর: একাকীত্ব দূর করতে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা)
আত্মবিশ্বাস একাকীত্ব দূর করার ভিত্তি তৈরি করে, কিন্তু স্থায়ী সমাধানের জন্য অর্থপূর্ণ সামাজিক সংযোগ অপরিহার্য। আত্মবিশ্বাস আপনাকে সম্পর্ক গড়ার সক্ষমতা দেবে, আর সেই সম্পর্কগুলো আপনার আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করবে। কিভাবে শুরু করবেন?
- গুণগত সময়কে অগ্রাধিকার দিন: অনেক মানুষের সাথে থাকার চেয়ে কয়েকজনের সাথে গভীর, আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন। কথা শোনা, ভাগ করে নেওয়া, সহমর্মিতা দেখানো – এসবই গভীর বন্ধনের সূত্রপাত করে। (Internal Link: গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তোলার উপায়)
- আগ্রহভিত্তিক সম্প্রদায়ে যোগ দিন: আপনার পছন্দের কোনো বিষয় (বই পড়া, বাগান করা, হাইকিং, ফটোগ্রাফি, সমাজসেবা) নিয়ে কাজ করে এমন ক্লাব, গ্রুপ বা অনলাইন কমিউনিটিতে যুক্ত হোন। সবার আগ্রহ এক হলে সংযোগ গড়া সহজ হয়। ঢাকায় ‘বইচক্র’, ‘ড্রিমার্স ডু’, ‘ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যাকশন (YEA)’ এর মতো সংগঠন সক্রিয়।
- কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন (সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্যকে ধন্যবাদ জানানো, কৃতজ্ঞতা জার্নাল রাখা), তাদের সামাজিক সংযোগ ও জীবন-সন্তুষ্টি বেশি হয়।
- ডিজিটাল ডিটক্স: সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রোল করা আর প্রকৃত সংযোগ এক নয়। নির্দিষ্ট সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সীমিত করুন এবং সেই সময় বাস্তব জীবনের মানুষের সাথে দেখা করার জন্য ব্যয় করুন।
- পেশাদার সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না: যদি একাকীত্ব তীব্র হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয়, হতাশা বা উদ্বেগের সাথে জড়িত হয়, তাহলে মনোবিদ বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিন। বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা এখন আগের চেয়ে সহজলভ্য। [External Link: জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (NIMH), ঢাকা]
একাকীত্ব কখনোই আপনার নিয়তি নয়। এটি একটি চ্যালেঞ্জ, যার মোকাবিলা করার শক্তি আপনার ভেতরেই লুকিয়ে আছে। “জীবনে ফিরুন আত্মবিশ্বাসে” – এই মন্ত্রকে ধারণ করে ছোট্ট পদক্ষেপগুলোই আপনাকে নিয়ে যেতে পারে একাকীত্বের অন্ধকার গহ্বর থেকে আলোর দিকে। আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাসই হবে সেই মজবুত সেতু, যা আপনাকে আবারও মানুষের সাথে, জীবনপ্রবাহের সাথে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, আপনার নিজের সাথেই সংযুক্ত করবে। আজই একটি ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন, নিজের জন্য দয়ালু হোন এবং বিশ্বাস রাখুন – আত্মবিশ্বাস নামক এই অস্ত্র দিয়েই আপনি জয় করবেন একাকীত্বের যুদ্ধ। আপনার যাত্রা শুরু হোক আজই।**
জেনে রাখুন (FAQs)
(H2: জেনে রাখুন: একাকীত্ব ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নোত্তর)
প্রশ্ন: একাকীত্ব দূর করার উপায় হিসেবে শুধু আত্মবিশ্বাস বাড়ালেই কি হবে?
- উত্তর: আত্মবিশ্বাস একাকীত্ব দূর করার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি, কিন্তু একমাত্র উপায় নয়। আত্মবিশ্বাস আপনাকে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, নতুন সম্পর্ক গড়া এবং বিদ্যমান সম্পর্ক গভীর করার সাহস ও দক্ষতা দেয়। তবে একাকীত্ব দূর করতে অর্থপূর্ণ সামাজিক সংযোগ স্থাপন করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাস সেই সংযোগ গড়ার পথকে সুগম করে।
প্রশ্ন: আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কতদিন সময় লাগতে পারে?
- উত্তর: আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা রাতারাতি হয় না। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ছোট ছোট সাফল্য, নিয়মিত অনুশীলন এবং নিজের প্রতি ধৈর্য্য ধারণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এটি বাড়ে। লক্ষ্য রাখুন নিজের অগ্রগতির দিকে, শুধু চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে নয়। কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যেই ইতিবাচক পরিবর্তন টের পাবেন, তবে এটি আজীবন চর্চার বিষয়।
প্রশ্ন: আমি অনেক চেষ্টা করেও আত্মবিশ্বাসী হতে পারছি না, বার বার ব্যর্থ হচ্ছি। কি করব?
- উত্তর: ব্যর্থতা জীবনের অংশ। আত্মবিশ্বাস মানে এই নয় যে কখনো ব্যর্থ হবেন না। আত্মবিশ্বাস হলো ব্যর্থতাকে ভয় না করে, তা থেকে শিখে আবার চেষ্টা করার সাহস। নিজের প্রতি আত্ম-দয়া অনুশীলন করুন। ব্যর্থতাকে ‘আমি পারব না’ এর প্রমাণ না ভেবে, ‘এভাবে কাজ হয়নি, পরেরবার ভিন্নভাবে চেষ্টা করব’ ভাবুন। যদি একা লাগে, কাছের কাউকে বলুন বা পেশাদার মনোবিদের সাহায্য নিন।
প্রশ্ন: একাকীত্ব দূর করার জন্য কি বেশি বেশি মানুষের সাথে মিশতে হবে?
- উত্তর: মোটেও নয়। একাকীত্ব দূর করার জন্য মানসম্পন্ন সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ, পরিমাণ নয়। পাঁচজন মানুষের সাথে গভীর, আন্তরিক সম্পর্ক থাকা একশ জন পরিচিতের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর একাকীত্ব দূর করতে। আপনার জন্য আরামদায়ক এবং অর্থপূর্ণ এমন সম্পর্কের দিকে মনোযোগ দিন।
প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়া কি একাকীত্ব বাড়ায় নাকি কমায়?
- উত্তর: সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব দ্বিমুখী। যদি এটি বাস্তব জীবনের সম্পর্ককে সহজ করে বা গভীর করে, তবে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, অন্যদের ‘হাইলাইট রিল’ দেখে নিজের জীবনকে তুলনা করা, অতিরিক্ত ব্যবহার এবং বাস্তব মিথস্ক্রিয়াকে প্রতিস্থাপন করলে সোশ্যাল মিডিয়া একাকীত্ব বাড়াতে পারে। ভারসাম্য রেখে ব্যবহার করা জরুরি।
- প্রশ্ন: বাংলাদেশে একাকীত্ব নিয়ে কথা বলতে বা সাহায্য চাইতে সংকোচ লাগে। কি করব?
- উত্তর: মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংকোচ বা লজ্জা ভাঙা সময়সাপেক্ষ, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে আপনার বিশ্বস্ত কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করুন। বাংলাদেশে এখন মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (NIMH), ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ (ঢাবি, জাবি), বা কেয়ার বাংলাদেশের মতো সংস্থা গোপনীয়তা রেখে সাহায্য করে। অনলাইন কাউন্সেলিং অপশনও আছে। মনে রাখুন, সাহায্য চাওয়া সাহসের পরিচয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।