বিনোদন ডেস্ক : মৃত্যুকে জয় করেছেন তিনি। তিনি চিরসবুজ অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। মরণব্যাধিও হারাতে পারেনি তাকে, ক্যারিয়ারের শুরুতে পরপর ব্যর্থতা কীভাবে ঠেকিয়ে রাখবে? ব্যর্থতার খোলস থেকে বেরিয়ে নিজেকে যোগ্য অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। এভাবেও ফিরে আসা যায়, দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।
নেপালের কাঠমাণ্ডুতে দুঁদে রাজনীতিকদের পরিবারে জন্ম, ১৯৭০ সালের ১৬ আগস্ট। তার বাবা প্রকাশ কৈরালা নেপালের সাবেক মন্ত্রী। দাদা বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা ছিলেন নেপালের বাইশতম প্রধানমন্ত্রী।
নেপালের ইতিহাসে কৈরালা বংশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বংশের প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণপ্রসাদ কৈরালাকে বিহারে নির্বাসিত করেছিলেন নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহারাজা চন্দ্র সামসের জঙ্গ বাহাদুর রানা। পরে দেশে ফিরে গিয়ে গণতন্ত্র স্থাপনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন সমাজকর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ।
শৈশব থেকেই মনীষার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিবিড়। তার ছোটবেলা কেটেছে বারাণসীতে, দাদা-দাদীর কাছে। পরে দিল্লি এবং মুম্বাইয়ে। তখন থেকেই ভারত ছিল মনীষার সেকেন্ড হোম।
স্কুলে পড়ার সময় মনীষার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু চিকিৎসক বা বংশের ধারা মেনে রাজনীতি, কোনওটাই হওয়া হল না। সংক্ষিপ্ত মডেলিং-ক্যারিয়ারের পরে চলে এলেন অভিনয়ে।
বারাণসীর বসন্তকন্যা মহাবিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মনীষা। ক্লাস টেনের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর মজার ছলেই নেপালি ভাষার ছবিতে প্রথম অভিনয়। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় সেই ছবি ‘ফেরি ভেতৌলা’।
অভিনয়কেই ক্যারিয়ার করবেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মনীষা চলে আসেন মুম্বাই। সুভাষ ঘাইয়ের পরিচালনায় মনীষার প্রথম হিন্দি ছবি ‘সওদাগর’ মুক্তি পায় ১৯৯১ সালে।
কিন্তু এরপর একটানা ব্যর্থতা। ফার্স্ট লাভ লেটার, আনমোল এবং ধনবান মুখ থুবড়ে পড়ে বক্স অফিসে। প্রযোজকদের কাছে মনীষার পরিচয় হয়ে যায় ‘অপয়া’।
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ান তিনি ১৯৪২ এ লাভ স্টোরি-র হাত ধরে। যদিও ছবির প্রথম অডিশনে বিধুবিনোদ চোপড়া বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন মনীষাকে। তার মনে হয়েছিল মনীষা অভিনেত্রী হিসেবে ভয়ঙ্কর! পরে সেকেন্ড অডিশনে বাজিমাত করেন মনীষা। মাধুরী দীক্ষিতের পরিবর্তে ছবির রাজেশ্বরী বা রাজ্জো চরিত্রে বিধুবিনোদ নির্বাচন করেন মনীষাকেই।
বক্স অফিসে সফল না হলেও এই ছবিটি অনেক দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এই ছবিটি প্রথম ইউনিভার্সাল/অ্যাডাল্ট তকমা পায়। রাহুল দেব বর্মণের শেষ তথা অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ এই ছবিতেই। বলা যায়, ১৯৪২ এ লাভ স্টোরি ছিল আর ডি বর্মনের শেষের কবিতা।
এরপর বোম্বে, অগ্নিসাক্ষী, ইয়ারানা, দারার, ইন্ডিয়ান, খামোশি দ্য মিউজিক্যাল ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম সারির নায়িকা হয়ে ওঠেন মনীষা।
খামোশি ছবিতে মনীষার অভিনয় বলিউডের আইকনিক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও এই ছবি মনীষার মুকুটে নতুন পালক যোগ করে।
মনীষার ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ, দিল সে, কাচ্চে ধগে, মান, যুগপুরুষ এবং আকেলে হাম আকেলে তুম। আমির খানের সঙ্গে মনীষার রসায়ন বক্স অফিসে তুমুল সফল হয়। বলিউডের পাশাপাশি দক্ষিণী ভাষার ছবিতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
২০০০ সাল নাগাদ ক্যারিয়ারে ভাটার টান আসতে মনীষা চলে আসেন টেলিভিশনে। ২০০৪ সালে তিনি চলে যান নিউইয়র্ক। ফিল্ম মেকিংয়ের উপর ডিপ্লোমা করেন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে এসে আবার অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু মনীষার নতুন ইনিংস সাফল্য পায়নি। নায়িকা বা সহ অভিনেত্রী, সব ভূমিকায় এবার দর্শকমনে দাগ কাটতে ব্যর্থ হন তিনি। এই পর্যায়ে তার ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য কাজ হল ঋতুপর্ণ ঘোষের খেলা ছবিতে অভিনয়।
২০১০ সালের ১৯ জুন মনীষা বিয়ে করে নেপালি শিল্পপতি সম্রাট দাহালকে। তাদের আলাপ হয়েছিল ফেসবুকে। সনাতনী নেপালি রীতিতে বিয়ে করেন দু’জন। মধুচন্দ্রিমা হয় ফ্লোরিডায়। কিন্তু দু’বছরের মাথায় ভেঙে যায় দাম্পত্য।
২০১২ সাল মনীষার কাছে একাধিক দুঃসংবাদ বয়ে আনে। বিয়ে ভাঙার পাশাপাশি সে বছরই জানা যায়, তিনি ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত। প্রথমে মুম্বাই, তারপর তার চিকিৎসা হয় আমেরিকায়।
সফল অস্ত্রোপচার, একটানা কেমোথেরাপির পর মনীষাকে ২০১৭ সালে ক্যানসারমুক্ত বলে জানান চিকিৎসকরা। ক্যানসারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে এখন অন্যতম মুখ মনীষা কৈরালা। পাশাপাশি, নানা সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত তিনি।
ক্যানসারকে হারিয়ে ফিরে এসে মনীষার প্রথম ছবি চেহরে: এ মডার্ন ডে ক্লাসিক। সম্প্রতি প্রশংসিত হয়েছে ডিয়ার মায়া এবং সাঞ্জু ছবিতে মনীষার অভিনয়।
বিভিন্ন সময়ে একাধিক পুরুষের সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছে। বিভিন্ন বয়স এবং পেশার মানুষ এসেছেন তার জীবনে। নানা পাটেকার এবং মনীষার প্রেম তো একসময় ছিল ইন্ডাস্ট্রির বহুচর্চিত গুঞ্জন। শোনা যায়, নানার কাছে শারীরিক আঘাত পাওয়ার পর সম্পর্ক ভেঙেছিলেন মনীষা।
৪৯টি বসন্ত পেরিয়ে এখন নতুন করে জীবনের অর্থকে খুঁজে পান, জানিয়েছেন এই অভিনেত্রী। সূত্র: আনন্দবাজার।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.