গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়নপুরের অটো স্পিনিং মিলের আগুনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ১২ ঘণ্টা চেষ্টা করে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে আনোয়ার হোসাইন (২৭), উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের হাছেন আলীর ছেলে শাহজালাল (২৬), গাজীপুরে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার ভান্নারা গ্রামের মৃত শামছুল হকের ছেলে সেলিম কবির (৪২), পাবনা জেলা আমিনপুর থানার নান্দিয়ারা গ্রামে কেরামত সরদারের ছেলে সুজন সরদার (৩০), ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার ভুবনপোড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. আবু রায়হান (৩৫) ও ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার উস্থি ইউনিয়নের হরিপুর মোহলুল গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে রাসেল মিয়া (৪২)।
নিহতের মধ্যে সেলিম কবির কারখানার সিনিয়র উৎপাদন কর্মকর্তা পদে, রাসেল মিয়া নিরাপত্তা বিভাগে, শাহজালাল উৎপাদন বিভাগে, আনোয়ার হোসেন, রায়হান ও সুজন এসি প্ল্যান্টের শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কারখানার মহাব্যবস্থাপক (এডমিন) হারুনুর রশিদ জানান, এই কারখানায় তিন শিফটে প্রায় ১৫শ’ জন শ্রমিক কর্মরত ছিল। মঙ্গলবার ‘বি’ শিফটে প্রায় সাড়ে চারশত শ্রমিক কাজ করছিল। দুপুর আড়াইটার দিকে কারখানার তুলার গুদামে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে তা পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পরে। এতে পুরো কারখানাটিই ভস্মীভূত হয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনও নির্ধারণ করা যায়নি।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করে জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে অটো স্পিনিং মিলের তুলার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের খবর পান। পরে শ্রীপুর ফায়ার স্টেশন থেকে তিনটি এবং ভালুকা ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিটের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। পরে আশপাশের ১৮টি ফায়ার সার্ভিসের ১০২জন সদস্য ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে আগুন নেভাতের কাজে যোগ দেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে গুদামে থাকা তুলা, কারখানার মুল্যবান মেশিনারীজ ও অন্যান্য মালামাল পুড়ে গেছে। আগুণের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
বুধবার ভোরে কারখানার ভেতর থেকে আনোয়ার হোসাইন, শাহজালাল ও সেলিম কবিরের অঙ্গার মরদেহ বের করে আনা হয়েছে। পরে বেলা পৌনে ১২টার দিকে অপর দুই শ্রমিক সুজন সরদার ও আবু রায়হানের মরদেহও আগুনের ধ্বংস্তুপ থেকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, কারখানার অগ্নিকাণ্ডের পর পাঁচজন শ্রমিক নিখোঁজ ছিল। এদের মধ্যে তিন জনের মরদেহ ভোর রাতে কারখানার ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সুজন সরদার ও আবু রায়হানের স্বজনেরা জানিয়েছেন, সুজন উচু লম্বা ছিল এবং আবু রায়হান খাটো ছিল। পুড়ে যাওয়া অঙ্গার দেহ একটি লম্বা ও অপরটি একটি খাটো প্রকৃতির হওয়ায় তা সুজন ও রায়হানের বলে নিশ্চিত করেছেন।
নিখোঁজ শাহজালালের ভগ্নিপতি ইমরান জানান, পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ গুলো চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে শাহজালাল যে কক্ষে কর্মরত ছিল ওই কক্ষের পাশ থেকে একটি লাশ উদ্ধার হওয়ায় ধারণা করছি এটাই শাহজালালের লাশ।
এদিকে আনোয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার চাচাতো ভাই সজিব। তিনি জানান, আগুনের পরপরই তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। প্রথমে মুঠোফোনে কল বাজলেও এক-দেড় ঘণ্টা পর তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন ভোরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সম্পূর্ণ শরীর পুড়ে গেলেও তার মুখের দাঁড়ি না পোড়ায় আমরা নিশ্চিত এটাই আনোয়ারের লাশ।
অপরদিকে অটো স্পিনিং লিমিটেডের তুলার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেকে প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও নিহতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীনুর ইসলাম ছাড়া অন্যরা হলেন- পরিচালক শিল্প পুলিশ গাজীপুর এর প্রতিনিধি (উপ-পরিচালক পদমর্যাদার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেলা পুলিশ, শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক এবং গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।