স্পোর্টস ডেস্ক : ‘টেন ইয়ার্স চ্যালেঞ্জ’- মনে পড়ছে ক’মাস আগে ফেসবুকের একটি ক্যাম্পেইন ঝড় তুলেছিল। দশ বছর আগে ও পরের ছবি পাশাপাশি রেখে নিজের চেহারার বদলটা দেখিয়ে ফেসবুকই অবাক করে দিয়েছিল। কৌতূহলী হয়ে সাকিব নিজেও সেটা দেখেছিলেন এবং খুঁজে পেয়েছিলেন ২০১০ সালের এক কিশোরকে। রোগা-পাতলা চেহারার চনমনে এক অলরাউন্ডার। ওই ছবিগুলোই দাগ কেটে দেয় তার মনে। নিজেই ঠিক করেন ফিরে পেতে হবে ওই সময়টা, ফিরিয়ে আনতে হবে মেদহীন ওই শরীরটা। তার পর থেকেই ডায়েট কন্ট্রোল তার। খাবারে তেল-ঝোল কমিয়ে শুকনো গ্রিল আর পর্যাপ্ত সালাদ। দেড় মাসে সাত কেজি ওজন কমিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে আসা তার।
‘আসলে আমার এই ফিটনেসটাই আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। ফিজিক্যালি ফিট থাকলে সেটা মানসিক শান্তি ও শক্তি জোগায়। আমি কিন্তু আমার খেলা খুব বেশি বদল করিনি। আগেও যেভাবে খেলতাম সেভাবেই খেলে থাকি। তবে এখন নিজেকে অনেক বেশি ফিট মনে হয় এবং সেটাই আমার খেলার মধ্যে প্রভাব পড়ছে।’ সাকিব তার বদলে যাওয়ার রহস্য জানিয়ে দিলেও ফাঁস করতে রাজি হননি তার ডায়েট চার্টটা!
ফেসবুকের ওই টেন ইয়ার্স চ্যালেঞ্জই শুধু নয়, আইপিএলে হায়দরাবাদে থাকার সময়ও কিছু জেদ সাকিবকে বদলে দিয়েছে। সে সময় তাকে বসিয়ে রেখে দল একেক শহরে খেলতে গিয়েছিল। একা একা বসে থাকতে থাকতে নিজের মধ্যেই একটা জেদ তৈরি হয় তার। ঠিক করেন, হাতে পাওয়া এ সময়টায় বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে তৈরি করবেন। ব্যাটিংয়ের ছোট ছোট কিছু কাজ করবেন। সেটা তো আর একা করা সম্ভব হয় না। তাই ঢাকা থেকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রিয় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে। কাট শট, বিশেষ করে এই শটটি নিয়েই কাজ করেছেন সাকিব।
বিশ্বকাপে আসার আগেও সাকিবের বাউন্ডারির বেশি রান ছিল সুইপ খেলে। আউটও হতেন ওই শটগুলোতে। যে কারণে সেটা এই বিশ্বকাপে কম খেলতে দেখা যাচ্ছে তাকে। বরং কাট শটে সিঙ্গেলস এবং ডাবলস বেশি বের করছেন। আইপিএল থেকে ফিরেও ঢাকা লীগে কিছু ম্যাচ খেলতে চেয়েছিলেন আবাহনীর হয়ে। কিন্তু আপত্তি ওঠায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। তার পরও দমে যাননি, এরপর নেটে সময় কাটানোর ঘণ্টা বাড়িয়ে দেন এবং ম্যাচের আগের দিন পরিতৃপ্তি নিয়ে অনুশীলন করেন। আগে যেটা কখনই দেখা যায়নি সাকিবকে।
‘আসলে আইপিএলের সময় আমার ওই নিজের মতো করে প্রস্তুতি নেওয়াটা খুব কাজে দিয়েছে। ওই সময়টাতে আমি বসে না থেকে যে কাজগুলো করেছি। সেটা এই বিশ্বকাপে আমাকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’ সেদিন আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচের পর কলকাতা থেকে এক সাংবাদিক ফোন করে অনুরোধ জানান সাকিবকে যেন এই প্রশ্নটি করা হয়- আইপিএলের জেদটা কি তাকে বিশ্বকাপে ভালো খেলার জন্য তাতিয়ে দিয়েছিল? ঢাকা থেকে আসা এক সাংবাদিকেরও প্রশ্ন ছিল। আলোচনা এবং সমালোচনা তাকে নিয়েই বেশি হয়- এটা তিনি কীভাবে দেখেন? উত্তরে সাকিব- ‘আমি ওসব দেখিই না…’।
সত্যিই কি সমালোচনাগুলো আহত করে না তাকে? এখন সবাই তাকে যেমন মাথায় তুলে নাচছেন, ফেসবুকে তার সঙ্গে পুরনো ছবি দিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন- তারাই তো মাটিতে আছড়ে ফেলতে সময় নেবেন না! এসব জানা সাকিবের। ‘আসলে ওসব আমাকে এখন আর ছোঁয় না। আমার কাজ নিজেকে তৃপ্ত করা এবং দলকে জয় এনে দেওয়া। সেটা যদি ব্যাটিং ও বোলিং দিয়ে করতে পারি তাহলে সেটাই আমাকে বেশি খুশি করে।’ বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে এসে যেভাবে একহাতে শাসন করছেন সাকিব, তাতে নিজেকে কি কিংবদন্তির কাতারে ভাবতে পারেন না? জানার আগ্রহ ছিল ঢাকা থেকে আসা এক সাংবাদিকের। ‘ওটা আপনারা ঠিক করবেন। আমি ওসব নিয়ে ভাবি না।’ চেহারা আর ফিটনেসে বদল আনলেও ওই এক জায়গায় সাকিব আগের মতোই- আমাকে আমার মতো থাকতে দাও… আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি…।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।