জুমবাংলা ডেস্ক : বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীন। বয়স প্রায় ৯০ ছুঁই ছুঁই করছে। লাঠিতে ভর করে কোনমতে চলাফেরা করেন তিনি। বয়োবৃদ্ধ জয়নাল আবেদীনের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভাবানীপুর গ্রামে।
ওই বৃদ্ধের বাড়ি থেকে মাত্র ৪০-৪৫ গজ দূরে ‘সামাজিক মসজিদ’। তিনিসহ তার পরিবারের সকলেই ওই মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি ও তার পরিবারের সকল সদস্যের ওই মসজিদ আদায় নিষিদ্ধ করেই ক্ষান্ত দেয়নি মসজিদ কমিটিতে থাকা প্রভাবশালীরা। ওই পরিবারের সঙ্গে কেউ কথা বললে এক হাজার টাকা জরিমান আদায় করা হবে। এমনটি শুধু মুখেই ঘোষনা দেননি মসজিদ কমিটিতে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাদের এই আইন বাস্তবায়ন করতে রেজুলেশন করে সবার স্বাক্ষরও নিয়েছেন তারা। বিষয়টি আবার অপকটে স্বীকারও করেছেন।
ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীন ও তার পরিবারের লোকজনদের ৫ ওয়াক্ত নামাজ বাড়িতেই আদায় করতে হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভাবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার ভবানীপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সমাজের সকলেই ওই মসজিদে নামাজ আদায় করছেন। আর বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীন তার বাড়িতে জোহরের নামাজ আদায় করছেন।
নামাজ শেষে কথা হয় জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের ‘সামাজিক মসজিদ’ বাড়ি থেকে ৪০-৪৫ গজ দূরে। মসজিদের প্রস্রাবখানা ও টয়লেট তার জমিতে। বেশ কিছুদিন যাবত প্রসাবখানা ও টয়লেটের চাবি তার কাছেই ছিল। গত ১০-১২ দিন আগে চাবি নিয়ে নেন মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার হোসেন আলী। এ নিয়ে হোসেন আলীর সঙ্গে বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীনের কথাকাটাকাটি হয়। এ অবস্থায় গত ১৬ই আগস্ট শুক্রবার তিনি মসজিদে নামাজ আদায় গেলে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুছ ছালামসহ কমিটির লোকজন তাকে গালমন্দ করে মসজিদ থেকে বের করে দেন। তিনি সে দিন জুমার নামাজও আদায় করতে পারিনি। জুমার নামাজ শেষে তার পুরো পরিবারকে সামাজিকভাবে একঘরেসহ সমাজের কেউ কথা বললে তাকে এক হাজার টাকা জরিমানার কথা উল্লেখ করে সকলের সই-স্বাক্ষর নিয়ে রেজুলেশন করা হয়। সামাজিকভাবে একঘরে করে রাখার পর থেকে আমাকে মসজিদে নামাজ পড়তে দেয়া হচ্ছে না। ভয়ে সমাজের লোকজন কথা পর্যন্ত বলছেন না।
বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীনের পুত্র শফিক জানান, আমরা ৫ ভাই। আমার আব্বা বৃদ্ধ মানুষ। তাকে এভাবে প্রকাশ্যে সামাজিকভাবে একঘরে রাখা কি ঠিক হইছে? আমার বৃদ্ধ পিতা ভুলত্রুটি করে থাকলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ আছে সেখানে বিচার দিতে পারত। এতে করে আমাদের পরিবারের সকল শিশুর উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান কাঞ্চন একঘরে করে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আসলে ভয় দেখানোর জন্য একঘরে করা হয়েছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুস ছালাম বলেন, বৃদ্ধ লোকটি আসলে ভালো না। তাকে সঠিক পথে আনার জন্য একঘরে করে রাখা হয়েছে। ভয় দেখানোর জন্য রেজুলেশন ও সকলের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।
ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুর মল্লিক জীবন বলেন, সামাজিকভাবে একঘরে করে রাখার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানান। ফুলবাড়ীয়া ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, এমন ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।