জুমবাংলা ডেস্ক : আট বছরের ফুটফুটে শিশু। মাগুরার এই শিশুটিকে বড় বোনের শ্বশুরসহ কয়েকজন ধর্ষণের পর গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করে। বড়দের চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে শিশুটি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই শিশুটি শুধু নয়, দেশে ধর্ষণের শিকার নারীদের মধ্যে ৭৯ শতাংশই শিশু। ধর্ষণের পর সাক্ষী গায়েব করতে শিশুদের হত্যা করা হয়। শারীরিকভাবে দুর্বল আর প্রতিবাদের সাহস কম থাকায় শিশুরা ধর্ষকদের সহজ টার্গেট হচ্ছে। আমাদের সময়ের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরাধীর শাস্তি না হওয়া, নৈতিক অবক্ষয়, সাইবার দুনিয়ার প্রতি নিয়ন্ত্রণহীন আসক্তির কারণে ধর্ষণের মতো অপরাধ বাড়ছে। বড়দের ব্যক্তিস্বার্থ ও খামখেয়ালির কারণেই নিষ্পাপ শিশুকে জীবন দিতে হচ্ছে প্রায়ই। বড়দের লালসার কাছে হেরে যায় কোমলমতি শিশুর সুন্দর পৃথিবী। আদালতে ধর্ষণের ঘটনায় সাজার হার খুবই কম। গ্রাম্য সালিশে চড়থাপ্পড়ে কিংবা নামমাত্র অর্থদ-ে মীমাংসা করা হয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এই ধরনের ভয়ংকর অপরাধ থামছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং অপরাধ গবেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, একটি ঘটনার পর কয়েক দিন খুব আলোচনা হয়, তারপর আবার আগের অবস্থা ফিরে আসে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- হলেও তা কার্যকরের নজির কম। শিশুদের প্রতিবাদ করার সক্ষমতা ও সাহস থাকে না, ফলে সহজ টার্গেট হয় তারা। যারা ধর্ষণের শিকার হয়, তারা ব্যক্তিগত সুরক্ষা, আইনি সুরক্ষা পান না। আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এ সমস্ত ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সামাজিক অনুশাসন ও আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার করতে হবে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে ধর্ষণের শিকার ৪০১ জন নারী-শিশু। এর মধ্যে ১৬৫ জনের বয়স ১৮ বছরের মধ্যে। বাকি ৪৫ জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি। আর ১৯১ জনের বয়স নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেই হিসাবে ধর্ষণের শিকার ৭৯ শতাংশের বয়স ১৮ বছরে মধ্যে অর্থাৎ শিশু। গত বছর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৪ জনকে। আর ধর্ষণের লজ্জা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে সাতজন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছে গিয়ে প্রতিকার না পেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, অপরাধীরা সব সময় দুর্বলকে টার্গেট করে। শিশুরা দুর্বল হওয়ায় ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের ও যৌন নির্যাতনের বেশিরভাগ ঘটে পরিচিতজন ও স্বজনদের দ্বারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী অভিযোগ করে না। আবার অভিযোগ করলেও মামলার আলামত ও সাক্ষী থাকে না। ধর্ষণের ঘটনার একটি বড় অংশের আসামি পার পেয়ে যায়।
লোকলজ্জা ও ভয়ে অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকেই দায়ি করা হয়। ধর্ষক প্রভাবশালী হলে পার পেয়ে যায়। টাকা দিয়েও মীমাংসা করা হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ১০ বছর বয়সী এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্থানীয় মাতব্বরেরা গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করেন। ধর্ষক ফিরোজ মিয়াকে চড়থাপ্পড় আর দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার ৯২ হাজার টাকা দিলেও ৫৮ হাজার বাকি রাখা হয়। ভুক্তভোগী ওই শিশুর পরিবার জানায়, ভয়ে তারা মুখ খোলেনি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল পুলিশ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালায়। যশোরের শার্শায় বাকপ্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর ভয়ভীতি দেখিয়ে গর্ভপাত ঘটায় ধর্ষক ৬০ বছর বয়সী আবু তালেব। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এজাহার থেকে জানা যায়, ধর্ষণের পর কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তার বাবা-মা বিষয়টি স্থানীয় ব্যক্তিদের জানান এবং বিচার চান। স্থানীয় ব্যক্তিরা বিচার না করে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই কিশোরীর বাবা-মাকে ভয়ভীতি দেখান। পরে পল্লী চিকিৎসক দিয়ে ওই কিশোরীর গর্ভপাত করানো হয়।
গত ২ মার্চ মুন্সীগঞ্জে ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ৬৫ বছর বয়সী সেকান্দোর আলী চোকদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, সেকান্দোর ২ মার্চ বিকালে ওই দুই শিশুকে খাবার ও বেলুন কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে।
গত শনিবার শেরপুরের নকলায় বিস্কুট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬ বছরের এক শিশুকে ভুট্টা খেতে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ধর্ষক চান মিয়া ওরফে লছাকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাগেরহাটের মংলায় গত ডিসেম্বরে চকলেটের লোভ দেখিয়ে শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে লিটন হাওলাদার (৪৫) নামে এ গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করা হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জে চকলেট খাওয়ানোর কথা বলে ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. দিদার (২২) নামে এক ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত শনিবার গাজীপুরের শ্রীপুরে মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল মালেককে গ্রেপ্তার করে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় গত শনিবার তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে সে দৃশ্য নিজের স্মার্টফোনে ধারণ করে এক ধর্ষক। আরমান মিয়া (২৭) নামের ওই ধর্ষককে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।