সালিশ করতে গিয়ে পছন্দ হওয়ায় অন্যের কিশোরী স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। বৃদ্ধ বয়সে অন্যের কিশোরী স্ত্রীকে বিয়ের ঘটনা ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। ভাইরাল হয়েছে যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এই ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নে।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের এটি দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে দুই ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে এক ছেলে স্থানীয় সাবেক এক এমপির শ্যালিকাকে বিয়ে করেছেন এবং মেয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়ণপাশা গ্রামের রমজান (২৫) নামের এক যুবকের সাথে একই ইউনিয়নের চুনারপুল এলাকার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নাজমিন আক্তার ওরফে নছিমনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত তিন মাস আগে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের তাতেরকাঠি গ্রামের জনৈক সোহেল আকনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
নছিমনের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, বিয়ের সময় সোহেল আকনের কাছে রমজানের সঙ্গে নছিমনের প্রেমের সম্পর্ক গোপন রাখেন তিনি। বিয়ের পরে বিষয়টি জানতে পারেন সোহেল আকন। এ নিয়ে নছিমনের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সোহেলকে তাকে তালক দেন।
রমজানের বড় ভাই আলী ইমরান বলেন, নছিমনের সঙ্গে সোহেল আকনের তালাক হওয়ার পরে রমজান ও নছিমনের বিয়ে হয়। কনের বয়স কম হওয়ায় বিয়ের কাবিন হয়নি। কয়েক দিন আগে নছিমন তাদের বাড়িতে গিয়ে উঠেন। কিন্তু এ বিয়ে মেনে নিতে পারেননি নছিমনের বাবা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ নিয়ে দুই পরিবারে মধ্যে টানাপোড়ন সৃষ্টি হলে ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানানো হয়। তিনি শুক্রবার সালিশ বৈঠক করতে সম্মতি হন। সেই অনুযায়ী ওই দিন সকালে উভয় পরিবারের লোকজন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের আয়লা বাজারস্থ বাসায় যাই। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে চেয়ারম্যান নিজেই নছিমনকে বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর সালিস বৈঠক পণ্ড হয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ কয়েক ব্যক্তি জানান, শুক্রবার বাদজুমা চেয়ারম্যানের বাসভবনে বসেই ৫ লাখ টাকা কাবিনে নছিমনের বিয়ে হয়। স্থানীয় আবু সাদেক নামের এক ব্যক্তি বিয়ে পড়ান। বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন মাওলানা আয়ুব কাজী। বিয়ের সময় বরের পক্ষে সাক্ষী ছিলেন স্থানীয় নজরুল ইসলাম ও ছালাম হাওলাদার। বরের উকিল ছিলেন পলাশ এবং কনে পক্ষে উকিল ছিলেন সুমন হাওলাদার।
বিয়ের কাবিন নামায় কনের বয়স উল্লেখ করা হয় ১১ এপ্রিল ২০০৩ সাল। অর্থাৎ ১৮ বছর ২ মাস ১৫ দিন বছর। নছিমন কনকদিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করতো। জন্ম সনদে নছিমনের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১১ এপ্রিল ২০০৭ সাল। সে অনুযায়ী তার বয়স ১৪ বছর ২ মাস ১৫ দিন। অবশ্য নছিমনের বাবা নজরুল ইসলাম কাবিন নামায় উল্লেখিত বয়সই তার মেয়ের সঠিক বয়স বলে দাবি করেছেন।
কাবিননামায় চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের বয়স উল্লেখ করা হয় ১ ডিসেম্বর ১৯৬৮। সে অনুযায়ী চেয়ারম্যানের বয়স ৫২ বছর ৭ মাস ২৫ দিন। কিন্তু বাস্তবে তায় বয়স ৬০ বছরের কাছাকাছি বলে।
শাহিন হাওলাদার ২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগেও তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে উপজেলায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। ভাইরাল হয়েছেন ফেসবুকে।
এ ব্যাপারে শাহিন হাওলাদারের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেয়েটিকে দেখে আমার পছন্দ হওয়ায় তাকে বিয়ে করেছেন। এ ছাড়া আমার বিয়ে প্রয়োজন ছিল।
কনের বয়স কম, তিনি বাল্য বিয়ে করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান শাহিন বলেন, আপনাদের ভাবির জন্ম তারিখ ১১ এপ্রিল ২০০৩। তিনি নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। তিন বছর হয় পড়াশুনা বাদ দিয়েছেন। বিয়ের বিষয়টি নিয়ে তিনি লজ্জিত নন বরং আনন্দিত।
তবে নছিমন কনকদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির নিয়মিত ছাত্রী বলে জানিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র শীল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।