নূরুল্লাহ ভুঁইয়া তমাল: জুলাইয়ের এক দুর্দান্ত তপ্ত দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে যেতে হয়েছিল জুমবাংলার সম্পাদকের সাথে, একটি দাপ্তরিক সাক্ষাতে। সেখান থেকে বেড়িয়ে বেইলি রোড হয়ে অফিসে আসার পথে এক গ্লাস কোল্ড কফির পিপাসা নিবারণে তাঁরই অনুরোধে গেলাম খানা’স রেস্টুরেন্টে।
রেস্টুরেন্টটিতে ঢুকেই অভিভূত হয়ে গেলাম। ছিমছাম,পরিপাটি; সাধারণের মধ্যেই আভিজাত্যের ছোঁয়া; এর প্রতিটি দেয়াল যেন তারুণ্যে ভরপুর।
গ্লাস ঘেষা এক টেবিলে বসে ক্লোল্ড কফিতে চুমুক; সাথে নাগা উইংস। খানাসের দুটি সিগনেচার আইটেম। কুলেস্ট ড্রিংক এভার! কফির গন্ধ যেন জাদু ও রূপকথার মতো। হেমন্তের সকালে রবিশষ্যের মাঠে দাঁড়ালে যেমন স্বর্গীয় সোদা গন্ধের আবেশ ঘিরে ধরে, তেমন অনুভূতি। এ যেন শুধু আইসড কফি নয়, দু’ছত্র রোমান্টিক কবিতার লাইন। নান্দনিক ব্লেন্ড, অভিজাত স্বাদ, কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্য।
কিছুদিন পরেই ফেসবুকে স্ক্রল করতে গিয়ে হঠাৎ একজায়গায় চোখ আটকে গেল। End of an Era. খানা’স এর ফেসবুক পেইজের প্রোফাইল পিকচারে কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর সাদা অক্ষরে লেখা। কাভার ফটোতে একইভাবে লেখা, Thank you for being with us. তাহলে কি বন্ধ হয়ে গেল খানা’স এর মতো একটি প্রথাবিরুদ্ধ ডিসেন্ট ফুড স্টার্টআপ, যেটি অল্পদিনেই কোনও ইরোটিক ব্রান্ডিং ছাড়াই তরুণদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল?
ওই পোস্টের কমেন্ট বক্সে গিয়ে খানা’স এর প্রতি গ্রাহকদের লয়ালিটি অনুভব করতে পারলাম। আমার মতো অনেকেই বুঝেছিল, খানা’স হয়তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কমেন্টের পর কমেন্ট, হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের ক্রেজিনেস অভিভূত করলো। এত জনপ্রিয় ব্রান্ড বন্ধ হচ্ছে কেন তাহলে? উদ্যোক্তাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তাদের পরিকল্পনার কথা। বন্ধ হচ্ছে না খানা’স, বরং এক যুগ পেরিয়ে এখন নতুনভাবে আসছে; নতুন চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তিত চাহিদা পূরণে।
খানা’স রেস্টুরেন্টে নতুনত্বের স্বাদ নিতে একদিন দুপুরে সহকর্মীসহ গেলাম বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিউ এপোলো রোডের ফ্লাগশিপ শাখায়। আমি নিজেও রাইস ক্রেজি বাঙালির সদস্য। তাই খানা’স এর এডভেঞ্চারাস রাইস আইটেম থেকে আমার জন্য রক জ্যাক রাইস আর সহকর্মীর জন্য তার অলটাইম ফেভারিট খানা’স বার্গার অর্ডার দিলাম, সাথে সেই কোল্ড কফি। চকোলেট কোল্ড কফির স্মল ভার্সন। কোভিড পরবর্তী বিশ্বে ইউক্রেন যুদ্ধের ঝাঁজ যে আমাদের পকেট পোড়াচ্ছে সেটি অনুধাবন করতে পেরেছে খানা’স। তাই তারা রেগুলার সাইজের পাশাপাশি প্রতিটি আইটেমেরই ইকনমি ভার্সন করেছে। দ্রব্যমূল্যের কারণে অন্যদের মতো খানাসও হয়তো কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করবে, এমন আশঙ্কা ছিল মনে। কিন্তু আমার ধারনা সঠিক না হাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছি।
খাওয়া যখন শেষ প্রায়, দেখা হয়ে যায় খানাসের চিফ অপারেটিং অফিসার সুলতান আফজালের সঙ্গে। ব্যবসায়ে আরো বৈচিত্র আনতে কোন একটি বিশেষজ্ঞ টিমকে রেস্টুরেন্টটি ঘুরে দেখাচ্ছিলেন। খাওয়া শেষে তাঁর ব্যস্ততার ফাঁকেই কথা হয়ে যায় কয়েক মিনিট।
বললেন, ‘শুরু থেকেই আমরা চেয়েছি খানা’স শুধু কোনও খাবারের রেস্টুরেন্ট হবে না, এটা হবে একটা ভালো অভিজ্ঞতা। গ্রাহকের টেস্ট বুঝে নিজেদের পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি সবসময়। এজন্যই খানা’স কে নিয়ে মানুষের এত ক্রেজিনেস।’
খানা’স এর ব্যবসায় দুটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন তিনি; মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও খাদ্যাভ্যাস। ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অল্প টাকায়ও গ্রাহক যেন পূর্বের মতো একই অভিজ্ঞতা নিতে পারে সেজন্য প্রতিটি খাবারে বিশেষ করে সকল বার্গারে ইকনমি সাইজ রাখা হয়েছে। আর বাঙালির ভাতের চাহিদা পূরণে রক জ্যাক, থাই চিলি বাসিল চিকেনের মতো রাইস প্লাটার যোগ করা হয়েছে।
অন্যসব রেস্টুরেন্ট থেকে খানা’স অনেকটাই ব্যতিক্রম। এখানে প্রতিটি খাবারের সাথেই একটা মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করা হয়। খাবার প্রেজেন্টেশনেও রয়েছে নতুনত্ব। এখানকার প্রধান ক্রেতা ‘ইয়াং জেনারেশন’ হলেও ব্রান্ডিংয়েও কখনো কোন স্ল্যাং বা আপত্তিকর ভাষার ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
নতুন যাত্রায় খানা’স এর মেন্যু চার্টে দ্বিগুণ আইটেম যুক্ত হয়েছে। স্বাস্থ সচেতন মানুষের জন্য আনা হয়েছে প্রোটিন শেক, যেখানে নিউট্রেশন ফ্যাক্ট উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে।
খানা’স এর শুরু হয়েছিল ‘আন্ডে খানা’ নামে একটি স্ট্রিট ফুডকার্ট থেকে ২০১২ সালে। আন্ডে খানাই সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম কোন স্ট্রিট ফুডকার্ট যেটির ৩টি ফ্রাঞ্চাইজিজ বিক্রি হয়েছিল। ‘এন ইকনমি রিফ্রেশমেন্ট’ আইডিয়া থেকে সৃষ্ট আন্ডে খানা পরবর্তিতে খানা’স রেস্টুরেন্টে রূপান্তরিত হয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ফুডচেইনে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে খানা’স ঢাকায় এবং নারায়নগঞ্জে তার ১৪ টি শাখার মাধ্যমে পাঁচ শতাধিক জনশক্তি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে কার্যক্রম সম্প্রসারনের পাশাপাশি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহুজাতিক রূপ নেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
খানা’স বাংলাদেশের ফাস্ট ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদেরকে একটি ‘ইনস্টিটিউট’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় যেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে হাজারো যুবা এই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারে। সেই লক্ষ্যে তাদের ফুড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।