জুমবাংলা ডেস্ক : দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এক রাতের রানীর আশায় নাটোরের বাগতিপাড়ার গালিমপুর (পারকুঠী) গ্রামের একরামুল হক। শোনা গেছে, ২৫ বছর আগে গালিমপুর (পাককুঠী) গ্রামের ১২০ বছর বয়সী জীবিত প্রাইমারি রিটায়ার্ড শিক্ষক নূর মুহাম্মদ সরকারের ছেলে একরামুল হক (৬০) নাইট কুইন নামের এক ধরনের বিরল প্রজাতির ফুল গাছের ৮টি চারা রোপণ করেন বাসার ছাদের টবে। দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর যত্ন নেওয়ার পরে ফুল গাছে দেখা মেলে রাতের রানীর।
বিরল ক্যাকটাস জাতীয় এ ফুলটির আদি নিবাস আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চল এবং মেক্সিকোতে। বাংলাদেশে সহজেই দেখা মেলে না এই রাতের রানীর। দীর্ঘদিন ফুল গাছ এলাকায় থাকায় আশে পাশের কেউ বাকিনেই বিরল প্রজাতির এই ফুল দেখায়।
নাইট কুইন-নামেই বোঝা যায় রাতের আঁধার আলো করে ফোটে ফুলটি। রাতের সাথে রয়েছে নাইট কুইন ফুলের বিশেষ সম্পর্ক। সন্ধ্যা থেকেই একটু একটু করে ফোটার প্রস্তুতি নিতে নিতে গভীর রাতে তার অপার সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয় ফুলটি এবং রাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে ভোরের আলোয় মিলিয়ে যায় এর সৌন্দর্য। তাই অনেকে ভালোবেসে ফুলটিকে ”এক রাতের রানী” বলে আখ্যায়িত করে। আবার অনেকে ‘এক রাতের রানী’ নাইট কুইন ফুলকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করে।
বলা হয়, যার বাড়িতে এ ফুল ফোটে তাঁর বাড়িতে সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে ফুলটি! এর কারণ হতে পারে, নাইট কুইন ফুল বহু সাধনার ফসল হয়। এ ফুলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর! দুর্লভ এ ফুলটি কার বাড়ির গাছে কখন ফুটবে তা বলতে পারে না কেউই! এ কারণে কারো বাড়িতে নাইট কুইনের কলি দেখা গেলেই প্রতিদিন বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। নাইট কুইন ফোটার এই দুর্লভ ক্ষণটি হেলায় হারাতে চায় না কেউই। সন্ধ্যা থেকে ভোর, কেবল এতটুকুই আয়ু এই ফুলের। নাইট কুইন মূলত বর্ষাকালীন ফুল। গ্রীষ্মের শেষে বা বর্ষার শুরুতে এই ফুল ফোটে। তবে এই ফুল মাঝে মাঝে বছরের যেকোনো সময় ফুটতে দেখা যায়। প্রথমে গাছে একটি-দুটি করে ফুল আসলেও প্রতি বছরে ফুলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। একটি গাছে একসাথে ৫০-৬০টি পর্যন্ত ফুল ফুটতে পারে। দারুণ সুগন্ধি ফুল নাইট কুইন মূলত সাদা হয়। তবে মাঝে মাঝে বেগুনী বা মেরুন পাপড়িযুক্ত নাইট কুইনের দেখা মেলে। অভিজাত সৌন্দর্যের প্রতীক নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম হলো পেনিওসিরিয়াস গ্রেগগিই। এটি ক্যাকটাস প্রজাতির গাছ। নাইট কুইন মোটামুটি দুর্লভ প্রজাতির ফুল। আগে শুধু ইউরোপের কয়েকটি দেশে দেখা গেলেও বর্তমানে তা আমাদের দেশেও মাঝে মাঝে দেখতে পাওয়া যায়।
নাইট কুইনের প্রথম দেখা মেলে মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকায়, ১৯৫৩ সালের দিকে। মরুভূমির উদ্ভিদ হলেও বর্তমানে তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। নাইট কুইনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো পাথরকুচির মতো এটিও পাতা থেকে অঙ্কুরিত হয় এবং বংশবিস্তার করে। পাতা থেকে ফুলও জন্মে! এক রাতের ফুল নাইট কুইন টবে চাষ করা যায় বলে অনেকের শখের বাগানেই তা স্থান পায়।
একরামুল হক জানান, তার বাসার ছাদে নিয়মিত নাইট কুইন ফুটে। শুক্রবার রাতে এক সঙ্গে ফুটে ৮টি ফুল। তবে এর আগে একদিনে সর্বোচ্ছ ১৭টি নাইট কুইন ফুটেছিল। আনসার ও ভিডিপির কর্ম শেষ হওয়ার পরে তিনি শখের বসে নাইট কুইন ফুল গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। আস্তে আস্তে যতœ নিয়ে ফুল গাছে রাতের রানীকে আনতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আরও জানান এলাকায় এমন ভিন্ন চিন্তা ভাবনা হওয়ার কারনে তাকে অনেকেই ভিন্ন মানুষ হিসেবে চেনেন।
বাগাতিপাড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক কোয়েল জানান, অনেকেই শখ করে বাসায় টবে নাইট কুইন লাগান। আমার বাসাতেও রয়েছে অনেকগুলো গাছ। নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম পেনিওসিরিয়াস গ্রেগগিই। এটি অনেকটা পদ্ম ফুলের মত দেখতে। রঙ ও সাদা। মৃদু সুগন্ধও আছে। এই ফুল মধ্যরাত পর্যন্ত ফোটে। মধ্যরাত পার হলেই ফুল মিলিয়ে যেতে শুরু করে। আর সেই রাতের অন্ধকারেই হয় তার জীবনাবসান। তিনি আরো জানান, প্রচলিত ধারণা মতে এটাকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মমরেজ আলী বলেন, নাইট কুইনের জন্ম বীজ থেকে নয়, পাতা থেকে। ফুল গাছের এক টুকরো পাতা ছিঁড়ে মাটিতে ফেলে রাখলে কয়েক দিনের মধ্যে পাতার চারদিকে চারা গজিয়ে যায়। নাইট কুইন ফুলকে জড়িয়ে নানা গল্প প্রচলিত আছে। এই গাছের যতœআত্তি করতে হয় অনেক। নাইট কুইন ফুল ফোটানো বেশ শ্রমসাধ্য ব্যাপার বলেই তা সকলের কাছেই আরাধ্য। গল্পের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত গল্পটির পটভূমি হলো দুহাজার বছর আগে, বেথেলহাম নগরীতে। তখন নগরীর প্রত্যেকটি বাড়িতে নাইট কুইন গাছ ছিল। এক রাতে প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি গাছ আলো করে ফুটে উঠল নাইট কুইন। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল পুরো শহর।
এ ঘটনায় নগরবাসী খুবই কৌতূহলী হয়ে উঠল যে, প্রকৃতি তাদের সাথে কোন খেলায় মেতে উঠল! পরে সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পারল। সেই রাতে বেথেলহামের একটি ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের। তিনি যিশুখ্রিস্ট। সে রাতে বেথেলহামের সব নাইট কুইন আনন্দে মেতে উঠেছিল যিশুখ্রিস্টের আগমন উপলক্ষে। এ কারণেই নাইট কুইন ফুলটি ‘বেথেলহাম ফ্লাওয়ার’ নামেও পরিচিত। মূলত এ কারণেই ফুলটিকে সৌভাগ্য ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।