স্পোর্টস ডেস্ক : ‘ভারত হেরে গিয়েছে তো কী হয়েছে! এটা তো খেলা। একবার ভারত জিতবে, একবার পাকিস্তান। মন খারাপের তো কিছু নেই!”
গত রবিবার দুবাইয়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শেষে ফেরার পথে প্রায় গোটা রাস্তাই কথাগুলো বলছিলেন ট্যাক্সি চালক আফতাব হোসেন। পাকিস্তানি এই ভদ্রলোক ভেবেছিলেন, ভারত থেকে খেলা দেখতে এসেছি। টিম হেরে যাওয়ায় মন বেজায় খারাপ। তাতে প্রলেপ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। সাংবাদিকদের আবেগ-দুঃখে ভাসতে নেই, এই কথা বোঝানোর আর চেষ্টা করিনি ওঁকে। তিনি বলছিলেন, ”আমার এখানে কত ভারতীয় বন্ধু আছে। এদের সঙ্গে বসে আমিও তো শুরুর দিকে খেলা দেখছিলাম। মজা করছিলাম। দুঃখ কীসের!”
ছোট্ট ঘটনা। কিন্তু, দুবাইয়ের বুকে ভারত-পাকিস্তানের বন্ধুত্ব বোঝানোর জন্য বোধহয় যথেষ্ট। ঝাঁ চকচকে শহরে যেখানেই যাবেন, কানে আসবে হিন্দিতে কথাবার্তা। সঙ্গে বাংলাও। সংখ্যার বিচারে ভারতীয়দের পরেই ভিড় পাকিস্তানিদের। ট্যাক্সি চালক হিসেবে এখানে পাকিস্তানিদের কদর বেশি। আবার অফিসের নানা কাজে ভারতীয়দের দাপট। আর শ্রমিক হিসেবে দুই দেশেরই মানুষ রয়েছেন।
দুবাইয়ের গ্যালারিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলা দেখেছেন ভারত-পাকিস্তানের সমর্থকরা। একই সঙ্গে উড়েছে দুই দেশের পতাকা। একে অপরকে বাড়িয়ে দিয়েছেন জলের বোতল। ম্যাচ শেষে পিঠে রেখেছেন হাত। এই দৃশ্য প্রায় সর্বত্র। আসলে, মাঠের বাইরেও এখানে কোনও বিভেদ নেই। সবার গলায় একই সুর, ‘বিভেদ তো করেন রাজনীতির লোকেরা।’
‘আচ্ছা, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আরও বেশি করে ক্রিকেট কেন হয় না বলুন তো? দুটো দেশেই তো হতে পারে,’ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন পাক দরবার হোটেলের কর্মী রশিদ আফতাব। দুবাইয়ের বাজার এলাকায় জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট পাক দরবার। ভারতীয় শুনেই মজা করে বললেন, ‘পেশোয়ারি কড়াই মাটন খেয়ে দেখুন। আমাদের ভালোবেসে ফেলবেন।’ বিশাল-বিশাল গরম তন্দুরি রুটির সঙ্গে কড়াই মাটনের স্বাদ সত্যিই ভোলার নয়। অসম্ভব ক্রিকেটপ্রেমী রশিদভাই বলছিলেন, ‘আমি এখানে বহু বছর আছি। শারজায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখেছি। এখন আপনাদের দেশ তো শারজায় খেলতেই চায় না। আরও বেশি করে খেলা হোক। দেখবেন, অনেক সমস্যা মিটে গিয়েছে।’
এক হোটেলের নিরাপত্তাকর্মী বিপুল আপ্টে মহারাষ্ট্রের লোক। ডিউটি থাকায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে মাঠে যেতে পারেননি। কাজের ফাঁকে চোখ রেখেছিলেন মোবাইলে। আপ্টের কথাতেও সেই বাইশ গজে বন্ধুত্ব ফিরে পাওয়ার সুর, ‘আমি এখানে যে ফ্ল্যাটে থাকি, আমার সঙ্গে দু’জন পাকিস্তানিও থাকেন। আমাদের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই। একসঙ্গেই খাওয়া-দাওয়া করি। ঈদে, দিওয়ালিতে মিষ্টি খাওয়াই। আসলে, আমাদের আলোচনায় রাজনীতির কথা আসে না। এ দেশেও কোনও রাজনৈতিক দল নেই। তাই শান্তিতে আছি।’
দুবাই মলে রাত একটাতেও ভিড়ে ভিড়। পাশেই বুর্জ খলিফার টপে ওঠার জন্য টিকিটের লাইন। এক অল্পবয়স্ক বাঙালি দম্পতির সঙ্গে দেখা সেখানে। দু’জনেই কাজ করেন দুবাইতে। বলছিলেন, ‘দেশে থাকতেও আমরা ক্রিকেট দেখেছি মাঠে বসে। কিন্তু ওখানে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হলে ব্যাপারটা বড্ড গরম হয়ে ওঠে। এখানে সে সব পাবেন না। আর ম্যাচ নিয়ে যদি ঝামেলা করেন, তা হলে পুলিশ পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে একদম জেলে ভরে দেবে। আইন এখানে অসম্ভব কড়া।’
আইনের কথা পরে। আসলে, যুদ্ধের মানসিকতাই নেই কারও। রাজনীতির আলোচনায় বরং ইমরান খান এগিয়ে থাকলেন। আর এক ট্যাক্সি চালক ওয়াসিম কাদের বললেন, ‘ইমরান খান খুব ভালো চালিয়েছিলেন। উনি আবার ফিরবেন। আর ক্রিকেটেও উন্নতি করেছিলেন। রামিজ রাজাকে বোর্ডের দায়িত্বে আনা ইমরানের মাস্টার স্ট্রোক ছিল।’ থেমে জুড়লেন, ‘আমরা তো ভেবেছিলাম, ইমরান আসায় দুই দেশের মধ্যে আবার ক্রিকেট চালু হবে। আসলে, আপনাদের নরেন্দ্র মোদী বোধহয় চান না।’
ইমরানের আমলে বড় যুদ্ধে জড়ায়নি ভারত-পাক। এই বিষয়টাকে দারুণ গুরুত্ব দিচ্ছেন দুবাইয়ে থাকা পাকিস্তানের অধিবাসীরা। আসলে, যুদ্ধ মানেই তো ধ্বংস। বরং ধ্বংসের লড়াই হোক ব্যাটে-বলে, বাইশ গজে। ফিরুক শান্তি। এটাই প্রার্থনা সবার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।