বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঘুরছে পৃথিবী। পৃথিবী তার অক্ষে প্রায় ২৪ ঘণ্টায় একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। আর সূর্যের চারপাশে একটি পূর্ণ বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে প্রায় ৩৬৫ দিন লাগে পৃথিবীর। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন এই ঘূর্ণন এক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হলে কী পরিণতি হতে পারে? খবর ইন্ডিয়া টুডে, স্মিথসোনিয়া ম্যাগাজিন, অ্যাস্ট্রোনমি
পৃথিবী নিজ অক্ষে একটি পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে সময় নেয় ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট। এই ঘূর্ণন আমাদের পৃথিবীর প্রাণ ও পরিবেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পৃথিবীর ঘূর্ণন দিন-রাতের যে চক্র রয়েছে- তার ওপরে প্রভাব ফেলে থাকে। শুধু তাই নয়, আবহাওয়ার ধরন থেকে শুরু করে মহাসাগরের আচরণ পর্যন্ত পৃথিবীর ঘূর্ণনের ওপর নির্ভরশীল। নিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীর পৃষ্ঠ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার বেগে ঘুরছে। আর এই গতি যদি হঠাৎ থেমে যায়, তাহলে বিপর্যয় নেমে আসবে। ভূপৃষ্ঠে এখন যা কিছু স্থির রয়েছে, তা ধ্বংসাত্মক গতিতে পূর্ব দিকে উৎক্ষিপ্ত হবে।
বায়ুমণ্ডল স্বাভাবিকভাবেই গতিশীল। যদি পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে হাজার হাজার হারিকেনের শক্তিতে বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর ওপর ভেঙে পড়বে। উপড়ে যাবে গাছপালা, নদীর গতিপথ বদলে যাবে। আকস্মিকভাবে পৃথিবীর ঘূর্ণি থামলে ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ও দেখা যাবে। গতিবেগের পরিবর্তনের ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প ও সুনামি হতে পারে। গ্রহের ঘূর্ণনের কারণে মহাসাগরগুলোর অবস্থানগত পরিবর্তনও দেখা যাবে। ফলে সমুদ্রের বিশাল ঢেউ উপকূলরেখাকে প্লাবিত করবে।
পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হলে কী হবে, তা নিয়ে নিজেদের নানা ভাবনা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী নীল ডিগ্র্যাস টাইসন বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, ঘূর্ণন আকস্মিকভাবে থেমে গেলে পৃথিবীর সব মানুষের মৃত্যু হবে। মানুষ জানালা দিয়ে উড়ে যাবে। সেটা হবে পৃথিবীর জন্য খুবই খারাপ একটি দিন।
তিনি বলেন, পৃথিবীর ঘূর্ণন মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে চাঁদের কক্ষপথকে প্রভাবিত করে। কিন্তু হঠাৎ যদি তা থেমে যায় চাঁদ ও পৃথিবীর সূক্ষ্ম ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি চাঁদের চলার পথেও পরিবর্তন আসবে। আর তখন জোয়ার-ভাটা কীভাবে হবে, তা বলা কঠিন। যদিও চাঁদের কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া অবশ্য খুবই ধীর। চাঁদের টানে পৃথিবীর মাত্র এক সেকেন্ড ধীর গতি হতে প্রায় ৫০ হাজার বছর সময় লাগে। আকস্মিকভাবে এক সেকেন্ডের জন্য ঘূর্ণন বন্ধ হলে প্রাকৃতিক প্রতিবেশে সংকট দেখা যাবে।
অ্যাস্ট্রোনমি ডট কমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণন বন্ধ হলে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র বদলে যাবে। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও সেই প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই ধারণা করতে পারছেন না। চৌম্বকক্ষেত্র পৃথিবীর ভেতরের তরল ধাতব কেন্দ্রের কারণে তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা একে ডায়নামো বলেন। গ্রহের চারপাশে অদৃশ্য চুম্বকীয় ক্ষেত্রের একটি জাল বিস্তৃত রয়েছে। এক সেকেন্ডের জন্য ঘূর্ণন বন্ধ হলে চৌম্বক ক্ষেত্রটির প্রভাব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র মহাজাগতিক রশ্মি ও সূর্য থেকে আসা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ঝড় থেকে আমাদের রক্ষা করে। ঘূর্ণন থেমে গেলে মহাজাগতিক সংকট তৈরি হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।