জুমবাংলা ডেস্ক : বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাসের প্রথম দিনে ভোগান্তিমুক্তভাবে বেতন-ভাতা দিতে ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) চালু করেছে সরকার। তবে এ পদ্ধতিতে জটিলতার কারণে এখনো ডিসেম্বর মাসের বেতন তুলতে পারেননি প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। বেতন না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি বলছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত আরও ১২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী দুই-এক দিনের মধ্যে ডিসেম্বর-২০২৪ মাসের বেতন পেতে যাচ্ছেন। এ সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের নেতারা বলেন, ইএফটি জটিলতায় শিক্ষকদের ভোগান্তি বাড়ছে। ৩ লাখ ৮০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাননি। ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বরের বেতন না পেয়ে অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা সঠিক তথ্য দিলেও মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা সার্ভারে তুলতে গিয়ে ভুল করেছেন। এ কারণে ইএফটির তথ্যের সঙ্গে এমপিওর তথ্য, এনআইডির তথ্য এবং ব্যাংকের তথ্যে গড়মিল দেখা দিয়েছে। এছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে অনেকের এমপিও শিটের নামের সঙ্গে এনআইডির নামের ডট (.), হাইফেন (-), কমা (,) বা আক্ষরিক অমিল আছে অথবা ব্যাংক হিসাবের নাম আংশিক ভুল আছে কিংবা জন্ম তারিখ ভিন্ন। এসব কারণে একটু বিড়ম্বনা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন পাঠাতে। মাউশির গাফিলতির দায় কেন শিক্ষকরা নেবেন, এমন প্রশ্ন অনেক শিক্ষকের। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাধারণ প্রশাসন এবং অর্থ ও ক্রয় উইং থেকে জানা গেছে, ৫ম ধাপে ১২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বেতন পাবেন। তাদের ডিসেম্বর মাসের বেতন ব্যাংকে পাঠানো হবে। ১২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর জানুয়ারি মাসের বেতন কবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ঐ কর্মকর্তা আরও বলেন, ডিসেম্বর মাসের বেতন দেওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে তারা জানুয়ারি মাসের বেতন পেতে পারেন। আমরা যেভাবে চেষ্টা করছি। প্রসঙ্গত, গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরবর্তী সময়ে গত ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০-এর অধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। এখন ৫ম ধাপে আরও ১২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে ডিসেম্বর মাসের বেতন দেওয়া হবে।
আট মাস বেতন বন্ধ দেড় শতাধিক শিক্ষকের: সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশে ডাবল শিফটের স্কুলের নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রায় দেড় শ শিক্ষকের বেতন বন্ধ রয়েছে আট মাস ধরে। সম্প্রতি মাউশির এক সিদ্ধান্তের জেরে এ সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষকরা। ২০২১ সালের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, ডাবল শিফট এমপিও স্কুলে দ্বিতীয় শিফটের জন্য আলাদা এমপিও কোড চালুর বিধান রয়েছে। বিদ্যমান এমপিও নীতিমালা বাস্তবায়নে ডাবল শিফটের বিদ্যালয়গুলো আলাদা এমপিও কোড নিতে শুরু করেছে। তবে রাজধানীর নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো আলাদা এমপিও কোড নেয়নি। অন্যদিকে আলাদা এমপিও কোড ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ করে দিয়েছে।
নির্দেশনা থাকলেও বেতন পাচ্ছেন না ‘পদত্যাগ করানো’ শিক্ষকরা, মানবেতর জীবনযাপন :২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের স্কুল-কলেজের প্রধানসহ অনেক শিক্ষককেই জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই শিক্ষকদের বেতন অব্যাহত রাখতে বললেও নির্দেশনা উপেক্ষা করে বেতন দেওয়া হচ্ছে না তাদের। ফলে তাদের অনেককেই পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এমনকি যেসব শিক্ষকের বিষয় হাইকোর্ট থেকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদেরও অনেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানসহ অন্যান্য শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করার ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা বন্ধ করতে নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।