মো. জুয়েল তালুকদার : বরিশালের বাকেরগঞ্জে এতিমের ভুয়া তালিকা দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার এতিমখানাগুলোর নামে। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত একইভাবে বরাদ্দে অর্থ আত্মসাৎ করা হলেও নিয়মিত ওই ভুয়া তালিকায় কর্তৃপক্ষ বরাদ্দের সুপারিশ করে আসছে।
তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, স্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে তাদের বেশি কিছু করার থাকে না। ফলে এ অনিয়মের লাগাম টানা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলায় সমাজসেবার নিবন্ধনকৃত ১৯টি এতিমখানা আছে। সমাজসেবার নিয়মানুযায়ী নিয়মিত উপস্থিত এতিম শিশুদের মধ্যে অর্ধেক শিক্ষার্থী মাসে ২ হাজার করে টাকা পাবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমাজসেবার আওতায় ওই ১৯টি এতিমখানার ৩২০ জন এতিম শিশুর নামে দুই দফায় ৭৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে।
জানা যায়, সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার ছিটেফোঁটাও নেই বেশির ভাগ এতিমখানাগুলোতে। তারপরও বিভিন্ন তদবিরে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এতিমখানাগুলোতে।
অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বিভিন্ন এতিমখানার ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা এতিমের বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার নিজ স্বার্থ হাসিলে অর্থের বিনিময় এ নামসর্বস্ব এতিমখানাগুলোতে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। ফলে প্রকৃত এতিমরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিহারীপুর কারিমিয়া মোসলেম মিয়া কেরাতুল কোরআন মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানার পরিচালক জুয়েল মৃধা জানান, আমাদের এতিমখানায় ৬০ জন এতিম নিয়মিত থাকলেও সরকারি কোনো বরাদ্দ পাই না। নিজস্ব অর্থায়নে কোনোভাবে চালাতে হচ্ছে এতিমখানা। আর বিহারীপুর সালেহিয়া এতিমখানার নামে ৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। সেখানে ৫ জন এতিমও নেই।
একই অবস্থা পাদ্রীশিবপুর মোহাম্মাদিয়া এতিমখানার। সেখানে ৫৬ জন এতিম শিক্ষার্থী দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, করোনাভাইরাসের শুরু থেকেই এতিমখানাগুলোতে কোনো এতিম শিশু থাকছে না। তারপরও ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে ওই বরাদ্দের টাকা ম্যানেজিং কমিটি আত্মসাৎ করছে।
বাকেরগঞ্জের পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম সেন্টু জানান, পাদ্রীশিবপুর মোহাম্মাদিয়া এতিমখানায় ৬০ জন এতিমের নাম দেখাচ্ছে। ওই এতিমখানায় ৫ জন এতিমও নেই। ভুয়া তালিকা দিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করছে কর্তৃপক্ষ। মির্জাগঞ্জ-বাকেরগঞ্জ সড়কের পাশে একটি এতিমখানার নামে ভুয়া তালিকা দিয়ে কীভাবে এত টাকা হাতিয়ে নেয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সমাজসেবা কার্যালয়ের কী কোনো দায়িত্ব নেই। একইভাবে চলছে উপজেলার পারশিবপুর সাতঘর এতিমখানা, মোহাম্মাদিয়া হামিদিয়া এতিমখানা, চরাদি নেছারিয়া এতিমখানা, হাসিনা চৌধুরী এতিমখানা, বাকেরগঞ্জ মোসলেম উদ্দিন এতিমখানা, পাটকাঠি নেছারিয়া এতিমখানা, নেছার মহল দারুস ছুন্নত এতিমখানা, দারুল আমিন এতিমখানা ও রোকন উদ্দিন ছালেহিয়া এতিমখানা। সরেজমিন গিয়ে একটি এতিমখানাতেও কোনো এতিম শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে বাকেরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আবু তাহের জানান, করোনার পর থেকেই বেশির ভাগ এতিমখানায় এতিম শিক্ষার্থী নেই, তারপরও যেহেতু বরাদ্দ আসছে তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিতরণ করা হয়েছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাধবী রায় মোবাইল ফোনে বলেন, করোনার সময় সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য এতিম শিশুদের তার নিকটাত্মীয় অথবা সমাজের কেউ নিজ ইচ্ছায় দায়িত্ব নিলে তার কাছে রাখতে বলা হয়েছে।
করোনাকালীন বন্ধ এতিমখানায় বরাদ্দ ও ভুয়া এতিমের তালিকার বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, সমাজসেবার নিয়মানুযায়ী বরাদ্দের টাকা বিতরণ করা উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।