সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে বিআরটিএর নানা প্রকল্পে টাইগার আইটি কাজ করছে কোনো প্রকার টেন্ডার ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই। টাইগার আইটির পক্ষে ক্ষমতাধর প্রভাবশালীদের তদবিরের কারণে কৌশলে বিভিন্ন টেন্ডারে অংশ নেওয়া দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়েছে মূল্যায়ন কমিটি।
সরকারের কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তারিখ ও তার স্ত্রী এমনটাই অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার এবং গোপন বিনিয়োগের কথা উঠে এসেছে। ন্যাশনাল টেলিকমিনিকেশনস মনিটরিং সেন্টারকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন তিনি। অথচ ফোনে আড়ি পথের অভিযোগ রয়েছে এ মনিটরিং সেন্টারের বিরুদ্ধে।
গণঅভ্যুত্থানের পর তারিখ ও তার কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির তত্ত্ব বেরিয়ে আসছে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তারিক সিদ্দিক। সে সুযোগে তিনি এবং তার স্ত্রী সব জায়গায় প্রভাব খাটি অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতেন। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ বন্টন করার অবৈধ দায়িত্ব পালন করতেন তার স্ত্রী শাহনাজ।
আওয়ামী লীগ যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করল তখন এ পরিবার নানা দিক দিয়ে সুবিধ অর্জন করে। সরকারের বিভিন্ন টেন্ডার নিজেদের অনুগত প্রতিষ্ঠানকে দিতেন তারিখ এবং তার স্ত্রী। এর ফলে তারা মোটা অংকের কমিশনে পেতেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত ফাঁসে এনটিএমসির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের সহযোগী ছিলেন টাইগার আইটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান। সরকার পরিবর্তনের পর এনটিএমসির শীর্ষ কর্মকর্তারা আইনের আওতায় এলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বিতর্কিত উদ্যোগের কোর টেকনিক্যাল সেবা দেওয়া টাইগার আইটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান।
তারিক-শাহনাজ দম্পতির আশীর্বাদে টাইগার আইটি, আইবিসিএস-প্রাইমেক্স এবং কম্পিউটার সার্ভিস লিমিটেড (সিএসএল) যুক্ত হয় এনটিএমসির আড়ি পাতা প্রকল্পের কারিগরি উন্নয়নে। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ যন্ত্রপাতি আমদানিতেও কমিশন নিতেন তারা।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, তারিক সিদ্দিকের প্রতাপে বছরের পর বছর বিআরটিএ নিয়ন্ত্রণ করেন টাইগার আইটির চেয়্যারম্যান জিয়াউর রহমান। নির্বাচন কমিশনের স্মার্টকার্ড মুদ্রণ সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংক টাইগার আইটিকে সাড়ে ৯ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করে। আর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে কালো তালিকাভুক্ত করে সাড়ে ছয় বছরের জন্য।
কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় টাইগার আইটি ২০২৭ সাল ও জিয়াউর রহমান ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কোনো টেন্ডারে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের প্রভাবে ১৩ বছর ধরে বিআরটিএ নিয়ন্ত্রণ করেছে টাইগার আইটি। এ সময়ে প্রভাব খাটিয়ে নতুন করে টেন্ডারের আয়োজনও বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্ব ব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত করেছিল টাইগার আইটিকে। এরপর ২০১৯ সালে বিআরটিএ এর সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল হল। তারপরেও সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রকল্পে কাজ পায় তারা। চুক্তি বাতিলের পরেও অবিশ্বাস্যভাবে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয় 2019-20 অর্থবছরে।
স্মার্ট কার্ডের সার্ভার এবং ডাটাবেজ হস্তান্তরে অনেক ঝামেলা করেছিল টাইগার আইটি কোম্পানি। নির্বাচন কমিশন, পাসপোর্ট, ওয়াসার নানা প্রকল্পের কাজ নিজের পছন্দের কোম্পানিকে দিতেন তারিক। এভাবে প্রকল্প থেকে অনেক অর্থ ইনকাম করতেন তিনি।
এক ব্যবসায় গ্রুপের মাধ্যমে বিদেশে হাজার কোটি টাকা প্রচার করেছেন তারিক দম্পতি। তাছাড়া তারিকের কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের সেকেন্ড হোম রয়েছে এবং সেখানেই অর্থ পাচার করা হয়েছে। তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার স্বভাব হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।