জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে অশোভন মন্তব্য করায় কর অঞ্চল-১০ এর সার্কেল-২০০ এ কর্মরত নিরাপত্তা প্রহরী সেলিম মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) কর অঞ্চল-১০ থেকে এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন কর কমিশনার শাহ আলী।
চিঠিতে বলা হয়,সেলিম মিয়ার নামে নিবন্ধন করা মুঠোফোন নম্বরের বিপরীতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান সম্পর্কে শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্য বা আচরণ করেন। যেহেতু সেলিম মিয়া স্বয়ং ওই মুঠোফোন নম্বরটি তার নিজ নামে নিবন্ধন করা বলে স্বীকার করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী সেলিম মিয়াকে সরকারি চাকরি হইতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি খোরপোশ প্রাপ্য হবেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার আরও ১৪ জন শুল্ক, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন-
মুসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার
ঢাকার কর অঞ্চল-৮ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা
ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক সিফাত ই মরিয়ম
এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব শাহাদাত জামিল
কর অঞ্চল-২ এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন
কর অঞ্চল-১৫ এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ
কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার মোরশেদ উদ্দীন খান
নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা
কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান
খুলনা কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার শিহাবুল ইসলাম
রংপুর কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার নুশরাত জাহান
কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান
খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর
ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি যে আন্দোলন হয়েছে, বরখাস্ত হওয়া এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। কেউ কেউ নেতৃত্বও দিয়েছেন। তারা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। সংগঠনটির সভাপতি হলেন বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা।
প্রসঙ্গত, গত মাসে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ২৮ ও ২৯ জুন তারা সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। তবে আন্দোলন প্রত্যাহারের পর থেকে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে সরকার।
এ পর্যন্ত আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে একজন কমিশনারসহ তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এনবিআরের সদস্যসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তাদের অধিকাংশই চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে এই দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এরপর থেকেই এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে দেড় মাসের বেশি সময় আন্দোলন চালান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।