জুমবাংলা ডেস্ক : গত বছরের তুলনায় এবার ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৫ দিনে ৪-১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষ। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবার দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২০ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ।
ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ১ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার এ চিত্র তুলে ধরেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংগঠনটির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনটি বলেছে, ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন দুই চাকার বাহন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলেছে, গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় ঈদযাত্রায় ২৪০টি দুর্ঘটনায় ২৮৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ৬৩, শিশু ৭৪। ১৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৬৮ পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪১ জন।
এ সময় তিনটি নৌ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭ জন। ১৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগের ধারাবাহিকতা নেই উল্লেখ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ‘সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জীবনে নিত্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগের ধারাবাহিকতা নেই। সবকিছু চলছে দায়সারাভাবে। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে সড়ক পরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনার কারণে। এ অবস্থার উন্নয়নে টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।’
গত বছর ঈদযাত্রায় প্রতিদিন গড়ে ১৭ দশমিক ১৪টি দুর্ঘটনায় ২০ দশমিক ৩৫ জন নিহত হয়েছিল। এ বছর ঈদযাত্রায় প্রতিদিন গড়ে ২৩ দশমিক ৮৬টি দুর্ঘটনায় ২৪ দশমিক ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ঈদ উদযাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচটি পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এছাড়া স্কুল, মাদরাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন ৭৪ জন।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১২৯টি (৩৬ দশমিক ০৩ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৩টি (৩৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৪৮টি (১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮টি (১০ দশমিক ৬১ শতাংশ) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাসমূহের ৯৩টি (২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩৮টি (৩৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭২টি (২০ দশমিক ১১ শতাংশ),পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া ৪১টি (১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৪টি (৩ দশমিক ৯১ শতাংশ) অন্য বিভিন্ন কারণে ঘটেছে।
মোট দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে ২৯ দশমিক ০৫ শতাংশ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে ৩০ দশমিক ৭৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ দুর্ঘটনায় ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ দুর্ঘটনায় ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ উল্লেখ করে বলা হয়, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজির মতো ঘটনা।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনা কমাতে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক-যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা সহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবন্ধীদের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির তাগিদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।